মে দিবসের সমাবেশেই সীমাবদ্ধ শ্রমিক লীগের কর্মসূচি
জাতীয় শ্রমিক লীগ। ১৯৬৯ এর উত্তাল সময়ে সংগঠনটির যাত্রা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শ্রমিক, মজদুর ও মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এক সময় লক্ষ্য বাস্তবায়নে বেশ সরব থাকলেও সম্প্রতি অতিনিষ্ক্রিয় সংগঠনটি।
বিগত ১৬ বছরে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে মাঠে দেখা যায়নি এ সংগঠনটি। যদিও নেতারা বলছেন, ‘শ্রমিকদের বেতন ও নানা সুযোগ-সুবিধা তাদের হাত ধরেই হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হওয়ায় তারা সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে নিজেদের কর্মসূচি পালন করেন।’
শ্রমিক লীগের গঠনতন্ত্রে (ড) ধারায় বলা হয়েছে, ‘বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শ্রমিক-কর্মচারী ও মেহেনতি মানুষের জীবনধারণ উপযোগী বেতন, মজুরি, ভাতা, বোনাস, চাকরির স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা, কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিমা, বৃদ্ধ বয়সে পেনশন, দুর্ঘটনায় পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ, গ্রাচুইটি, মৃত্যুর পর পরিবারের একজনকে চাকরি দিতে হবে।’
অথচ ক্ষমতার তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এ সংগঠনটির উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম বা কর্মসূচি চোখে পড়েনি। কোথাও আন্দোলন-সংগ্রামে সংহতি প্রকাশ করতেও দেখা যায়নি। অথচ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শ্রমিক আন্দোলন হয়েছে। মে দিবসে শ্রমিক সমাবেশের বাইরে শ্রমিক লীগের তেমন কর্মসূচিও চোখে পড়ে না। এছাড়া আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়াই যেন মূল কাজ সংগঠনটির।
শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কোনো আন্দোলনে না থাকলেও নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্বে সিদ্ধহস্ত সংগঠনটির নেতারা। তবে নেতারা দাবি করেন, ‘এখন আর তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নেই। তারা ঐক্যবদ্ধ।’
জাতীয় শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুর কুতুবুল আলম মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, ‘শ্রমিক লীগ শ্রমিকদের কল্যাণেই কাজ করে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন আট হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার করা হয়েছে। এটা তো শ্রমিক লীগ করেছে, আমি নিজেই ছিলাম শ্রমিক লীগের পক্ষ থেকে। এটা তো বড় অর্জন। ৫৪ শতাংশ বেতন বেড়েছে। এখন থেকে বছরে ৫ শতাংশ হারে বেতন বাড়তে থাকবে।’
‘এর বাইরে সামনে ইনফরমাল সেক্টরে ৬৯ শতাংশ শ্রমিককে সংঘবদ্ধ করে তাদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। রিকশাওয়ালা, ঠেলাওয়ালা, কুলি, মজুরসহ নানা সেক্টরের অনানুষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা তো বিক্ষিপ্তভাবে আছে। তাদের আগে সংঘবদ্ধ করতে হবে। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।’
তিনি বলেন, ‘দ্বন্দ্ব আছে বলে আমরা বসে আছি তা নয়, আমরা দিনরাত কাজ করছি। একটা মাল্টিক্লাস সংগঠনে দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে। তবে এখন আমরা সব দ্বন্দ্ব নিরসন করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি। মে দিবসেও আমাদের ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি আছে। সরকারি দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হওয়ায় সকালে সরকারি কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিকেলে আমরা শ্রমিক সমাবেশ করবো।’
জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আযম খসরু বলেন, ‘মে দিবস উপলক্ষে আমাদের র্যালি ছিল। গরমের কারণে সেটি বাতিল করা হয়েছে। এর বাইরে সরকারি অনুষ্ঠান আছে আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। চারশ শ্রমিক নেতাকর্মী নিয়ে আমরা অংশ নেবো। বিকেলে জাতীয় শ্রমিক লীগের আয়োজনে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে শ্রমিক সমাবেশ আছে।’
শ্রমিকদের স্বার্থে কী কী কাজ আপনারা করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘শ্রমিকদের স্বার্থে- শ্রমিক কল্যাণ তহবিল পাঁচ কোটি থেকে ৫শ কোটি করা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার করা হয়েছে জাতীয় শ্রমিক লীগের সুপারিশে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ও কর্মসংস্থান ব্যাংক করা হয়েছে। রেমিট্যান্সে প্রণোদনা ২ শতাংশ থেকে করা হয়েছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। মাতৃত্বকালীন ছুটি তিন মাস থেকে ছয় মাস করা হয়েছে। বিজয়নগরে শ্রম ভবন করা হয়েছে।’
‘এগুলো তো শ্রমিকদের কল্যাণেই। গার্মেন্টসে শ্রমিকদের বেতন আট হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার করা হয়েছে, এগুলো তো শ্রমিক লীগের সুপারিশেই হয়েছে। শ্রমিকদের জন্য ডরমেটরি করা হয়েছে। পিপিপিতে টঙ্গী ও ফতুল্লায় হাসপাতাল করা হচ্ছে। ১০০ ইকোনমিক জোন হচ্ছে, এতে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হচ্ছে, হবে।’
এখন আর কোনো দ্বন্দ্ব নেই বলেও জানান শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আযম খসরু।
১৯৬৯ সালের ১২ অক্টোবর শ্রমিক, মজদুর ও মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় শ্রমিক লীগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিভিন্ন সময়ে শ্রমিকবান্ধব কর্মসূচি করে জনপ্রিয় হয় এ সংগঠন। ক্ষমতার ছায়ায় বৈশিষ্ট্য হারাতে বসেছে সংগঠনটি।
জানা যায়, সবশেষ ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলন হয়। সে সময় ফজলুল হককে সভাপতি এবং কেএম আযম খসরুকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে সভাপতি ফজলুল হক মারা গেলে সহ-সভাপতি মো. নূর কুতুব আলম মান্নানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর।
এসইউজে/এএসএ/জেআইএম