‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাবার সংগ্রাম চলমান রাখবো’

মো. নাহিদ হাসান
মো. নাহিদ হাসান মো. নাহিদ হাসান , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:০২ এএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩

হাজী মো. সেলিমের জ্যেষ্ঠ পুত্র মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিম। ইউনির্ভাসিটি অব লন্ডন থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। এখন রাজনীতিতে সক্রিয়। বাবার আসন ঢাকা-৭ থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নিজের রাজনীতিতে আসা, নির্বাচন, বাবার রাজনীতির হাল ধরলেন কি না- এসব বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. নাহিদ হাসান।

জাগো নিউজ: এবারই প্রথম প্রার্থী হয়েছেন। যদিও এর আগে আপনার বাবার সঙ্গে বিভিন্ন নির্বাচনে প্রচারণায় ছিলেন। এবারের অভিজ্ঞতা কেমন?

মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিম: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি এ আসনের সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সেই সুবাদে মহানগর, থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ভালোভাবে জানেন আমার কার্যক্রম কেমন। নেতাকর্মীদের সহায়তায় সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং আমার বাবার বিভিন্ন কাজকর্মে সহায়তা করতাম। বাবার বাকশক্তিতে যখন একটু সমস্যা হয় তখন আমি বাবার কণ্ঠস্বর হিসেবে বাবার কথাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতাম এবং মানুষের কথাগুলি বাবার কাছে পৌঁছে দিতাম। যাতে মানুষ সুবিধাবঞ্চিত না হয়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজে প্রার্থী হয়ে আমি অসাধারণ সাড়া পাচ্ছি। যেহেতু আমি একজন তরুণ সেহেতু তরুণদের আমি পাশে পাচ্ছি। আমার বাবা দীর্ঘদিনের সংসদ সদস্য। উনি শান্তির পক্ষে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। আমার বাবা ১৯৯৬ সালে নৌকাকে বিজয়ী করেছেন এই আসন থেকে। পরবর্তীসময়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হয়ে দলমত নির্বিশেষে সবার ভোটে জয়লাভ করেছেন। সেক্ষেত্রে ওনার একটি নিজস্ব ভোট ব্যাংক আছে এবং আওয়ামী লীগেরও একটি ভোট ব্যাংক আছে। আমিও দলমত নির্বিশেষে সবার কাছ থেকে সাড়া পাচ্ছি।

জাগো নিউজ: আপনি এর আগে বলেছেন আওয়ামী লীগে আপনার কোনো পদ-পদবি ছিল না। নির্বাচনে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে কতটা সহযোগিতা পাচ্ছেন?

মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিম: এ আসনে অনেক অভিজ্ঞ, পুরোনো এবং দুর্দিনে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার মতো নেতা রয়েছেন। তারা সব সময় তাদের স্নেহ-ভালোবাসায় আমাকে রেখেছেন। আওয়ামী লীগের একটি দুর্গ ঢাকা-৭ আসন। এ আসন থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালে নির্বাচন করেছিলেন। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের এ আসনটিতে ৪০০ বছরের ব্যবসা-বাণিজ্যের ইতিহাস রয়েছে। এখানে মোগলটুলিতে আওয়ামী লীগের প্রথম কার্যালয় ছিল। এটি পাইকারি ব্যবসার একটি এলাকা। এখানকার মানুষ চায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসীমুক্ত এলাকা থাকবে। শান্তিতে যার যার ধর্ম পালন করবে।

এই এলাকার মানুষের শেখ হাসিনার ওপর আস্থা আছে, আমার বাবা হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ওপর সমর্থন আছে, ভালোবাসা আছে। সেই সুনামকে কাজে লাগিয়ে আমি সমস্ত শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। সবাই আমার পাশে আছে।

বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের এ আসনটিতে ৪০০ বছরের ব্যবসা-বাণিজ্যের ইতিহাস রয়েছে। এখানে মোগলটুলিতে আওয়ামী লীগের প্রথম কার্যালয় ছিল। এটি পাইকারি ব্যবসার একটি এলাকা। এখানকার মানুষ চায় চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসীমুক্ত এলাকা থাকবে। শান্তিতে যার যার ধর্ম পালন করবে।

জাগো নিউজ: ভোটারদের কেন্দ্রে আনা কতটা চ্যালেঞ্জ মনে করছেন?

মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিম: আমি মনে করছি ডেফিনেটলি এটা আমার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। যেহেতু এখানে ৫০ শতাংশ নারী ভোটার আছে, তরুণ ভোটার আছে- এদিক থেকে আমরা এগিয়ে আছি। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ যে উন্নয়ন করেছে তার ছোঁয়া ঢাকা-৭ আসনে পৌঁছেছে। মানুষ আগুন সন্ত্রাসের রাজনীতি চায় না, মানুষ চায় শান্তি।

আমাদের আন্দোলনের শুরুটাই ছিল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, শান্তির পক্ষে। আমার বাবার সে সংগ্রামকে আমি চলমান রাখবো। আমি সবাইকে বলি যে, পুরান ঢাকাকে নিয়ে একটি নতুন স্বপ্ন দেখবো। যে স্বপ্নটা সব পেশাজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে নাগরিক সুবিধা বাড়াবে।

জাগো নিউজ: আপনাদের পরিবার নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ বরাবরই থাকে। রাজনীতির যোগ দিয়ে বাবার রাজনীতির হাল ধরলেন কি না?

মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিম: আমি আওয়ামী পরিবারের সন্তান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করা একটি ডিফিকাল্ট জিনিস। রাজনৈতিক শিক্ষাটা কোনো বইয়ে পাতায় পাওয়া যায় না। কীভাবে মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়, মানুষের ভাষা বুঝতে হয়, মানুষের সুখে-দুঃখে কীভাবে পাশে থাকতে হয়, বয়স্কদের কীভাবে সম্মান করতে হয় এগুলো বাবার কাছ থেকে শিখেছি।

আমার কিন্তু কোনো পদ-পদবি ছিল না। শেখ হাসিনা আমাকে সুযোগ করে দিয়েছেন। উনি কিন্তু ভালো জানেন, কাকে মনোনয়ন দিলে ঐক্য ঠিক রাখা যাবে। এখানে অসংখ্য পঞ্চায়েত আছে, ব্যবসায়িক মালিক সমিতি আছে, শক্তিশালী সামাজিক সংগঠন রয়েছে। সবকিছু মিলে এটাকে সামাজিক অথরিটি বলা হয়। আমি চেষ্টা করবো সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষা ও বাবার কণ্ঠস্বর হিসেবে সাধারণ মানুষের পাশে থাকার।

জাগো নিউজ: আপনার আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কতটা শক্তিশালী মনে করছেন?

মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিম: সংসদ নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা এর আগে আমার বাবার সঙ্গেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। জনগণের সাড়া তারা সেভাবে পাননি। এবারও তারা চেষ্টা করছেন। তাদের চেষ্টায় আমরা কোনো বাধা দিচ্ছি না। তারা তাদের প্রচারণা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তারা অভিযোগ করে থাকতে পারে সেগুলো নির্বাচন কমিশন যাচাই করবে। মানুষ যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে এটা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার স্লোগান। যারা নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করছে তারা সরকারে রলে জনগণের জন্য কী করবে সেটা কিন্তু তারা জানাচ্ছে না। তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে কিন্তু মানুষের কাছে প্রশ্ন রয়ে গেছে।

রাজনৈতিক শিক্ষাটা কোনো বইয়ে পাতায় পাওয়া যায় না। কীভাবে মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়, মানুষের ভাষা বুঝতে হয়, মানুষের সুখে-দুঃখে কীভাবে পাশে থাকতে হয়, বয়স্কদের কীভাবে সম্মান করতে হয় এগুলো বাবার কাছ থেকে শিখেছি।

জাগো নিউজ: আপনি নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নে কী কাজ করতে চান?

মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিম: আমি নির্বাচিত হলে এলাকার শিক্ষা, সামাজিক, অবকাঠামো, স্বাস্থ্য ও ব্যবসায়িক সুষ্ঠু পরিবেশের উন্নয়ন করবো। এলাকায় সরকারিভাবে বিশেষায়িত কারিগরি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ স্থাপন করবো। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটার পর্যন্ত শব্দ দূষণমুক্ত এলাকা ঘোষণা করবো।

বেকার যুব সম্প্রদায়ের জন্য আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ বাসস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিরাপদ বিদ্যুৎ, গ্যাস লাইন ও অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নতিকরণ, পয়ঃনিষ্কাশন ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা, কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা জোরদারসহ আধুনিক ও নিরাপদ ব্যবসার পরিবেশ গড়ে তোলা হবে। আমি আশা করি জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবে।

এনএস/এএসএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।