রিজভী

১০৫ বার তদন্ত প্রতিবেদন পেছানো নতুন বিশ্ব রেকর্ড আ’লীগের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৫২ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ১০৫ বার পেছানোও আওয়ামী লীগের আরেকটি নতুন বিশ্ব রেকর্ড বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সোমবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের এক যুগ পূর্ণ হলো গতকাল। এটি অত্যন্ত পীড়াদায়ক যে, এক যুগেও এই বহুল আলোচিত হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত তদন্ত করেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রহস্যজনকভাবে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রকৃত তদন্তের বিষয়টি। হত্যার পর সাগর-রুনির খুনিরা বাসা থেকে ল্যাপটপ নিয়ে যায়। অথচ সেই ল্যাপটপ ১২ বছরেও উদ্ধার হয়নি। ঠিক যেমন উন্মোচন হয়নি, সেই ল্যাপটপে কি গোপনীয় বিষয় ছিল তার কোনো তথ্য।

তিনি আরও বলেন, সাংবাদিক দম্পতির খুনের ঘটনার পর, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার করা হবে। দুদিন পর পুলিশের আইজি বলেছিলেন, তদন্তের ইতিবাচক ও প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। অবিশ্বাস্য বাস্তবতা হলো, মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার তারিখ এখন পর্যন্ত ১০৫ বার পিছিয়েছে। দুর্নীতি-দুঃশাসন-দুর্বৃত্তায়নে আওয়ামী লীগের বহুমাত্রিক বিশ্ব রেকর্ডের মাঝে, একটি হত্যা মামলায় ১০৫ বার তদন্ত প্রতিবেদন পেছানোও দৃষ্টান্তহীন আরেকটি নতুন বিশ্ব রেকর্ড।

১২ বছরে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার বিষয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, হয়তো সাগর-রুনির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় এমন কিছু তথ্য-প্রমাণ উঠে এসেছিল এবং তারা এমন কিছু বিষয় জেনে ফেলেছিলেন, যা ক্ষমতাসীনদের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও হুমকিস্বরূপ। যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ছিল সাগর-রুনির সাংবাদিকতার অন্যতম বিষয়, যে খাত থেকে রাষ্ট্রীয় মদতে লাখ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে, সেই খাতের লুটপাট তথা নেপথ্যেও কুশীলবদের সঙ্গে এই হত্যা ও বিচারহীনতার সম্পর্ক থাকা অস্বাভাবিক নয়।

তিনি বলেন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র ২০২২ সালে জানায়, বাংলাদেশজুড়ে প্রায়ই হত্যা, গুম, খুন ও অপহরণসহ সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। ১০ বছরে এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছেন ৩০ সাংবাদিক, যার বিচার আজও হয়নি। গত ১৫ বছরে সাংবাদিক হয়রানি ও নির্যাতনের যে ৪ হাজারটিরও বেশি ঘটনা ঘটেছে, এর প্রায় প্রতিটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের টেন্ডারবাজ, তদবিরবাজ ও দুর্নীতিবাজ নেতাকর্মীরা জড়িত বলে প্রতীয়মান।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ স্বাধীন সংবাদমাধ্যম উল্লেখ করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, অথচ গণমাধ্যমের ওপর বিভিন্ন বাধা-নিষেধ আরোপ করে ফ্যাসিবাদ কায়েম করা হয়েছে। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের অপরাধে, পরিকল্পিতভাবে খুন করছে গণবিরোধী সরকার। এসব খুনের ঘটনায়, ন্যায়বিচার থেকে বছরের পর বছর ধরে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিটি ভুক্তভোগী পরিবার।

সাংবাদিক নির্যাতনের জন্য যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী, তারা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি বা প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে জানান রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, সে কারণেই তারা বিচারের আওতামুক্ত থাকে। আওয়ামী আইন ও বিচার এদের স্পর্শ করতে পারে না। এভাবেই দেশে তৈরি করা হয়েছে এক নৈরাজ্যময় ভীতিকর পরিবেশ।

বর্তমানে গণমাধ্যমের একটি বিশাল অংশ আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী ও নেতাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত দাবি করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, মালিকপক্ষের চাপে বিলীন হচ্ছে স্বাধীন সাংবাদিকতা, বাধ্য হয়ে অনেক সাংবাদিকই শামিল হচ্ছেন আওয়ামী লীগের বয়ান প্রচারণায়। ফ্যাসিস্ট সরকারের মুখপাত্র হিসেবে চিহ্নিত কিছু গণমাধ্যমের খবর এতটাই একপেশে ও ভারসাম্যহীন যে, দেশের জনগণ আজ মূলধারার গণমাধ্যমের একাংশের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে।

কেএইচ/জেডএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।