নির্বাচনের আগে কর্মসূচি নিয়ে বিএনপিতে ধোঁয়াশা
# ৫ জানুয়ারি গণমিছিল এবং ৬ ও ৭ জানুয়ারি হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।
আর মাত্র চারদিন পরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে প্রহসনমূলক ও একতরফা দাবি করে নির্বাচন রুখতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। আন্দোলনের অংশ হিসেবে এখন ভোটবিরোধী লিফলেট বিতরণ করছে দলগুলো। এর মাধ্যমে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করছেন তারা।
গুঞ্জন ছিল, ১ জানুয়ারি থেকে কঠোর কর্মসূচিতে যাবে বিএনপি। তবে শেষ পর্যন্ত সেটির বাস্তবতা মেলেনি। ফের লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ কর্মসূচি বাড়িয়েছে দলটি। ভোটের আগে বিএনপি কী কর্মসূচি দেবে- বিষয়টি এখন পর্যন্ত দলটির নেতাকর্মীদের কাছে স্পষ্ট নয়। কর্মসূচি নিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা এখনো ধোঁয়াশায়।
আরও পড়ুন: নির্বাচন ঠেকাতে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিএনপির চিঠি
যদিও বিএনপি নেতারা বলছেন, এটি যে পুরোপুরি একটি পাতানো নির্বাচন- সেটি প্রমাণে সবকিছু করবেন তারা। নিজস্ব কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি বিশ্বের গণতান্ত্রিক সব শক্তিকে পাশে পেতে চায় বিএনপি। কর্মসূটি চলমান, নতুন কর্মসূচিও আসবে। এ নিয়ে কোনো ধোঁয়াশা নেই।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র চারদিন। দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি এরই মধ্যে ভোট বর্জন করে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। গত ২০ ডিসেম্বর দলটি নির্বাচনকে একতরফা উল্লেখ করে তা বর্জনের ঘোষণা দেয়। একই সঙ্গে দলটি সরকারকে সব ধরনের অসহযোগিতা করতে দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এরপর থেকে বিএনপি নির্বাচন বয়কটের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করছে।
এটি যে পুরোপুরি একটি পাতানো নির্বাচন- সেটি প্রমাণে সবকিছু করবেন তারা। নিজস্ব কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি বিশ্বের গণতান্ত্রিক সব শক্তিকে পাশে পেতে চায় বিএনপি। কর্মসূচি চলমান, নতুন কর্মসূচিও আসবে।
নেতাকর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন ছিল, ১ জানুয়ারি দলটি ফের হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি পালন করবে। অবশ্য এ ধরনের কোনো ঘোষণা আসেনি বিএনপি থেকে। দলটি ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
জানা গেছে, গত রোববার কর্মসূচি নিয়ে বৈঠক করে দলটির হাইকমান্ড। সেখানে নানান বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে নেতারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে জোর দিয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকাল সোমবারও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে স্কাইপি বৈঠক করেছেন। সেখানে নেতাকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে না যেতে বলা হয়েছে। তবে, এসব বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে জানানো হয়নি।
আরও পড়ুন: বিদেশি চাপ আমরা কেয়ার করি না
বিএনপি সমমনা দলের এক নেতা জাগো নিউজকে বলেন, ৫ জানুয়ারি গণমিছিল এবং ৬ ও ৭ জানুয়ারি হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।
কূটনৈতিক চ্যানেলেও ফের তৎপরতা বাড়িয়েছে বিএনপি। গত ৩১ ডিসেম্বর দলটি জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দূতাবাসে চিঠি পাঠিয়েছে। এতে ‘একতরফা পাতানো নির্বাচন’ বন্ধে হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের পাতানো খেলা উল্লেখ করে দলটি কূটনীতিকদের বার্তাও দিচ্ছে। বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই একতরফা নির্বাচনের বিষয়ে বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনৈতিক মিশনগুলোকে অবহিত করেছে দলটি।
বর্তমানে বিএনপি ও সমমনাদের আন্দোলন কর্মসূচি অনেকটা এককেন্দ্রিক। ভোটকেন্দ্রে যেতে ভোটারদের নিরুৎসাহিত করছেন তারা। কারণ, নির্বাচনে ভোট কম পড়লে সহজেই সে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে। ফলে কেন্দ্র ভোটারশূন্য করতে আসনভিত্তিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে বিএনপি ও দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। বিশেষ করে যারা ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৩০০ আসনে মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছিলেন, তাদের মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে দলটির হাইকমান্ড। লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দফায় দফায় এসব নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। ভোটের আগ মুহূর্তে আরও সংঘবদ্ধভাবে মাঠে নামতে চান বিএনপি নেতারা।
নির্বাচনে ভোট কম পড়লে সহজেই সে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে। ফলে কেন্দ্র ভোটারশূন্য করতে আসনভিত্তিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে বিএনপি ও দলটির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশে সংঘর্ষের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দলটির যেসব নেতা গাঢাকা দিয়েছিলেন, তারাও এখন ভোটবিরোধী গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সক্রিয় হয়েছেন। ভোট বর্জন করে বিএনপি এবারের নির্বাচন একতরফা দেখাতে আগামী দিনগুলোতে আরও বেশ কিছু কর্মতৎপরতা নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে।
আরও পড়ুন: বিএনপির অসহযোগ: কেন্দ্রে আশা, তৃণমূলে নিরাশা
এছাড়া বিএনপিপন্থি পেশাজীবী সংগঠন ও বুদ্ধিজীবীদের মাঠে নামিয়েছে দলটি। সভা-সেমিনার ও টকশোতে এসব বুদ্ধিজীবী দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন মহলকে একতফরতা ভোট ও মানবাধিকারের বিষয়ে নজরে আনতে কাজ করছেন।
যশোরের মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট শহীদ মো. ইকবাল হোসেন জাগো নিউজকে জানান, গত কয়েকদিন ধরে তার নেতৃত্বে বিএনপি মনিরামপুরের ১৭টি ইউনিয়নে ভোটবিরোধী গণসংযোগ করেছে। সেখানে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। আগামীতে কোন ধরনের কর্মসূচি আসবে সেটি এখনো ধারণা দেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আসলে এবারের নির্বাচন পুরোপুরি পাতানো একটি খেলা। এটাকে নির্বাচন বলা চলে না। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা মাঠে আছি একতরফা এই নির্বাচন রুখতে। মানুষ যেন পাতানো নির্বাচনে ভোট দিতে না যায়- জনসাধারণকে এটা বোঝাতে আমরা সব ধরনের কর্মসূচি পালন করবো।’
আরও পড়ুন: ভোটার উপস্থিতি নিয়ে যত চিন্তা
কী ধরনের কর্মসূচি আসবে সঠিকভাবে ধারণা না দিতে পারলেও তিনি বলেন, ‘কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে।’
এসব বিষয়ে কথা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমানের সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও একতরফা এ ভোটে মানুষ অংশ নিতে চায় না। মানুষের চাওয়া হচ্ছে, বিএনপিসহ সব দল মিলে যেন একটি প্রকৃত অর্থে অংশগ্রহণমূলক ভোট হয়। জনগণের চাওয়ার সঙ্গে বিএনপির চাওয়ার মিল আছে।’
কর্মসূচি নিয়ে ধোঁয়াশা নেই জানিয়ে বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘দলের নানান কৌশল থাকে। সবকিছু আগে মাঠ পর্যায়ে সবসময় জানানো যায় না।’ আগামীদিনে আরও কর্মসূচি আসছে বলেও জানান তিনি।
কেএইচ/কেএসআর/এমএস