ফাঁকা মাঠে নসরুল হামিদের একক আধিপত্য

ইসমাইল হোসাইন রাসেল
ইসমাইল হোসাইন রাসেল ইসমাইল হোসাইন রাসেল
প্রকাশিত: ১০:২০ এএম, ০২ জানুয়ারি ২০২৪

জিনজিরা, আগানগর, তেঘরিয়া, কোন্ডা ও শুভাট্যা- কেরানীগঞ্জের এ পাঁচ ইউনিয়ন নিয়ে ঢাকা-৩ আসন। এখানে এ পর্যন্ত তিনবার বিএনপি এবং তিনবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। তবে বিএনপি না থাকায় এবার একক ‘হেভিওয়েট’ হিসেবে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী, বর্তমান সংসদ সদস্য নসরুল হামিদ বিপু। তিনি অনেকটা ফাঁকা মাঠেই গোল দিতে যাচ্ছেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

এবারের নির্বাচনে এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪২ হাজার ৫৪২। এরমধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৯৪ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬৪৬ জন। হিজড়া আছেন দুজন।

এ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন ছয়জন। তবে আওয়ামী লীগের নসরুল হামিদ ছাড়া বাকি কারই তেমন নাম, পরিচিতি বা ভোটব্যাংক নেই। এ আসনের প্রার্থীরা হলেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আব্দুস সালাম, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের মো. রমজান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোহাম্মদ জাফর, জাকের পার্টির আব্দুর রাজ্জাক, আওয়ামী লীগের নসরুল হামিদ বিপু এবং জাতীয় পার্টির কুদ্দুস মো. মনির সরকার।

 

এখানে শুধু নৌকাই দেখি। আর কেউ ভোট করেও লাভ নাই। কারণ তাদের তেমন চেনে না মানুষ। ভালো এক-দুজন প্রার্থী থাকলে ভোটটা জমজমাট হতো। তেমন তো কাউকে দেখি না। ভোট মানেই বিএনপি-আওয়ামী লীগ। বিএনপিই যেহেতু নেই, এখন নৌকাই জিতবে

 

ঢাকা-৩ আসন ঘুরে দেখা গেছে, প্রচার-প্রচারণায় অনেকটা একক আধিপত্য নসরুল হামিদের। বিভিন্ন সড়কে নৌকার প্রার্থীর পোস্টার-ব্যানার দেখা গেলেও সেভাবে দেখা যায়নি অন্য প্রার্থীদের। মিছিল-মিটিংয়েও অনেকটা নীরব অন্য পাঁচ প্রার্থী। তরুণ প্রজন্মের নতুন ভোটারদের কাছে নিজের অতীত কর্মযজ্ঞ তুলে ধরে ভোট চাইছেন বিপু।

আরও পড়ুন>> ঢাকা মহানগর: ৩ আসনের বাইরে ‘দেখা নেই’ জাতীয় পার্টির 

স্থানীয়রা বলছেন, গত নির্বাচনে বিএনপির গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রার্থী থাকায় প্রচারণায় দুই পক্ষের আধিপত্য ছিল। তবে এবারের ভোটে নৌকার প্রার্থীর প্রচারণাই সবচেয়ে বেশি। এছাড়া বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মোহাম্মদ জাফর ও জাতীয় পার্টির কুদ্দুস মো. মনির সরকার কিছুটা প্রচারণায় আছেন। বাকিরা অনেকের কাছেই অচেনা। নৌকা ছাড়া বাকি প্রার্থীরা ‘ডামি’ বলেও মন্তব্য করছেন কেউ কেউ।

jagonews24

ঢাকা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রতিদিন উঠান বৈঠক, নির্বাচনী সভা-সমাবেশ করছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দলীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে লিফলেট বিতরণ করছেন তার কর্মীরা। তবে সে তুলনায় অন্যদের অবস্থান একেবারেই নগণ্য।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহীন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, এখানে শুধু নৌকাই দেখি। আর কেউ ভোট করেও লাভ নাই। কারণ তাদের তেমন চেনে না মানুষ। ভালো এক-দুজন প্রার্থী থাকলে ভোটটা জমজমাট হতো। তেমন তো কাউকে দেখি না। ভোট মানেই বিএনপি-আওয়ামী লীগ। বিএনপিই যেহেতু নাই, এখন নৌকাই জিতবে।

আরও পড়ুন>> ঢাকা-৬: প্রতিদ্বন্দ্বীরা ‘লাইটওয়েট’, তবুও দিন-রাত গণসংযোগে সাঈদ খোকন 

ভোটের ইতিহাস বলছে, ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আমানউল্লাহ আমান এ আসনে নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালে নবম, ২০১৪ সালে দশম, ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নসরুল হামিদ বিপু। এরমধ্যে দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি।

 

ঘরে ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে সবাই বলবে, আমরা ভোট দিতে যাবো। আমি নিশ্চিত বলতে পারি, কেরানীগঞ্জের সবাই যাবে ভোট দিতে। কোন দলে ভোট দেবে সেটা তাদের ব্যাপার। আমরা আশাবাদী বিগত দিনগুলোর মতো এবারও এখানে নৌকা মার্কা পাস করবে।

 

দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি এবার ভোটে অংশ নিচ্ছে না। ভোটার উপস্থিতিতে এর প্রভাব পড়তে পারে কি না, জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নসরুল হামিদ বিপু জাগো নিউজকে বলেন, কেরানীগঞ্জের এ আসনে ছয়জন প্রার্থী রয়েছেন। সুতরাং কোন দল নির্বাচনে এলো বা না এলো সেটা কোনো বিষয় নয়। ভোটারদের কাছে একটা বিষয়ই ম্যাটার করে, কে তাদের জন্য ভালো কাজ করবে। যে দল আসেনি তারাই বলতে পারবে তারা কেন এলো না। তবে কেউ বসে নেই। ঘরে ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে সবাই বলবে, আমরা ভোট দিতে যাবো। আমি নিশ্চিত বলতে পারি, কেরানীগঞ্জের সবাই যাবে ভোট দিতে। কোন দলে ভোট দেবে সেটা তাদের ব্যাপার। আমরা আশাবাদী বিগত দিনগুলোর মতো এবারও এখানে নৌকা মার্কা পাস করবে। ২০০১ সাল থেকে আমি নির্বাচন করছি। তখন কেরানীগঞ্জ অনেক বড় ছিল, সাভারের ওপার পর্যন্ত। তখন আমি পরাজিত হই। তারপর ২০০৮ সালে আমি আবার জিতেছি। ২০১৪ ও ১৮-তেও আমি জয়লাভ করি।

আরও পড়ুন>> ড. ইফতেখারুজ্জামান: নির্বাচনের নামে যেটা হচ্ছে, সেটাকে কী নামে অভিহিত করবো জানি না 

jagonews24

সারাদেশে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও দলের অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতে দল মনোনীত প্রার্থীদেরও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে। তেমন কোনো চাপ অনুভব করছেন কি না, জানতে চাইলে নসরুল হামিদ বিপু বলেন, আমি প্রচারণায় ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। মানুষ এখানে সাংঘাতিক উৎফুল্ল। কেরানীগঞ্জে সব সময়ই ভোটের দিন মানে ঈদের দিন মনে করে, এমন একটি আবহ এখানে থাকে। সন্ধ্যার পর তরুণ ও নতুন ভোটাররা বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে, ভোট চাচ্ছে। প্রার্থীরা তাদের পোস্টার লাগাচ্ছেন। মিলেমিশে এখানে নির্বাচন হয়। খুব শান্তি-শৃঙ্খলার মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে। আমি মনে করি আগামী ৭ তারিখের নির্বাচনে প্রচুর ভোটার হাজির হবেন। সে কারণে আমরা অনুরোধ করেছি বুথের সংখ্যা যেন বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এখানে প্রতিবারই ভালো ভোট পড়ে। গতবারও প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। এবারও আমরা আশা করি ৬০-৭০ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোলেশ্বর গ্রামের এক বাসিন্দা জাগো নিউজকে বলেন, ভোট কেমন অইতাছে সেইটা তো দেখতাছেনই। আওয়ামী লীগ ছাড়া এইহানে কিছু আছে? চাইলেই কি এর বাইরে ভোট দিতে পারব কন? কারে ভোট দিবো মানুষ, অন্য কাওরে তো দেহিই না। এহন তো নৌকা ছাড়া ভোট নাই। বাকি যারা আছে সব এমনি খাড়াইছে, হেগো তো মানুষ চিনেই না।

বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মোহাম্মদ জাফর জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিন আমার পোস্টার টানানো হচ্ছে, লিফলেট বিলি করা হচ্ছে। শুক্রবার বড় প্রোগ্রাম করেছি। আগামী বুধবার সবশেষ আরও একটি বড় প্রোগ্রাম করবো। ভোটারদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। সবাই বলছে যদি ভোট দিতে পারে, কসম কেটে অনেকে বলে আমাকেই, ডাব মার্কায় ভোটটা দেবে। অনেক নতুন ভোটার ও মুরুব্বি ওয়াদা করেছে আমাকে ভোট দেবেন। মানুষের আওয়ামী লীগের ওপর এমনিতেই ক্ষোভ। দীর্ঘদিন ধরে তারা ভোটের পরিবেশ ঠিক রাখছে না। চুরি-ডাকাতি করে ভোট নেয়, এজন্য মানুষের ক্ষোভটা বেশি। যদি মানুষ ভোট দিতে পারে এবার আর তারা আওয়ামী লীগে ভোট দেবে না। ভোটকেন্দ্রে মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারলে আর কারচুপি না করলে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

 

ভোট কেমন অইতাছে সেইটা তো দেখতাছেনই। আওয়ামী লীগ ছাড়া এইহানে কিছু আছে? চাইলেই কি এর বাইরে ভোট দিতে পারব কন? কারে ভোট দিবো মানুষ, অন্য কাওরে তো দেহিই না। এহন তো নৌকা ছাড়া ভোট নাই। বাকি যারা আছে সব এমনি খাড়াইছে, হেগো তো মানুষ চিনেই না।

 

তিনি বলেন, যেহেতু আওয়ামী লীগ একটা বড় দল, অন্যদিকে বিএনপি অনেকদিন ধরে গ্যাপে আছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার নেই। পোলিং এজেন্টের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী। ওরা যদি জোর করে বা কারচুপি করে তাহলে কিছু করার থাকবে না। আমার প্রচারণায় তৃতীয় দিনে ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেছিল, এর বাইরে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। আমার পোস্টার সব জায়গায় আছে, অনেক জায়গায় পোস্টার আছে। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন আমরা যে ভোট দিতে যাবো আমাদের ভোট দিতে দিবা কি না?

তিনি আরও বলেন, নৌকার প্রার্থী ছাড়া কাউকে আমি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি না। আমি বাংলাদেশ কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছি। ছোট থেকে স্বপ্ন আমি দলীয় মনোনীত প্রার্থী হবো, নির্বাচনে দাঁড়াবো। স্বপ্নের কারণেই এই দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে শুরু থেকেই দলের সঙ্গে আছি। আমরা প্রথম দিকে চাইনি এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে। কিন্তু আমাদের বোর্ড মিটিংয়ে সবাই বললেন আমাদের দল যেহেতু নতুন তাই পরিচিতির ব্যাপার আছে। সে সুবাদেই আমাদের নির্বাচন করা। সুতরাং আওয়ামী লীগের দালালি করার কোনো বিষয় নেই। আমি পাস করার জন্য দাঁড়িয়েছি। দলের পরিচিতির জন্য দাঁড়িয়েছি। কোনো দলের দালালি করার জন্য দাঁড়াইনি।

আইএইচআর/এমএইচআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।