‘বিদেশি চাপ আমরা কেয়ার করি না’

সালাহ উদ্দিন জসিম
সালাহ উদ্দিন জসিম সালাহ উদ্দিন জসিম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৩৪ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩

মোহাম্মদ আলী আরাফাত। মোহাম্মদ এ আরাফাত নামে বেশি পরিচিত। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ কৌশলগত ব্যবস্থাপনা ও নীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সবশেষ গঠিত কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। গত বছর ঢাকা-১৭ আসনে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য হন।

মোহাম্মদ এ আরাফাত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনী অভিজ্ঞতা, জনগণের সাড়া এবং দেশি ও আন্তর্জাতিক নানা প্রতিকূলতা নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। একান্ত আলাপে জানান, তিনি দেশের নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি ও আন্দোলনকে স্বাগত জানান। তবে নাশকতা বা অপরাধকে অপরাধ হিসেবেই দেখেন, অপরাধীকে রাজনৈতিক কর্মী বলতে নারাজ। বিদেশি চাপকে কেয়ার করেন না তিনি। স্বাধীন সার্বভৌম দেশ তার নীতি ও পন্থা অনুযায়ীই চলবে বলে মনে করেন।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সালাহ উদ্দিন জসিম।

জাগো নিউজ: আপনি শিক্ষক ও গবেষক। রাজনীতিতে এসে কেমন লাগছে?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: রাজনীতিতে সব সময় ছিলাম আমি। নতুন করে আসিনি। আপনারা যেটা দেখছেন, সেই ফরম্যাটে হয়তো নতুন করে এসেছি। শিক্ষকতার সঙ্গে রাজনীতির একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে। আমি শিক্ষকতাকে শুধু পেশা হিসেবে নেইনি, এটাকে এক ধরনের কমিটমেন্ট হিসেবে নিয়েছি। শিক্ষকতার সঙ্গে সঙ্গে আমি কিন্তু বিভিন্ন আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে যে আন্দোলন হয়েছে, তার সঙ্গে ছিলাম। বাংলাদেশকে ঘিরে আমার একটা চিন্তা আছে। যে কারণে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকার পরও ফিরে এসেছি।

আরও পড়ুন>> ‘আমেরিকা বাংলাদেশে একটি পুতুল সরকার বসাতে চেয়েছে’

২০০৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসি। তখন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায়। এরপর এলো ওয়ান/ইলেভেন। পুরো সময়টাই কিন্তু আমি এখানে ছিলাম। সুচিন্তা ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছি। গোটা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়িয়েছি। তরুণদের সম্পৃক্ত করেছি। মাদরাসায় কাজ করেছি। মাদরাসাভিত্তিক কমিউনিটির সঙ্গে মূল ধারার গ্যাপ কেন তা বোঝার চেষ্টা করেছি। এ কাজগুলো তো রাজনীতিরই অংশ। মৌলিক জায়গা থেকে এ কাজগুলো করেছি।

আমি আসলে প্রতিপক্ষ কে আছে, দুর্বল না সবল, সেগুলো নিয়ে ভাবি না। আমি নির্বাচনে প্রতিপক্ষ নিয়ে কটু কথা বলি না। আক্রমণ করি না। এ নিয়ে সময় ব্যয় করি না। নৌকার প্রচুর ভোটার আছে। তাদের ব্যালটে আনাই আমার কাজ। এটাই করছি।

আমি কখনো চিন্তা করিনি, এমপি নির্বাচন করবো বা পদ নিয়ে কোনো একটা কিছু করতে হবে। আমি মৌলিক জায়গা থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মূল রাজনীতিটা সব সময় করে গেছি। সেটারই একটা স্ট্যান্ডার্ড ভার্সন এখন। আরও মানুষের কাছাকাছি এসে কাজ করা। এটা নতুন কিছু না আসলে। আপনাদের কাছে নতুন কারণ আপনারা আমার আগের কাজগুলো দেখেননি। এখন দেখছেন, সামনে আসছে। তাই নতুন হতে পারে।

জাগো নিউজ: অল্প সময় এখানে এসেছেন, আপনার বড় চ্যালেঞ্জ ছিল দলীয় নেতাকর্মীদের গুছিয়ে এক করা। সেটি কতটুকু পেরেছেন?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: এখানে আওয়ামী লীগের সংগঠনগুলোর মধ্যে সবাই মোটামুটি ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছে। যেটা হয়েছে, অল্প সময় পাওয়ায় সবার কাছে পৌঁছাতে পারিনি। তবে অনেক জায়গায় পৌঁছে গেছি। স্বল্পসময়ে যতটুকু সম্ভব তার চেয়ে কিছুটা বেশিও করেছি। কারণ আমি একাগ্রভাবে এটা করার চেষ্টা করেছি। আরেকটু সময় পেলে ভোটারদের সবাইকে হয়তো টাচ করতে পারতাম। সেটা করতে পারলে আমার অন্য রকম বিষয় তৈরি হতো।

ছবি: রাকিব হাসান

এ নির্বাচন নিয়ে আর কোনো রকম চিন্তাই করতে হতো না। এখন ট্রাডিশনাল রাজনীতির যে ব্যাপার; নির্বাচনের আগে প্রচার-প্রচারণা, জমজমাট একটা অবস্থা, হইচই। আমি মনে করি, সারাবছর যদি আমি সুন্দর করে পড়াশোনা করি, তাহলে পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে সমস্যা হয় না। পরীক্ষার আগেরদিন রাতে অনেক বেশি পড়ার চেয়ে সারাবছর পড়তে চাই আমি। সারাবছর যদি ভোটারদের চাহিদা ও প্রয়োজন, সমস্যার সমাধান যদি দিয়ে যেতে পারি, প্রতিনিধি হিসেবে তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারি তাহলে আমার ধারণা তারা আসবে, ভোট দেবে। সেই সুযোগটা আমি পাইনি। আমি বিশ্বাস করি, সামনের দিনে নির্বাচিত হলে সে কাজ করবো। তবে নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারেও কোনো দুশ্চিন্তা নেই। কারণ নৌকার প্রচুর ভোট এখানে।

জাগো নিউজ: প্রচার-প্রচারণায় কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। যেখানে যাচ্ছি, সেখানেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাংগঠনিকভাবে সবাই আসছেন। সাধারণ মানুষও আসছে। আমি যেখানে হাঁটছি, আমার সঙ্গে হাঁটছে। তারা বিভিন্নভাবে সাড়া দিচ্ছেন। যুক্ত হচ্ছেন আমাদের প্রচার-প্রচারণায়।

আরও পড়ুন>> ‘সাকিবের মাধ্যমে নেত্রীকে নৌকা উপহার দিতে চাই’

জাগো নিউজ: সারাদেশে আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ কেন্দ্রে ভোটার নিয়ে আসা। অভিজাত গুলশান-বনানী এলাকায় আপনার জন্য এ চ্যালেঞ্জ আরও বেশি। কীভাবে অতিক্রম করবেন?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: দৃশ্যত, আসনটির একটা অংশে গুলশান, বনানী, বারিধারা। এখানে ৪৮ হাজারের মতো ভোট আছে। তিন লাখ ভোটারের অংশ বেশি নয়। ভোট বেশি ১৫ ও ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানকার বেশিরভাগ জায়গায় নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস। তারা কিন্তু কেন্দ্রে আসবে। চ্যালেঞ্জ যেটা আসলেই বেশি, সেটা হলো ৩ লাখ ১৮ হাজার ভোটার আছে বলা হয়। আসলে ৪০ শতাংশ ভোটার কিন্তু নেই। তারা মাইগ্রেট করে অন্য জায়গায় চলে গেছে। এই ভোটারদের এখানে পাওয়া যায় না। তাদের আনবো কীভাবে? যারা আছে তাদের মধ্য থেকেই আনতে হবে। মানুষ কিন্তু অনেক আছে, অন্য জায়গা থেকে আসছে। তারা আবার অন্য জায়গার ভোটার। সুতরাং, আমার কিন্তু ২ লাখ ভোটার থেকে হিসাব করতে হবে। এ সমস্যাটা বাংলাদেশের সব জায়গায় আছে। কিন্তু এখানে একটু বেশি।

বাংলাদেশ কারও দয়ায় কোনো কিছু প্রডিউস করে না, কোথাও বিক্রিও করে না। মূল্যে প্রতিযোগিতা করে আমাদের মার্কেট তৈরি হয়েছে। কাজেই এটা একতরফা নয়। অতএব, আমরাও তো বলতে পারি- আমরা বিক্রি করা বন্ধ করে দেবো। তাহলে কি ওরা কাপড় না পরে থাকবে? নাকি বেশি পয়সা দিয়ে অন্য জায়গা থেকে কিনবে?

জাগো নিউজ: আমরা দেখছি, এখানে আপনার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো প্রার্থী নেই। আপনার কী মনে হয়, ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে বা হবে?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: আমরা চেয়েছিলাম সবাই আসুক। ভোটে অংশগ্রহণ করুক। বিএনপিকেও চেয়েছি। কেউ যদি আগে থেকেই পরাজয়ের ভয়ে পালিয়ে যায় তাহলে আমার কিছু করার নেই। আমরা দরজা খোলা রেখেছিলাম। জাতীয় পার্টির প্রার্থীদেরও স্বাগত জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা যদি চলে যায়, এখানে আমার তো কিছু করার নেই। আমি আসলে প্রতিপক্ষ কে আছে, দুর্বল না সবল, সেগুলো নিয়ে ভাবি না। আমি নির্বাচনে প্রতিপক্ষ নিয়ে কটু কথা বলি না। আক্রমণ করি না। এ নিয়ে সময় ব্যয় করি না। নৌকার প্রচুর ভোটার আছে। তাদের ব্যালটে আনাই আমার কাজ। এটাই করছি।

জাগো নিউজ: জনগণের জন্য আপনার প্রতিশ্রুতি কী? বা সামনের পরিকল্পনা কী?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: আমার নতুন কোনো প্রতিশ্রুতি থাকছে না। আমি গত উপ-নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে বুঝে গেছি, আসলে এখানকার জনগণের কোথায় কী লাগবে! তারা আমাকে বলেছেও। তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক নিবিড়ভাবে যোগাযোগ ছিল, আছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও বসেছি। তার ভিত্তিতে একটি পরিকল্পনাও করে ফেলেছি। ছোট ছোট কিছু কাজ শুরু করেছি। কিছু হয়ে গেছে। কিছু চলমান। আর বাকি কাজগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে করবো। নতুন কিছুই করছি না। যেটা তাদের দীর্ঘদিনের চাহিদা ছিল, যেমন- পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও রাস্তাঘাটের সমস্যা। পাশাপাশি বস্তিগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। এগুলো নিয়ে কিছু কাজ আমরা এগিয়ে রেখেছি। ওই কাজগুলো করবো।

ছবি: রাকিব হাসান

আরও পড়ুন>> ‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে কখনো ছোট করে দেখতে নেই’

জাগো নিউজ: নির্বাচন পরবর্তী আন্দোলন মোকাবিলায় প্রস্তুতি আছে কি না?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: তারা যদি সংঘাত-সহিংসতা বা নাশকতা করে, সেটার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে। যারা অপরাধ করবে তারা অপরাধী। তারা রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বিবেচিত হবে না। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তারা যদি দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পারে, তাহলে আমরা বুঝবো-জনগণ আমাদের সঙ্গে নেই, তাদের সঙ্গে আছে। এখন পর্যন্ত তো পারেনি। আমরা তো দেখছি জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। জনগণ উন্নয়ন অগ্রগতি ও নির্বাচনের পক্ষে আছে। কাজেই আমাদের ইতিবাচক রাজনীতিতে জনগণকে সঙ্গে রাখবো, জনগণের সঙ্গে থাকবো। আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে সবচেয়ে গভীর সম্পর্কিত দল। বাকি দলগুলোর ইনকিউবেটরে জন্ম হয়েছে, কিংস পার্টি হিসেবে।

জাগো নিউজ: দেশীয় আন্দোলনের পাশাপাশি বৈদেশিক একটা চাপ আছে। নানা ধরনের স্যাংশন্সের কথা শোনা যাচ্ছে। এটি মোকাবিলা করবেন কীভাবে?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: দুই বছর ধরে আরও কত এ ধরনের গুজব শুনেছেন না? হয়েছে কিছু? এই ভিসানীতির কোনো প্রভাব আছে? এটার কোনো মূল্য আছে? এটা নিয়ে কারও মধ্যে কোনো মাথাব্যথা আছে? কাজেই এগুলো আমরা কেয়ার করি না। বাংলাদেশ কারও দয়ায় কোনো কিছু প্রডিউস করে না, কোথাও বিক্রিও করে না। মূল্যে প্রতিযোগিতা করে আমাদের মার্কেট তৈরি হয়েছে। কাজেই এটা একতরফা নয়। অতএব, আমরাও তো বলতে পারি- আমরা বিক্রি করা বন্ধ করে দেবো। তাহলে কি ওরা কাপড় না পরে থাকবে? নাকি বেশি পয়সা দিয়ে অন্য জায়গা থেকে কিনবে?

এগুলো আসলে ইরেশনাল কথাবার্তা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র আওয়ামী লীগের চেয়ে ওইসব দেশের লোকেরা ভালো বোঝে? এটা কি বিশ্বাস করতে হবে? যে দল এদেশের স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দিয়েছে, গত ১৫ বছরে দরিদ্রতা হ্রাস করেছে, দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাচ্ছে, সেই দলটিকে দেশ নিয়ে অন্যদের লেকচার শুনতে হবে? মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি দেখালে যা হয়, সেটা অনেকে চেষ্টা করছে। আমরা কেয়ার করি না।

এসইউজে/এএসএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।