শাজাহান খান

শিক্ষার্থীদের কাঁধে ভর করে সক্রিয় কুচক্রী মহল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:২৬ পিএম, ১৭ জুলাই ২০২৪

শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারী ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের ইন্ধনে ছয়জন নিহত হয়েছেন দাবি করে মুক্তিযোদ্ধা শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ’র আহ্বায়ক শাজাহান খান বলেছেন, তারা (ছাত্রদল-ছাত্রশিবির) শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সহিংস আন্দোলনে পরিণত করেছে। আমরা মনে করি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাঁধে ভর করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কুচক্রী মহল সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

বুধবার (১৭ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন শাজাহান খান।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্য কোটা বাতিল, পরবর্তীকালে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকদিন ধরে নানা কর্মসূচি পালন করছে। এ আন্দোলন করতে গিয়ে তারা রাস্তা অবরোধ, যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি, তথাকথিত ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে কর্মসূচি পালন করে জনগণকে জিম্মি করাসহ জনদুর্ভোগ বাড়াচ্ছে। সারাদেশে জনজীবন বিপন্ন করে তুলেছে।

শাহাজান খান বলেন, আন্দোলনকারীরা স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উচ্চারিত ‘তুমি কে আমি কে- বাঙালি বাঙালি’ স্লোগানকে বিকৃত করে ‘তুমি কে আমি কে- রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামকে কটাক্ষ করেছে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালে কোটা বাতিলের দাবিতে পারিচালিত আন্দোলনের সময় তারা প্ল্যাকার্ড করেছিল, ‘আমি রাজাকার, আমার পিতা শেখ মুজিব’। তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা বিস্মিত হই এই ভেবে যে, ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও দুই লাখের বেশি মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে যারা নিজেদের ‘রাজাকার’ বলতে গৌরব বোধ করে তারা কি বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। নাকি সরকারকে বিপদে ফেলাতে একটি বিশেষ মহলের নীলনকশা বাস্তাবায়নে তারা কাজ করছে।

সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের এ আদেশের পর হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের কোনো কার্যকারিতা বর্তমানে নেই। এরপরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলমান থাকার যৌক্তিকতা নেই। এ আন্দোলনের ওপর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ভর করেছে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা কার বিপক্ষে আন্দোলন করছে? সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশ তো তাদের পক্ষেই আছে। এরপরে আন্দোলন চলমান থাকা প্রমাণ করে, রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কোনো গোষ্ঠী বা মহল এ আন্দোলনকে উসকানি দিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলন চলমান রাখায় সাধারণ জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। জনগণ এ আন্দোলনের কাছে জিম্মি হয়ে তরুণ শিক্ষার্থীদের ওপর আস্থাহীন হয়ে পড়ছে।

তিনি আরও বলেন, একটি চিহ্নিত রাজনৈতিক মহল শিক্ষার্থী ও জনগণের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে ফায়দা লোটার অপচেষ্টা করছে। আমরা বিশ্বাস করি না, কোমলমতি সব শিক্ষার্থী দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করতে চায়। যারা শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তারাই আদালতের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে। যা অবৈধ ও বেআইনি।

শাজাহান খান বলেন, গত দুদিন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নাশকতা, নৈরাজ্য ও অরাজকতা দেখেছি। তারা বিভিন্ন ছাত্রাবাসে হামলা করে অনেক কক্ষ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। ছাত্র-শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করেছে। নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারী ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের ইন্ধনে ৬ জন নিহত হয়েছে। তারা যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সহিংস আন্দোলনে পরিণত করেছে।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি কোমলমতি ছাত্রদের কাঁধে ভর দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কুচক্রী মহল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে অগ্রসরমান বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা ব্যাহত করাসহ সার্বিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

‘দেশবাসী জানে, স্বাধীনতাবিরোধীদের নানা অপকৌশল অমানবিক কার্যক্রমকে আমরা শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধারা জীবন দিয়ে প্রতিহত করেছি। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে যারা পেট্রোল বোমায় পুড়িয়ে, পিটিয়ে, কুপিয়ে ৯২ জন ড্রাইভার হেলপার, ১৭ জন পুলিশ, ৩ জন বিজিবি জোয়ান, ২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ২ জন ব্যাংক কর্মচারী, বিমা কর্মচারী, রিকশাচালক, গার্মেন্ট শ্রমিক, হকার, ফল ব্যবসায়ীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তারা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।’

‘আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো অপমান বাঙালি জাতি সহ্য করবে না। বাঙালি জাতি বাংলাদেশে স্বাধীনতার পরাজিত অপশক্তির কোনো প্রকার অপতৎপরতা ও আস্ফালন মেনে নেবে না। বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একজন মানুষও বেঁচে থাকতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে স্বাধীনতার পরাজিত অপশক্তির অপতৎপরতা প্রতিরোধ করবে। আমরা জাতির পিতার আজীবন লালিত সোনার বাংলার স্বপ্ন এবং প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করবোই।’

তিনি বলেন, আমরা আমাদের প্রিয় কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আস্থা রেখে ঘরে ফেরার আহ্বান জানাচ্ছি। তাদের মনে রাখতে হবে একটি বিশেষ মহল এ আন্দোলনের ওপর ভর করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। তাদের অসৎ উদ্দেশ্য যেন সফল না হয়।

তিনি আরও বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনের আড়ালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূলে আঘাত প্রতিহত করা এবং হত্যা, নাশকতা, অরাজকতা, অগ্নিসংযোগ প্রতিহত করা এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষের সকল শ্রেণিপেশার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে তাদের প্রতিহত করার লক্ষ্যে আগামী ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৩টায় মুক্তিযোদ্ধা শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী জনগণের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি জানান, সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ কম মোজাম্মেল হক, অতিথি হিসেবে থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং অন্য মুক্তিযোদ্ধা, শ্রমিক কর্মচারী নেতারা।

এমএএস/এমকেআর/জিকেএস

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।