আওয়ামী লীগ ক্যু করে ক্ষমতা দখল করেছে, অভিযোগ আমীর খসরুর
আওয়ামী লীগ ক্যু করে ক্ষমতা দখল করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন ১৫ বছরের অপশাসনের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের জনগণ, দেশের জাতীয়তাবাদের পক্ষের শক্তি দেশপ্রেমী নাগরিক- সবার অংশগ্রহণে এক বিশাল আন্দোলনের সূচনা হয়েছে। সূচনা হয়েছে, শেষ হয়নি। এ আন্দোলন অব্যহত আছে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে। জনগণ এখনো তার অধিকার ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় আছে।’
শনিবার (২ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রামে দলীয় কার্যালয়ের মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জনগণের ভোট কেড়ে নেওয়া সন্ত্রাসী এ রেজিমের বিরুদ্ধে আন্দোলন। কিছু সুবিধাবাদী লোক যারা জনগণের সব অধিকার ও ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন। জনগণ বিএনপির পক্ষে রায় দিয়েছে। জনগণ এখনো তার ভোটাধিকার প্রয়োগের অপেক্ষায় আছে। জনগণ এখনো তার অধিকার ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। শুধুমাত্র কিছু লোক অবৈধ ও অনৈতিকভাবে একটি চক্র সৃষ্টি করে ক্ষমতায় বসে আছে। আওয়ামী লীগ ক্যু করে ক্ষমতা দখল করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আন্দোলন আন্দোলনের জায়গায় আছে, চলমান আছে। বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ এ আন্দোলন করছে। এটা বাস্তবায়িত হবেই।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন। এটা কোনো দলের বা ব্যক্তির একক আন্দোলন নয়। এ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পাবো। কিন্তু সেই অপশক্তি বোমা, সাউন্ড গ্রেনেন্ড ব্যবহার ও গুম-খুনের মাধ্যমে জনগণের সে অধিকার আবার কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু ভালো খবর হচ্ছে আন্দোলনের দাবি ছিল এ ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচনে যাবে না। সে আহ্বানে বিএনপিসহ বাংলাদেশের সব রাজনীতিবিদ সাড়া দিয়েছেন, শুধু গুটি কয়েক ভিক্ষুক রাজনীতিবিদ ছাড়া। প্রায় সব রাজনৈতিক শক্তি একপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের সুশীল সমাজ একপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের পেশাজীবী ও সাংবাদিকরাও একপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম তথাকথিত নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ অংশগ্রণ করবে না। বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ভোটকেন্দ্রে যায়নি। এটা কোনো নির্বাচন নয়। নির্বাচনে তো দুই পক্ষ থাকবে। যেখানে দুই পক্ষ থাকবে না সেটা নির্বাচন হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগে যোগ হয়েছিল গায়েবি মামলা, নির্বাচনের পর যোগ হয়েছে ডামি প্রার্থী। ডামি প্রার্থী, ডামি ভোটার আর ডামি নির্বাচন এসব শব্দ যোগ হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। যারা গেছে তাদের স্থানীয় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ভয় দেখিয়েছে যাওয়ার জন্য। সরকারি কর্মকর্তাদের সুযোগ সুবিধা ছিনিয়ে নেওয়ার ভয় দেখিয়েছে। সুবিধাবঞ্চিতদের কাছ থেকে সরকারি কার্ড পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এতকিছুর পরও বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনে যায়নি। অর্থাৎ, এ গণভোটে বাংলাদেশের মানুষ এত চাপের মধ্যে, এত গুম-খুনের মধ্যে সে রেজিমকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা হচ্ছে আন্দোলনের সুফল। অনেকে বলছে ক্ষমতা নিয়ে নিয়েছে। আরে ক্ষমতা! ক্ষমতা তো অনেকভাবে নেওয়া যায়। আমরা দেখেছি বাংলাদেশসহ অনেক দেশে সামরিক বাহিনী ক্যু করে ক্ষমতা নিয়ে নেয়। আওয়ামী লীগ সে ক্যু করেছে। জনগণের তো এখানে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ক্ষমতা জোর করে দখল করা আর ক্ষমতায় যাওয়ার মধ্যে বিশাল ব্যবধান আছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষ গণভোটে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করেছে। এটা একটা সফলতা।’
আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশে গত ৭ জানুয়ারি যে গণভোট হয়েছে সেখানে জনগণের জয় হয়েছে। গণতন্ত্রের জয় হয়েছে, বিএনপির জয় হয়েছে। যারা এ আন্দোলন করতে গিয়ে রাজপথে জীবন দিয়েছেন, জেলে গিয়েছেন, খুন ও গুম হয়েছেন- তাদের জয় হয়েছে। এ জয়কে আগামী দিনে বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের আন্দোলনের যে ধারা সেটা চালিয়ে যেতে হবে। আমাদেরকে জেলে নিয়ে তারা মনে করেছিল বিএনপির নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে দেবে। কিন্তু সেটা তারা করতে পারেনি। আমি তো মনে করি আরও জোরদার হয়েছে। যারা জেলে আছে তারা এক কাপড়ে আছে। এত কষ্টের মধ্যেও তাদের কারো মনোবল ভাঙেনি। তাদের মনোবল শক্ত আছে। এটাই বিজয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে অনেক শক্তিশালী। নির্বাচনের পর আরও শক্তিশালী হয়েছে। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনোবল আগে থেকে আরও শক্তিশালী হয়েছে। এটাই রাজনীতি, রাজনীতির জয়। এটাই বিএনপির সফলতা। বিএনপি অনেক শক্তিশালী অবস্থানে আছে তারেক রহমানের নেতৃত্বে। কর্মীরা কর্মসূচির অপেক্ষায় আছে। সামনে রমজান মাস আসছে। আমরা রোজা রাখবো, নামাজ পড়বো। একই সঙ্গে বিএনপির সব কর্মসূচি সফলভাবে পালন করতে হবে। এতে সবাই যেমন চাঙা থাকবে তেমনি জনগণের কাছে যেতে পারবে। ইফতার পার্টি না করে ওই টাকা দিয়ে জনগণের কাছে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করবো। বাংলাদেশের মানুষ বিএনপির রাজনীতির শক্তি। মানুষের কাছে যেতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক ম্যা মা চিং, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো। সরকারের সব ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। বিজয় আমাদের হবেই।
এস এম ফজলুল হক বলেন, আজকের মতবিনিময় সভা জনসভায় পরিণত হয়েছে। কারাবন্দিদের মুক্তির জন্য আমাদের আন্দোলনের ধরন বদলাতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে বিএনপি প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামের মানুষকে প্রাণের সঞ্চার করেছেন। আমাদের আন্দোলন চলবে। আমাদের আন্দোলন ভোট ডাকাতদের বিরুদ্ধে। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের লড়াই। তারেক রহমানের নেতৃত্বে এই অবৈধ সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের অধিকার আদায় করে ছাড়বো।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া, বান্দরবান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা, উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হালিম, মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ এম এ আজিজ, যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দিন, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মো. শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ইউনুস চৌধুরী, নুরুল আমিন, নূর মোহাম্মদ, নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, সরওয়ার আলমগীর, কাজী সালাউদ্দিন, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ, মোশারফ হোসেন, জয়নাল আবেদীন জিয়া, হারুন জামান, মো. আলী, কর্নেল আজিম উল্লাহ বাহার, নিয়াজ মো. খান, এস এম আবুল ফয়েজ, নূরুল আনোয়ার, অ্যাডভোকেট ফোরকান, আব্দুল গাফফার চৌধুরী, এম মঞ্জুর উদ্দিন চৌধুরী, কামরুল ইসলাম হোসাইনী, এস এম মামুন মিয়া, নাজমুল মোস্তফা আমিন, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, আবুল হাশেম, মন্জুর আলম মন্জু প্রমুখ।
ইকবাল হোসেন/কেএসআর/জেআইএম