সংকটেও গরিবের স্বার্থ রক্ষা-উন্নয়ন অব্যাহত রাখার বাজেট

সালাহ উদ্দিন জসিম
সালাহ উদ্দিন জসিম সালাহ উদ্দিন জসিম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:০৮ পিএম, ০৬ জুন ২০২৪
ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মোহাম্মদ এ আরাফাত

মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, ব্যাংক ও আর্থিকখাতে অস্থিরতাসহ নানা সংকটের মুখে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছে সরকার। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের প্রথম এ বাজেটে করহার বৃদ্ধি ও সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের পরিধি বাড়ানোসহ বেশ কিছু কৌশল নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সংসদ ও সংসদের বাইরের বিরোধীরা নেতিবাচক বললেও ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা বলছেন, এই বাজেট সংকট উত্তরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) দেশের ৫৪তম বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। জাত আমলা হিসেবে পরিচিত এই রাজনীতিক তার জীবনের প্রথম বাজেটটিতে উচ্চাভিলাস বা হাঁকডাক না দিলেও সাদামাটাভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল নিয়েছেন। করজালে আটকানো, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ এবং সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ানো হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশ করতে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ১৪ কার্যক্রম- অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা, বিজ্ঞান শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উদ্ভাবন সহায়ক শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করা, কৃষিখাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা উন্নত ও সম্প্রসারিত করা, তরুণদের প্রশিক্ষণ ও আত্ম-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

চলমান অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে এ বাজেট কার্যকর ভূমিকা পালন করবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অর্থনীতির সংকটাপন্ন অবস্থায় এ বাজেট ভালো হয়েছে। মানুষ কষ্টে আছে, সেটা লাঘব করার জন্যই সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। গরিব, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের কথা বিবেচনা করেই এ বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। আশাকরি, এটি বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।’

আরও পড়ুন

প্রস্তাবিত বাজেট ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার সহায়ক দাবি করে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘সরকার সময় উপযোগী বাজেট দিয়েছে। এই বাজেটের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট নগরায়ন ও স্মার্ট জনগণ গড়ে উঠতে সাহায্য করবে। বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া নিম্নবিত্তের মানুষকে সমানতালে এগিয়ে নিতে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে।’

অর্থনীতির সংকটাপন্ন অবস্থায় এ বাজেট ভালো হয়েছে। মানুষ কষ্টে আছে, সেটা লাঘব করার জন্যই সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। গরিব, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের কথা বিবেচনা করেই এ বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে।- অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম

‘এটি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নেরও অংশ। দেশকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বসবাসের উপযোগী স্মার্ট করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার এ বাজেট জাতির কাছে উপস্থাপন করেছে। এ বাজেটে দেশের ধনী, গরিব, মধ্যবিত্ত সবাই উপকৃত হবেন।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত ‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’ শীর্ষক ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথযাত্রার দিকনির্দেশনার সন্নিবেশ। বর্তমান অস্থির বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার ধাক্কা মোকাবিলা আমাদের মতো মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’

‘বিশেষ করে মাত্রাতিরিক্ত জনগণ অধ্যুষিত ছোট্ট দেশের খাদ্য, পুষ্টি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ বাস্তবতার আলোকে গরিব জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণ এবং টেকসই উন্নয়নের অভিযাত্রা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত বাজেটে সুনিপুণভাবে ভারসাম্য বজায় রাখা হয়েছে। সব শ্রেণির নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত বাজেটটি সবিশেষ ভূমিকা পালন করবে। আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানাই।’

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘বৈশ্বিক বাস্তবতার প্রভাব মাথায় রেখেই বাজেট দেওয়া হয়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। মূল্যস্ফীতি যেন কমে, মানুষের কষ্ট যেন লাঘব হয়, সে চেষ্টা আছে। আশা করি, আগামী একবছরের মধ্যে সবকিছু সহনীয় পর্যায়ে আসবে।’

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট সংকটে বাস্তবসম্মত গণমুখী বাজেট। দলের নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া অঙ্গীকার ও অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় নিয়ে বাজেট দেওয়া হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণেও ফোকাস থাকবে। বাস্তবসম্মত হয়েছে এ বাজেট। কারও প্রেসক্রিপশন মেনে বাজেট প্রণয়ন করা হয়নি। শেখ হাসিনা সরকার কারও প্রেসক্রিপশন মেনে চলেন না।’

বৈশ্বিক বাস্তবতার প্রভাব মাথায় রেখেই বাজেট দেওয়া হয়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। মূল্যস্ফীতি যেন কমে, মানুষের কষ্ট যেন লাঘব হয়, সে চেষ্টা আছে। আশা করি, আগামী একবছরের মধ্যে সবকিছু সহনীয় পর্যায়ে আসবে।- মোহাম্মদ আলী আরাফাত

তবে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, গতানুগতিক বাজেট এটা, বিশেষ কিছু নেই। বেকার সমস্যা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, ডলারের অবমূল্যায়ন- এসব উত্তরণে কোনো পদক্ষেপ নেই বাজেটে। ঘাটতি থাকবে অনেক টাকা। আয়ের চেয়ে ব্যয় হবে বেশি। দেশি-বিদেশি ঋণ বাড়বে। ঋণ পরিশোধে নতুন করে ঋণের পথে হাঁটছে সরকার। এটা জনবান্ধব বাজেট হতে পারে না। সাধারণ মানুষের স্বস্তির কোনো কারণ নেই। বাজেটের পর দেশ একটা বড় অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে।

রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই বাজেট লুট করার জন্য। তথাকথিত বাজেটে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। সাধারণ মানুষের ওপর সব বোঝা চাপাবে। ব্যাংক ও বিদেশিদের ওপর ঋণ আরও বাড়বে। বাজেটের সঙ্গে সবকিছুর দাম আবার বাড়বে। মানুষ তো আর পারছে না। নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। পুরো বাজেট বাংলাদেশ বিরোধী বাজেট। জনগণের জন্য কিছু নেই। মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতির জন্য এই বাজেট।

একইভাবে সিপিডি, টিআইবিসহ বিভিন্ন সংগঠন বাজেট প্রতিক্রিয়ায় নেতিবাচক দিকই তুলে ধরেছে বেশি।

এসইউজে/এএসএ/এমএস

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।