নেতাকর্মীদের পেনশন স্কিমে যুক্ত হওয়ার আহ্বান শেখ হাসিনার
দলের নেতাকর্মীদের পেনশন স্কিমে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের রাজনীতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ঢোকা দরকার। তাহলে অন্তত জীবনের একটা নিশ্চিয়তা পাওয়া যাবে। বৃদ্ধ বয়সে কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। ছেলে-মেয়ের ঘাড়ে বোঝা হবে না, নিজেরটা নিজে করে খেতে পারবে।
রোববার (৭ জুলাই) গণভবনে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
নেতাকর্মীদের শেখ হাসিনা বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম, এটা আমরা সবার জন্য দিয়েছি। এটা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল, ২০০৮ সালের নির্বাচনের ইশতেহারে এটা ছিল। শুধু সরকারি চাকরিজীবীরা পেনশন পায়, বাকিরা বঞ্চিত থাকে। কেউ যাতে বঞ্চিত না থাকে সে জন্য বিভিন্ন স্তরভেদে সর্বজনীন পেনশনের ব্যবস্থা করা আছে।
উপস্থিত যুব মহিলা লীগ নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুব মহিলা লীগের মেয়েরা প্রত্যেকে কিন্তু এই সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হতে পারো নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য। যখন মানুষ বয়স্ক হয়ে যাবে, কর্মক্ষম থাকবে না, তখন একটা নিশ্চিত অর্থপ্রাপ্তির সুযোগ আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জীবন-জীবিকা চালাবার সুযোগ আছে। সেটা একেবারে নিম্মস্তরের তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি। যারা কিছুই করতে পারে না, খুব অল্প টাকা কামাই করে। তারা যদি পাঁচশ টাকা রাখে তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে আরও পাঁচশ টাকা দিয়ে তারাও যেন ভালোভাবে পেনশন পায় এবং আজীবন পাবে।
এসময় পড়াশোনা নষ্ট করে ছেলেমেয়েদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোটা বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে বহাল হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পড়াশোনা নষ্ট করে ছেলেমেয়েরা আন্দোলন করছে। হাইকোর্টের রায় এটার বিরুদ্ধে এভাবে আন্দোলন করা, এটাতো সাবজুডিস, কারণ আমরা সরকারে থেকে কিন্তু এভাবে কথা বলতে পারি না। হাইকোর্ট রায় দিলে সেখানে (সমাধানও) হাইকোর্ট থেকে আবার আসতে হবে। কিন্তু আজকে আন্দোলনের নামে যেটা করা হচ্ছে, পড়াশোনার সময় নষ্ট করা। এটার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।
আরও পড়ুন:
- পড়াশোনা নষ্ট করে কোটাবিরোধী আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই
- সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির ফলে টেকসই কৃষি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হয়েছে
- কোটা বাতিলের দাবিতে রোববার ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি
তিনি আরও বলেন, হাইকোর্টের রায় আমরা সব সময় মেনে নেই। কিন্তু আমরা দেখলাম এখন কোটাবিরোধী আন্দোলন আবার গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা নষ্ট করে এখন কোটাবিরোধী আন্দোলন করছে। সেখানে মেয়েরাও আন্দোলন করছে। এখানে আমার একটা প্রশ্ন, যারা এর আগে কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছিল, তারা কতজন পাবলিক সার্ভিস কমিশনে পরীক্ষা দিয়েছিল, আর কতজন পাস করেছিল সেটা বের করা দরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, কোটা কিন্তু একবার বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু ফলাফলটা কী? পাবলিক সার্ভিস কমিশনের হিসাব যদি দেখা যায়, তখন দেখা যাবে যে, আগে কোটা থাকতে মেয়েরা যে পরিমাণ সুযোগ পেত সে পরিমাণ সুযোগ কিন্তু এই কয় বছরে আর পায়নি। এটা হলো বাস্তবতা, এমনকি অনেক জেলা, প্রত্যন্ত অঞ্চল সেসব অঞ্চলের মানুষগুলো কিন্ত বঞ্চিত থেকে গেছে। তারাও চাকরি পাচ্ছে না। এ রকম বঞ্চিত হওয়ার কারণেই কেউ মামলা করে, হাইকোর্ট একটা রায় দেন।
নারীর ক্ষমতায় ও অগ্রগতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামে যুব মহিলা লীগ সব সময় ভূমিকা পালন করেছে। দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করেছে সংগঠনটি।
বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় যেভাবে নারী নেত্রীদের ওপর নিযার্তন করেছে তা নিন্দারও যোগ্য নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, দলটি ভোট চুরি করে মাত্র দেড় মাস টিকেছে। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ২০০১ সালে ক্ষমতায় গিয়েছিল বিএনপি। ভোট চুরির অপবাদে দুইবার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে তারা। বিএনপির নির্যাতনের চিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। তারা সমাজের অভিশপ্ত বোঝা। তাদের অত্যাচার-নির্যাতন যেন আবার ফিরে না আসে, সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে যুব মহিলা লীগের ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। যুব মহিলা লীগের সভাপতি আলেয়া সরওয়ার ডেইজির সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলিসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
এসইউজে/এসএনআর/এমএস