একদিকে লুটপাট চলছে, অন্যদিকে মানুষের ঘাড়ে করের বোঝা: ফখরুল
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৪৫ পিএম, ০৭ জুন ২০২৪
আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এখানে একদিকে শুধু লুটপাটের সুযোগ, অন্যদিকে মানুষের ঘাড়ে করের বোঝা চাপানো হয়েছে। যন্ত্রপাতি আমদানি বাধাগ্রস্ত হলে তো কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান হবে না। সে জন্যই কিন্তু ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। এ যেন ভয়াবহ অবস্থা। সুতরাং এই দানব সরকারকে সরাতে না পারলে আমাদের মুক্তি নেই।’
শুক্রবার (৭ জুন) বিকেলে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার গৃহীত কর্মসূচি ও নীতি: বাংলাদেশের কৃষিবিপ্লব ও পল্লি উন্নয়নের মূলভিত্তি’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন সোনালি দল।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার মিথ্যার ওপর টিকে আছে এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাদের (সরকার) যত পরিসংখ্যান সবই মিথ্যা ও বানানো। এ থেকে রক্ষা পেতে শহীদ জিয়াকে স্মরণ করে যার যার অবস্থান থেকে সবাইকে জেগে উঠতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে জাগিয়ে তুলতে হবে। এটি যত কঠিন কাজই হোক না কেন।’
জিয়াউর রহমানের অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিকূল সময়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন জিয়াউর রহমান। ১৯৭১ সালে যখন গোটা দেশের মানুষ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়েছিল যে তারা স্বাধীনতা সংগ্রামে কী করবে? কোনো নির্দেশনা নেই। তখন ২৬ মার্চ (রেডিও’র ঘোষণা) অপরিচিত একজন মেজর তার কয়েকটি শব্দের মাধ্যমে গোটা জাতিকে উজ্জীবিত করেছিলেন। পরবর্তীতে জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আজ আওয়ামী লীগ এ বিষয়টি মানতে পারে না। তবে কেউ স্বীকার করুক না করুক এটা ধ্রুব সত্য যে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জিয়াউর রহমান আরেক সময় (১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর) জাতির দুঃসময়ে রাষ্ট্রের পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তাকে আমরা দেশের একজন যোগ্য, দক্ষ নেতা হিসেবে পেয়েছিলাম। স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারের দুর্নীতি, অন্যায় ও অব্যবস্থাপনার কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। পক্ষান্তরে জিয়াউর রহমান কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। তিনি কৃষিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাত সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যান।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমান দেশের সমৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বিদেশে কর্মী পাঠানো, তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠা, পিছিয়ে পড়া এলাকার জন্য ডেভেলপমেন্ট বোর্ড গঠন করেছিলেন। তিনি মাঠে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কৃষির সেচের জন্য খাল খনন করেছিলেন। গ্রামে, উপজেলায় তিনি রাত্রিযাপন করতেন। জেলাতে তিনি কেবিনেট মিটিং করেছিলেন। সংশ্লিষ্ট জেলার উন্নয়নের জন্য নতুন পরিকল্পনা নিতেন। এক কথায় গোটা জাতিকে তিনি এক নতুন স্বপ্ন দেখিয়ে মাঠ পর্যায়ে উন্নয়ন করেছিলেন। ইরান-ইরাক যুদ্ধ নিরসনে গঠিত কুদস কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। সেজন্যই কিন্তু এই মানুষটিকে কেউ ভুলতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে কেউ খাটো করতে পারবে না। তাকে খাটো করতে গেলে বাংলাদেশকে খাটো করা হবে। তার অবদানকে যারা অস্বীকার করে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গণতন্ত্রের ন্যূনতম অবস্থান থাকলে যেটি হয় সেটি ভারতের জনগণ দেখিয়ে দিয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর একক বিজয় ঠেকিয়ে দিয়েছে। এটিই হলো প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রের কারণে। আজ আমাদের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে। এজন্য আমাদের লড়াইয়ের বিকল্প নেই। আজ লড়াই করতে গিয়েই কিন্তু আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে।’
অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘বাংলাদেশের গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজির কারণে। এসবই করছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। কৃষির উন্নয়ন, মানুষের জীবন-মানের উন্নয়ন করতে হলে এই সরকারকে যে কোনোভাবে হোক ক্ষমতাচ্যুত করে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এখন বাংলাদেশের প্রথম সমস্যা হলো দেশের সব প্রতিষ্ঠান রাজনীতিকরণ করেছে। সরকার সব প্রতিষ্ঠান তাদের কব্জায় নিয়েছে। সুতরাং এই রাজনীতির পরিবর্তন না হলে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও হবে না, দুর্নীতিও বন্ধ হবে না।’
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন সোনালি দলের সভাপতি গোলাম হাফিজ কেনেডি। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের পরিচালনায় বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী প্রমুখ।
কেএইচ/কেএসআর/এএসএম