তাদের লাশ দরকার ছিল, কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৫৮ পিএম, ১৭ জুলাই ২০২৪
ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী ও বহিরাগতরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে- এমন মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, ‘তাদের লাশ দরকার ছিল। সেই লাশ পাওয়ার জন্যই কালকের (মঙ্গলবার) এ অবস্থা। তারা অস্ত্র নিয়ে মিছিলে আক্রমণ করেছে।’
বুধবার (১৭ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধা শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ।
কোটাবিরোধী আন্দোলনের আড়ালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূলে আঘাত প্রতিহত করার লক্ষ্যে এবং মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদে ঢাকায় সমাবেশের ডাক দেওয়া হয় এই সংবাদ সম্মেলন থেকে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে এ সমাবেশে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যেদিন ফখরুল সাহেব বললেন আমরা যা করতে পারিনি ছাত্ররা তা করে দেখাচ্ছে। অর্থাৎ ওনারা আন্দোলন করে সফল হননি, তারা ইন্ধন দিলেন, আরও অনেক উসকানিমূলক কথা বললেন। তারপর কালকের চিত্র দেখেন কী অবস্থা। তারা চেয়েছিল লাশ। তিনদিন আগেই আমেরিকার সেই প্রতিনিধি যিনি ব্রিফ করেন, তিনি বলেছেন দুইজন ছাত্রা মারা গেছেন। যখন কোনো আহত হয়নি তখন তিনি বললেন হত্যা, মৃত্যু হয়ে গেছে। অর্থাৎ তাদের এই লাশ দরকার ছিল। সেই লাশ পাওয়ার জন্যই কালকের এই অবস্থা। তারা যেভাবে অস্ত্র নিয়ে, আপনারা লক্ষ্য করেছেন অস্ত্র নিয়ে তারা কীভাবে আক্রমণ করেছে মিছিলে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কি কোথাও কোনো প্রোগ্রাম করেছে? আজ শাপলা চত্বরে ছাত্রশিবির এবং জামায়াত রাস্তায় নেমেছে। বিএনপি রাস্তায় নেমেছে। মফস্বল এলাকায় সর্বত্র ওদেরকে রাস্তায় নামানো হয়েছে। ওরা রাজনৈতিকভাবে আন্দোলনটাকে নিয়েছে। আমরা কিন্তু কখনোই রাজনৈতিকভাবে নেইনি। এটা ছাত্রদের দাবি, তারা (দাবি) করতেই পারে। কিন্তু এখন আর ওই সুতা নাটাই কোটাবিরোধী বা সংস্কার আন্দোলন যারা করেন তাদের হাতে নেই। তাদের হাতে চলে গেছে যারা স্বাধীনতাবিরোধী। ১৯৭১ সালে যারা প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, তাদের হাতে গিয়েছে। কাজেই আর বসে থাকার সময় নেই। আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তার নির্দেশে জীবন বাজি রেখে এই দেশকে স্বাধীন করে দিয়েছি, আমাদের জীবদ্দশায় এত বড় ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা বলবে এই দেশ নাকি রাজাকারদের, সেটা মেনে নেওয়া যায় না।’
এ সময় আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আগামীকাল বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জনসমাবেশ করে আমরা বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করবো।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আরও বলেন, ‘সাংবাদিক সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের পরে তিনি যে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন। সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেছেন- একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আর একজন রাজাকারের সন্তান দুইজনই যদি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় আপনি কাকে চাকরি দেবেন? তার উত্তরে বলেছেন যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে জীবন বাজি রেখে এই দেশ স্বাধীন করেছে, সেই মুক্তিযোদ্ধাকে আমি চাকরি না দিয়ে কি আমি রাজাকারের বাচ্চাকে দেবো। এর চেয়ে সত্য কথা আর কী? এই সত্য কথা তিনি বলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘সেটাকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে পত্রপত্রিকার মাধ্যমে ওনারা বলছেন যে উনি (প্রধানমন্ত্রী) সবাইকে রাজাকারের বাচ্চা বলেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বলেছেন। এ কথা প্রধানমন্ত্রী বলেননি। বলেছেন ওই দুজনের মধ্যে রাজাকার এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের মধ্যে কাকে বেছে নেবেন, সেক্ষেত্রে এ কথা বলেছেন।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই মিথ্যাচার করে তারা বলেছে আমি রাজাকার, তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার। আমরা বলতাম তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি, তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা, মেঘনা, যমুনা। সেটাকে বিকৃত করে কত দুঃসাহস, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশে বলে- তুমি কে আমি কে রাজাকার, রাজাকার। অর্থাৎ তাদের আসল চরিত্র এটা তারা নিজেরাই প্রকাশ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘যতদিন কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছিলেন, প্রধামন্ত্রী বলেছেন, আমরা বলেছি, এ দেশের নাগরিক হিসেবে একজন একটা দাবি করতেই পারে। সেটা কর্তৃপক্ষের কাছে করতেই পারে। আমরা, আপনারাও অনেক সময় অনেক দাবি সরকারের কাছে করি। দাবি করা তো অন্যায় না, করতেই পারে এবং তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করতে পারে। কেউ বাধা দেয়নি। কোটাবিরোধী ছাত্ররা, আমাদের সন্তানরাই আন্দোলন করেছে, আমরা কেউ কোনো বাধা দেইনি।’
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘এর পরই তুমি কে আমি কে রাজাকার বলে হল তছনছ করলো, সবকিছু ভাঙচুর করলো, হলের গেট ভেঙে দিলো। আপনারা দেখেছেন। তারপর আপনারা লক্ষ্য করেছেন ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের ছেলে-মেয়েরা ও বহিরাগতরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ঢুকে কী তাণ্ডব চালিয়েছে। চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের সর্বত্র।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বলেছেন- আমাদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে কোনো কথা নেই। এটা ওনারা করতে পারেন, সরকার বিবেচনা করবে। তবে জনগণের জানমালের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, জীবনযাত্রা যেন ব্যাহত না হয় আমরা সে ব্যাপারে আবেদন করি এবং নিশ্চিত করবো। তারপরেই এ তাণ্ডব সৃষ্টি করে। তারাই প্রথমে লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ করেছে। কারণ আমাদের ছেলেরা তো সংঘবদ্ধ ছিল না, ওরা বরং এতদিন ধরে আন্দোলন করে সংঘবদ্ধ ছিল, প্রস্তুত ছিল। তারা আক্রমণ করেছে এবং স্বাভাবিক কারণেই আত্মরক্ষার জন্য যার যার ব্যবস্থা সে করে। ছাত্রলীগ বা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তারা নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য চেষ্টা করেছে। গতকাল আমরা তার চূড়ান্ত রূপ দেখেছি।’
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক শাজাহান খান।
এমএএস/কেএসআর/জিকেএস