ভারতের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক

বিএনপির নেতারা অশিক্ষিতের মতো কথা বলছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৬:১৬ পিএম, ২৯ জুন ২০২৪
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ

চুক্তি আর সমঝোতা স্মারকের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে না পারা বিএনপির নেতারা অশিক্ষিতের মতো কথা বলছেন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে কিছু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, আর কিছু সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়েছে, কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। অথচ বিএনপি নেতারা গলা ফাটিয়ে বলে যাচ্ছেন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল নাকি ঢাকা কলেজে পড়াতেন, বিএনপির আরও কিছু নেতাসহ ড. মঈন খানও শিক্ষিত। চুক্তি আর সমঝোতা স্মারকের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে না পারা বিএনপির শিক্ষিত নেতারা কেন অশিক্ষিতের মতো কথা বলছেন সেটি আমার বোধগম্য নয়।

শনিবার (২৯ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আওয়ামী লীগের গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭৫ বছর উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ এই সেমিনারের আয়োজন করে।

আরও পড়ুন

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সব সমঝোতা স্মারক দেশের স্বার্থেই করা হয়েছে। আমরা কানেক্টিভিটি বাড়াতে চাচ্ছি, কানেক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য এরই মধ্যে ঢাকা-কলকাতা, খুলনা-কলকাতা, দিনাজপুর-শিলিগুড়ি ট্রেন চালু হয়েছে, আখাউড়া দিয়ে ট্রেন চালু হওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা ভারতের বুকের ওপর দিয়ে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি স্বাক্ষর করেছি, ভুটানের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা চলছে। সেই কানেক্টিভিটি আমরা আরও বাড়াতে চাই এবং এর সঙ্গে নেপাল ও ভুটানকেও যুক্ত করতে চাই। এই অঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বার্থেই আমরা কানেক্টিভিটি বাড়াতে চাই। কিন্তু বিএনপি সেটি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আসলে যাদের নেত্রী বলেছিলেন সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে বাংলাদেশ যুক্ত হলে দেশের সব সিক্রেসি আউট হয়ে যাবে, তাদের কানেক্টিভিটির মর্ম বোঝার কথা নয়, যেমন নেত্রী তেমন তার সভাসদ, সেজন্যই তারা আবল-তাবল কথা বলছেন, আর বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। কোনো কোনো পিরও দেখছি লাফাচ্ছেন। গাজায় যেভাবে মানুষ হত্যা করা হয়েছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, প্রায় ৩৮ হাজার নিরীহ মানুষ হত্যা করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মিছিল নিয়ে লাফাতে দেখি না। বিএনপি আর জামায়াত এ নিয়ে একটি শব্দও বলেনি।

আওয়ামী লীগের হাত দিয়েই বাংলাদেশের সব অর্জন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের হাত দিয়েই বাংলাদেশের সব অর্জন অর্জিত। ৭৫ বছরের আওয়ামী লীগের পথচলা সবসময় কণ্টকাকীর্ণ ছিল। আওয়ামী লীগ সবসময় অগণতান্ত্রিক ও অপশক্তির চক্ষুশূল ছিল। পাকিস্তান আমলে আয়ুব খান মার্শাল ল’ দেওয়ার পর বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। ৭০’এর নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন।

ড. হাছান বলেন, স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমান ও এরশাদ দুই সামরিক স্বৈরশাসকই আওয়ামী লীগের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে। ২০০৭ সালে ভিন্ন খোলসে প্রকৃতপক্ষে সামরিক শাসন চলেছে। সমাজে বুদ্ধিজীবী পরিচয় দেওয়া কিছু ব্যক্তিকে ভাড়া করে সামনে দিয়ে প্রকৃতপক্ষে সামরিক শাসনই চালু করেছিল তখন।

আরও পড়ুন

তিনি বলেন, সেসময় দেশের ক্ষমতায় ছিল বিএনপি, দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতা দেখিয়েছিল বিএনপি। দুর্নীতি আর দুঃশাসনের অভিযোগ তুলে যেই শাসক এসেছিল, তাদের তো প্রথমেই খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করার কথা। কিন্তু তারা সেটি না করে প্রথমে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করেছে। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতারা সবসময় অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী শক্তির চক্ষুশূল ছিল।

শেখ হাসিনা আজ বিশ্বনেতা

শেখ হাসিনা আজ বিশ্বনেতায় রূপান্তর হয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশের বিভিন্ন সম্মেলনে গিয়ে দেখতে পাই, তিনিই হচ্ছেন সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু। কারণ একটা জনবহুল সমস্যা সঙ্কুল, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে জর্জরিত এবং ঝড়-বন্যা-জলোচ্ছ্বাসের দেশকে তিনি যেভাবে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করেছেন, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন এবং সব সূচকে আশপাশের দেশগুলো পেছনে ফেলেছেন, অর্থনৈতিক সূচক ও মাথাপিছু জিডিপি’র ক্ষেত্রে ভারতকেও আমরা পেছনে ফেলেছি। সেই কারণে তিনি আজ পৃথিবীময় সম্মানের আসনে আসিন হচ্ছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ ছিল। সেখান থেকে এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে। খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে। ধান উৎপাদনে তৃতীয়, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে এখন দ্বিতীয়, সবজি উৎপাদনে চতুর্থ, আলু উৎপাদনে সপ্তম, ১৪টি কৃষিপণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। অথচ আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর ৯২তম রাষ্ট্র। মাথাপিচু কৃষিজমির পরিমাণ সর্বনিম্ন। মানুষের ঘনত্ব পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। এগুলো সম্ভবপর হয়েছে একমাত্র শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্বের কারণে।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যাপক মো. মঈনুদ্দীন, আবুল কালাম আজাদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক দেবাশীষ পালিত, সদস্য ইফতেখার হোসেন বাবুল, বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার, সরোয়ার শামীম, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দা রিফাত আক্তার নিশু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন রিয়াজ, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা রত্না, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম প্রমুখ।

এমডিআইএইচ/ইএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।