প্রচুর ভোটার হাজির হবেন, বুথ বাড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছি

ইসমাইল হোসাইন রাসেল
ইসমাইল হোসাইন রাসেল ইসমাইল হোসাইন রাসেল
প্রকাশিত: ০৬:৫৫ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩

কেরানীগঞ্জের পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে ঢাকা-৩ আসন। মোট ছয়জন প্রার্থী এবারের নির্বাচনে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় এখানে একক ‘হেভিওয়েট’ আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য নসরুল হামিদ বিপু।

প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে নসরুল হামিদ। তরুণ প্রজন্মের নতুন ভোটারদের কাছে নিজের অতীত কর্মযজ্ঞ তুলে ধরে ভোট চাইছেন। ২০০৮ সালে তাকে নির্বাচিত করার মাধ্যমে কেরানীগঞ্জের মানুষ সন্ত্রাসকে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে মনে করেন তিনি। ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক ইসমাইল হোসাইন রাসেল

জাগো নিউজ: সারাদেশে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও দলের অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতে দল মনোনীত প্রার্থীদেরও ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হচ্ছে। আপনি নৌকা প্রতীক পেয়েছেন, প্রচারণায় ভোটারদের কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

নসরুল হামিদ বিপু: আমি প্রচারণায় ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। মানুষ এখানে সাংঘাতিক উৎফুল্ল। কেরানীগঞ্জে সব সময়ই ভোটের দিন মানে ঈদের দিন মনে করে, এমন একটি আবহ এখানে থাকে। সন্ধ্যার পর তরুণ ও নতুন ভোটাররা বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে, ভোট চাচ্ছে। প্রার্থীরা তাদের পোস্টার লাগাচ্ছেন। খুব মিলেমিশে এখানে নির্বাচন হয়। খুব শান্তি-শৃঙ্খলার মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে। আমি মনে করি আগামী ৭ তারিখের নির্বাচনে প্রচুর ভোটার হাজির হবেন। সে কারণে আমরা অনুরোধ করেছি বুথের সংখ্যা যেন বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এখানে প্রতিবারই ভালো ভোট পড়ে। গতবারও প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। এবারও আমরা আশা করি ৬০-৭০ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন।

খুব মিলেমিশে এখানে নির্বাচন হয়। শান্তি-শৃঙ্খলার মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে। আমি মনে করি আগামী ৭ তারিখের নির্বাচনে প্রচুর ভোটার হাজির হবেন। সে কারণে আমরা অনুরোধ করেছি বুথের সংখ্যা যেন বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এখানে প্রতিবারই ভালো ভোট পড়ে।

আরও পড়ুন>> ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাবার সংগ্রাম চলমান রাখবো’

জাগো নিউজ: দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ভোটে অংশ নিচ্ছে না। এর প্রভাবে ভোট কম পড়তে পারে বলে আশঙ্কা হচ্ছে। আপনি কী মনে করেন?

নসরুল হামিদ বিপু: কেরানীগঞ্জের এ আসনে ছয়জন প্রার্থী রয়েছেন। সুতরাং, কোন দল নির্বাচনে এলো বা না এলো সেটা কোনো বিষয় নয়। ভোটারদের কাছে একটা বিষয়ই ম্যাটার করে কে তাদের জন্য ভালো কাজ করবে। যে দল আসেনি তারাই বলতে পারবে তারা কেন এলো না। তবে কেউ তো বসে নেই। ঘরে ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে সবাই বলবে আমরা ভোট দিতে যাবো। আমি নিশ্চিত বলতে পারি কেরানীগঞ্জের সবাই যাবে ভোট দিতে। কোন দলে ভোট দেবে সেটা তাদের ব্যাপার। আমরা আশাবাদী বিগত দিনগুলোর মতো এবারও এখানে নৌকা মার্কা পাস করবে।

জাগো নিউজ: নারী ভোটাররা সংঘর্ষের ভয়ে ভোট দিতে যান না, তাদের সংঘাতহীন ভোটের বিষয়ে কোনো আশ্বাস দেবেন কি না?

নসরুল হামিদ বিপু: সবচেয়ে বড় বিষয় হলো এবার শত শত নারী রাস্তায় নেমে এসেছেন। তারা বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছেন নিজের ইচ্ছায়। নতুন ভোটাররা কারও জন্য বসে নেই। তরুণ ভোটার ও নারীদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। আমরা আশাবাদী যে আমাদের তরুণরা সচেতন। তাদের যে পবিত্র আমানত ভোট সে ব্যাপারে তারা সচেতন। আশা করছি ৭ জানুয়ারি সবাই মিলে ভোট দিতে যাবে।

জাগো নিউজ: তরুণরা কেন আপনাকে ভোট দেবে, তাদের জন্য আপনার অবদান কি?

নসরুল হামিদ বিপু: ২০০১ সাল থেকে আমি নির্বাচন করছি। তখন কেরানীগঞ্জ অনেক বড় ছিল, সাভারের ওপার পর্যন্ত। তখন আমি পরাজিত হই। তারপর ২০০৮ সালে আমি আবার জিতেছি। ২০১৪ ও ১৮-তেও আমি জয়লাভ করি।

আরও পড়ুন>> ‘গণসংযোগে বের হলে মানুষ বলে আপনি তো পাস’

এখানে নির্বাচনে আমরা অনেক আগেই নেমে যাই। আমি প্রতিবারই যখন মনোনয়ন চাই তখন একক প্রার্থী হিসেবেই মনোনয়ন পাই। এটি নিয়ে আমার পাঁচবার নির্বাচন হবে। তরুণরা এখানে খুবই অ্যাকটিভ। তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তা করে। আমাদের চেয়ে তরুণরা এখন বেশি চিন্তা করে। কিছুক্ষণ আগে একটি বৈঠক করলাম তারা বললো ‘আমাদের কম্পিউটার ল্যাব লাগবে, আমাদের কলেজ আরও ভালো হওয়া দরকার, আমাদের খেলার মাঠ লাগবে, লাইব্রেরি লাগবে, মেয়েদের ভালো কোচিং লাগবে।’ তাদের চাওয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন।

jagonews24

অনেকে বলছে আমাদের ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট দরকার। খুবই স্মার্টলি তারা কথা বলছে। আমরা ভাগ্যবান প্রধানমন্ত্রী এখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস করে দিচ্ছেন প্রায় ছয়শ বিঘা জমিতে। নতুন ক্যাম্পাসের কাজ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের এখানে আইসিটি পার্ক হচ্ছে। সেটির নাম দেওয়া হয়েছে নলেজ পার্ক। বিভিন্ন ফ্লোরে আমরা ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের জন্য জায়গা রাখবো। কম্পিউটার ট্রেনিং থেকে শুরু করে অন্য সব ট্রেনিংয়ের বিষয়েও আমরা ব্যবস্থা রাখবো।

কেরানীগঞ্জের মানুষ সন্ত্রাসকে প্রত্যাখ্যান করেছে ২০০৮ সালের নির্বাচনে। এক সময় কেরানীগঞ্জ সন্ত্রাসের জনপথ ছিল, বলা হতো বাতির নিচে অন্ধকার। এখানে দিনে ১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকতো না। সেগুলো এখন চলে গেছে। আমরা এই দেশটাকে আধুনিক দেশ বানাতে চাই।

এখানে প্রতিটি ইউনিয়নে লাইব্রেরি করছি। জিঞ্জিরায় গেলে দেখবেন কালচারাল সেন্টার, সেটি বাংলাদেশের বিখ্যাত আর্কিটেক্ট ডিজাইন করেছেন। নাচ-গানসহ বিভিন্ন বিষয়ে এখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। গত ১৫ বছরে এখানে অন্যরকম আকার ধারণ করেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৮ সাল থেকে আমরা খুব পরিকল্পিতভাবে কেরানীগঞ্জ নিয়ে কাজ করেছি। তরুণরা সেটি দেখেছে। তারা আমাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে।

যেখানেই যাই আমরা সেখানেই তরুণদের নিয়ে বসি। আমাদের এখানে যে মাঠ করা হয়েছে, আমার মনে হয় না বাংলাদেশের কোনো ইউনিয়নে এমন মাঠ আছে। এখানে ফার্স্ট ডিভিশনের খেলা হয়। আমাদের এখানে টার্ফ দিয়ে আমরা মাঠ তৈরি করেছি। রাতেও সেখানে খেলা হয়। এখানে খেলাধুলার একটি বড় জায়গা তৈরি করেছি। আগে এখানে ২৫ শতাংশ লেখাপড়া করতো না, এখন কেরানীগঞ্জে ৮৫ শতাংশের ওপর পাস করে। এটি অনেক বড় অর্জন বলে আমি মনে করি।

আরও পড়ুন>> ‘বিদেশি চাপ আমরা কেয়ার করি না’

শিক্ষা, খেলাধুলা ও শান্তি-শৃঙ্খলার দিক থেকে কেরানীগঞ্জে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। এটাই আসলে নতুন ভোটাররা চায়। এ কারণে তারা চায় যেন এর ধারাবাহিকতা থাকে। তারা বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগকে ভোটটি দিলে এ ধারাবাহিকতা থাকবে।

জাগো নিউজ: কেরানীগঞ্জের প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদটি জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেয়েছে, প্রখ্যাত স্থপতি দিয়ে আপনি সংস্কারের পর এ অর্জন এসেছে। এ বিষয়ে জানতে চাই?

নসরুল হামিদ বিপু: আমরা তো পুরোনো সঙ্গে নিয়েই কাজ করবো। আমরা নতুনের কথা বলবো পুরোনোকে নিয়ে। এখন অনেক জায়গায় অনেকে পুরোনো স্মৃতি, পুরোনো সব বিল্ডিং ভেঙে ফেলতে চায়। কিন্তু সেগুলো তো আমাদের ঐতিহ্য। আমাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। এটা প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো মসজিদ। আমাদের পারিবারিকভাবে মসজিদটি তৈরি। পরিবারের যেসব সদস্য সেসময় ছিলেন তারা তৈরি করেছেন। এটাকে রেখে আমরা পাশে নতুন মসজিদ তৈরি করেছি। সবাই কিন্তু উৎসাহী হয়েছে। এখন সব মসজিদে এসি লাগায়, কিন্তু আমাদের এখানে কোনো এসি নেই। সেখানে এসির প্রয়োজন হয় না।

আমাদের পুরোনো মসজিদটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। সৌদির অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে নতুন মসজিদটিও। বিশ্বের ষাটটি সবচেয়ে সুন্দর মসজিদের মধ্যে আমাদের এই মসজিদটি স্থান করে নিয়েছে। বাদশাহ ফয়সাল ট্রাস্ট থেকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। আমাদের রাষ্ট্রদূত সৌদি থেকে পুরস্কারটি নিয়েছিলেন।

জাগো নিউজ: প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আপনি কতটা সফল?

নসরুল হামিদ বিপু: আমি কতটা সফল সেটি যারা আমার সহযোগিতা পেয়েছেন তারা বলতে পারবেন। আমি তো নিজে সেটি বলতে পারবো না। তবে আমি একটি জিনিস মনে করি যে কর্তব্য আমাকে দেওয়া হয়েছিল সেটি আমি পালন করার চেষ্টা করেছি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। আমার দিক থেকে যথেষ্ট ম্যাচিউরড হয়েছি। এই সময়ে আমাকে প্রচণ্ড পড়ালেখা করতে হয়েছে। সেজন্য আমি অনেক কিছু পেরেছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওনা। আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে সেটি অনেক বড় সম্পদ আমার জন্য। যারা আমাদের গ্রাহক এবং যারা আমাদের কাছ থেকে সেবা নিয়েছেন তারা বলতে পারবেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় কতটা সফল।

জাগো নিউজ: ভোট সামনে রেখে ভোটারদের প্রতি আপনার কী আহ্বান থাকবে?

নসরুল হামিদ বিপু: আমি একটা কথা বলতে চাই। কেরানীগঞ্জের মানুষ সন্ত্রাসকে প্রত্যাখ্যান করেছে ২০০৮ সালের নির্বাচনে। এক সময় কেরানীগঞ্জ সন্ত্রাসের জনপথ ছিল। এক সময় বলা হতো বাতির নিচে অন্ধকার। এখানে দিনে ১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকতো না। সেগুলো এখন চলে গেছে। আমরা এই দেশটাকে আধুনিক দেশ বানাতে চাই। আধুনিক কেরানীগঞ্জকে স্মার্ট বাংলাদেশের একটি অংশ করতে চাই। এবং এখানকার সবার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। কেউ হয়তো ব্যবসা করবেন তার একটি পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। সেই চেষ্টাই হচ্ছে। যারা একটা চাকরি করবেন তাদের জন্য লেখাপড়ার ব্যবস্থা যাতে থাকে, তারা যেন ভালো চাকরি পায়। যদি আমরা এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই তাহলে ভোটারের কাছে আহ্বান থাকবে ৭ তারিখ ভোট দিয়ে নৌকা মার্কাকে জয়যুক্ত করুন।

আইএইচআর/এএসএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।