স্থানীয় সরকার নির্বাচন

ভোটার ফেরাতে দলীয় প্রতীকবিহীন ভোট, সাফল্য কতটা?

সালাহ উদ্দিন জসিম
সালাহ উদ্দিন জসিম সালাহ উদ্দিন জসিম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:১৯ পিএম, ২৪ মার্চ ২০২৪
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে অপেক্ষমাণ ভোটাররা/ ছবি- সংগৃহীত

# দলীয় প্রতীকবিহীন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো ছিল মূল লক্ষ্য
# নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেড়েছে
# কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটির ভোটে প্রার্থী বাড়লেও ভোটার উপস্থিতি কমেছে
# ইভিএমে ভোটগ্রহণকে দুষছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কামরুল ইসলাম

নির্বাচন জমজমাট ও অংশগ্রহণমূলক করতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে ভোট থেকে সরে আসে সরকার। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে দলীয় প্রতীকবিহীন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো ছিল মূল লক্ষ্য। তবে বাড়েনি ভোটার উপস্থিতি। বেড়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। সংসদ নির্বাচনের পর নতুন এ সিদ্ধান্তে ভোটার বরং আরও কমেছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ইভিএমের কারণে ভোটার উপস্থিতি হয়তো কম হয়েছে। তবে, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।

গত ৯ মার্চ কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়। এ দুই সিটির ভোট বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ দুই সিটির আগের নির্বাচন হয়েছিল দলীয় প্রতীকে। এবার হয়েছে দলীয় প্রতীকবিহীন। এবারের নির্বাচনে প্রার্থী সংখ্যা বাড়লেও ভোটার উপস্থিতি বাড়েনি। বরং কুমিল্লা সিটিতে ২০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি কমেছে। ময়মনসিংহে কমেছে ২ শতাংশ।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনকুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের এক ভোটকেন্দ্র/ ছবি- সংগৃহীত

নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে দুই লাখ ৪২ হাজার ৪৫৮ জন ভোটার। এ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৯৪ হাজার ১১৫টি। ভোট প্রদানের হার ৩৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে ৪৮ হাজার ৮৯০ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন তাহসীন বাহার সূচনা। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ২৬ হাজার ৮৯৭ ভোট। এছাড়া মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার পেয়েছেন ১৩ হাজার ১৫৫ ভোট। আরেক প্রার্থী নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম জামানত হারিয়েছেন।

 

আরও পড়ুন

অথচ, এর আগে ২০২২ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) তৃতীয় নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৫৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ওই নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন নৌকা প্রতীকের আরফানুল হক রিফাত। সে সময় কুমিল্লা সিটিতে ভোটার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০। নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত পান ৫০ হাজার ৩১০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা স্বতন্ত্র প্রাথী মনিরুল হক সাক্কু পান ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। বিএনপির আরেক বহিষ্কৃত নেতা নিজামউদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীক নিয়ে পান ২৯ হাজার ৯৯ ভোট।

 

২০১৯ সালে মেয়র পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ইকরামুল হক টিটু। এরপরও ওই নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৫৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এবার ভোটার উপস্থিতি কমেছে দুই শতাংশ। এবার ৫৬ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

 

কুসিকের দুই নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ভোটার উপস্থিতি ২০ শতাংশ কমেছে। অথচ ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী বেশি।

অনেকটা একই অবস্থা ময়মনসিংহ সিটিতে। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬। নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৫৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। এবার ১২৮ কেন্দ্রের সবকটিতেই ভোটগ্রহণ হয়েছে ইভিএমে। নির্বাচনে ইকরামুল হক টিটু এক লাখ ৩৯ হাজার ৬০৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাদেকুল হক খান মিল্কী পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৭৬৩ ভোট। বাকি তিন প্রার্থী এহতেসামুল আলম, মো. রেজাউল হক ও শহিদুল ইসলাম জামানত হারিয়েছেন।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনকুমিল্লা সিটি করপোরেশন/ ফাইল ছবি

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে মোট ৩৩টি ওয়ার্ড। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ প্রার্থী ছাড়াও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ছিলেন ৬৯ জন। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১৪৯ প্রার্থী। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় এক ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তবে বেশির ভাগ ওয়ার্ডেই প্রার্থী ছিলেন চার থেকে ছয়জন। সর্বোচ্চ আটজন প্রার্থী ছিলেন তিন ওয়ার্ডে।

এর আগে ২০১৯ সালে মেয়র পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ইকরামুল হক টিটু। এরপরও ওই নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৫৮ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এবার ভোটার উপস্থিতি কমেছে দুই শতাংশ। এবার ৫৬ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

আরও পড়ুন

প্রতীকবিহীন ভোটে লাভ হলো নাকি ক্ষতি? এমন প্রশ্নে ময়মনিসংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটু জাগো নিউজকে বলেন, ‘দলের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক, সমর্থন বা মনোনয়ন- কোনোটাই দেননি। যে কারণে ভোটে প্রার্থী বেড়েছে। ভোটাররাও অধিক সংখ্যক প্রার্থী থেকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পেরেছেন। ফলে বলা যায়, এটি আমাদের দলের একটি ভালো সিদ্ধান্ত, ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী বিচার বিশ্লেষণ করে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে সঠিক। আবার কখনো যদি পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন, সেটিই চূড়ান্ত। আমরা সবাই তা মেনে নিয়েই কাজ করবো।’

 

পৃথিবীতে যে দেশ যত উন্নত সে দেশে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি তত কম। আমাদের দেশেও এর প্রভাব পড়েছে। এরপরও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ৬০ শতাংশ পার করেছে, যা আশাব্যঞ্জক।

 

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসীন বাহার সূচনা জাগো নিউজকে বলেন, ‘দলীয় প্রতীক থাকলে ভালো হতো, যেহেতু আমরা দল করি। আমার বাবাও দলীয় প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করে বার বার সংসদ সদস্য হয়েছেন। এর আগে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও দলীয় প্রতীক ছিল। তবে, এবার দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তকেও আমি স্বাগত জানাই। নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাইরেও সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা সাড়া পড়েছে। দলমত নির্বিশেষে কুমিল্লার উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তারা প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। এবার স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচন হয়েছে।’

স্থানীয় সরকার নির্বাচনময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন/ ফাইল ছবি

নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কমে যাওয়ার কারণ কী- এমন প্রশ্ন ছিল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের কাছে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে যে দেশ যত উন্নত সে দেশে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি তত কম। আমাদের দেশেও এর প্রভাব পড়েছে। এরপরও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ৬০ শতাংশ পার করেছে, যা আশাব্যঞ্জক। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আরও বাড়বে বলে আশা করছি।’

তবে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম দুষলেন ইভিএমকে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘ভোটার উপস্থিতি কমার কোনো কারণ নেই। তবে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হওয়ায় ভোটার হয়তো কম এসেছে। কারণ ইভিএম স্লো, নানান সমস্যা দেখা দেয়। ইভিএম ছাড়া ভোট হলে এমনটা হতো না।’

এসইউজে/কেএসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।