‘সাকিবের মাধ্যমে নেত্রীকে নৌকা উপহার দিতে চাই’
সাইফুজ্জামান শিখর। মাগুরা-১ আসন থেকে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার বাবা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান জাতীয় সংসদের চারবারের সংসদ সদস্য। তার বোন কামরুল লায়লা জলি জাতীয় সংসদের সাবেক এমপি।
মাগুরার ছেলে শিখর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১০ বছর ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস)। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন শেখর। তার স্থলে জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে নৌকার প্রার্থী করা হয়েছে।
মাগুরা-১ আসনের নির্বাচনী হালচাল ও তার অভিজ্ঞতা জানতে কথা হয় জাগো নিউজের। একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছর আগে আমার হাতে নৌকা তুলে দিয়েছেন, আমি সেই নৌকাটি সাকিবের মাধ্যমে নেত্রীর কাছে উপহার দিতে চাই।’
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সালাহ উদ্দিন জসিম।
জাগো নিউজ: মাগুরা-১ আসনে মানুষের সমস্যা কী? ভোটাররা বলছেন উন্নয়ন হয়েছে অনেক। তবে তা চাহিদা অনুযায়ী হয়নি। কৃষিনির্ভর কলকারখানা হয়নি…
সাইফুজ্জামান শিখর: গত পাঁচ বছরে মাগুরার মানুষ যা কল্পনা করেনি তারচেয়েও অনেক বেশি উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে মাগুরার উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সে দায়িত্ব থেকেই তিনি আমাদের মেডিকেল কলেজ দিয়েছেন, রেললাইন দিয়েছেন, ১০০ শয্যার হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করেছেন, একটা আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম আমাদের আছে, শেখ কামাল আইটি পার্ক দিয়েছেন, গড়াই নদীর ওপর সেতু হচ্ছে। পল্লি অবকাঠামোগত উন্নয়নের শেষ নেই।
মনোনয়ন বোর্ড হয়তো মনে করেছে আমাকে বাদ দিয়ে সাকিবকে দেবেন, তাই দিয়েছেন। এটা সমস্যা নয়। প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছর আগে আমার হাতে নৌকা তুলে দিয়েছেন, আমি সেই নৌকাটি সাকিবের মাধ্যমে নেত্রীর কাছে উপহার দিতে চাই। এই দেওয়ার মধ্য দিয়ে মাগুরার মানুষের পাশে থাকার জন্য আমার যতখানি কর্তব্য আছে, আমি পালন করবো।
আরও পড়ুন>> ‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে কখনো ছোট করে দেখতে নেই’
মাগুরার মানুষ সবচেয়ে বড় যে জিনিস পেয়েছে, সেটি হচ্ছে- নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একসময় এই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ চরমপন্থি রাজনীতিবিদদের হাতে জিম্মি ছিল। আমরা দেখেছি, ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা প্রকাশ্য দিবালোকে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের ধরে নিয়ে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়েছে। এমন কোনো থানা নেই যার পাশে লুট হয়নি। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের সদিচ্ছায় আইনের শাসন কায়েম করেছি। মানুষকে ভালো রাখার চেষ্টা করেছি।
আসলে এ দেশের মানুষ শত দিলেও সন্তুষ্ট হবে না। কৃষিপ্রধান জেলা এটি। কৃষির ওপর ভিত্তি করে কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান বামপন্থি রাজনীতিবিদরা দাবি করেন। কৃষিনির্ভর শিল্পকারখানা বলতে কী বোঝায়! মাগুরায় দুটো জুটমিল আছে। একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি আছে, সেখানে প্রায় ১৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মাগুরায় টেক্সটাইল মিল বন্ধ ছিল, চালু করেছি। সারাদেশে যে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে, সেক্ষেত্রে মাগুরা অনেক এগিয়ে গেছে। বৈশ্বিক আর্থিক সমস্যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। সেটার কারণে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজটা ধীরগতিতে এগোচ্ছে।
আমরা যেটা মনে করি, মাগুরার অর্থনৈতিক অঞ্চলটি প্রথম দিকেই আছে। জায়গা নির্বাচন হয়েছে, সবকিছু ওকে। আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠলেই প্রথম দিকে এ কাজটি হবে। এতে প্রায় ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি হবে। যদি এটা হয়ে যায়, তাহলে মাগুরার মানুষের আর কোনো চাহিদা থাকে না।
আরও পড়ুন>> প্রতিশ্রুত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পাচ্ছি না
এর মধ্যে পাইপলাইনে আছে, যশোর থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত ছয় লেনের রাস্তা- সেটা কাটাখালী টু রামনগর আমরা বাইপাস করবো। পল্লীবিদ্যুৎ থেকে ইটখোলা পর্যন্ত আরেকটি কাজ শুরু হয়েছে। মাগুরায় চার লেনের রাস্তা এরই মধ্যে হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ আছে। মাগুরা জেলা প্রথম দুটি জেলার একটি, যেখানে শতভাগ গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত করা হয়েছে। এই জেলার সব গৃহহীন ও ভূমিহীনকে সেমিপাকা ঘরসহ বাড়ি করে দেওয়া হয়েছে। সব ইউনিয়ন থেকে গ্রামে যাওয়ার রাস্তা পাকা করা হয়েছে।
১৫ বছর আমরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছি, এর মধ্যে এমন কোনো কাজ করিনি যে মাগুরার মানুষ আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। আমরা মানুষকে ভালো রেখেছি। সুতরাং আমি বিশ্বাস করি, যতদিন এই পৃথিবী থাকবে, মাগুরার জনগণ আওয়ামী লীগের পাশে থাকবে।
জাগো নিউজ: এত উন্নয়নের পরও কেন মনোনয়ন পেলেন না?
সাইফুজ্জামান শিখর: এটা নির্ভর করে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের ওপর। আমি আমার কাজটুকু করেছি। আমার ওপর যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, আমি সেটা পালন করেছি। মানুষকে ভালো রাখার চেষ্টা করেছি। মনোনয়ন বোর্ড হয়তো মনে করেছে আমাকে বাদ দিয়ে সাকিবকে দেবেন, তাই দিয়েছেন। এটা সমস্যা নয়। প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছর আগে আমার হাতে নৌকা তুলে দিয়েছেন, আমি সেই নৌকাটি সাকিবের মাধ্যমে নেত্রীর কাছে উপহার দিতে চাই। এই দেওয়ার মধ্য দিয়ে মাগুরার মানুষের পাশে থাকার জন্য আমার যতখানি কর্তব্য আছে, আমি পালন করবো।
জাগো নিউজ: অনেকে বলেন রাজনীতি আসলে রাজনীতিবিদদের হাতে থাকছে না। আপনার এখানে রাজনীতির বাইরে থেকে সাকিবকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
আরও পড়ুন>>‘ভিক্ষাবৃত্তি করেই বামরা নৌকা প্রতীক নিয়েছে’
সাইফুজ্জামান শিখর: রাজনীতি আর নির্বাচন দুটো ভিন্ন জিনিস। রাজনীতি রাজনীতিবিদরাই করবেন। কিন্তু নির্বাচনে অনেক কৌশলগত কারণে বিভিন্নজনকে বা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে অ্যাকোমোডেট করতে হয়। হয়তো সে কারণেই মাগুরা-১ আসনটিতে বেছে নিয়েছেন রাজনীতির বাইরের কাউকে। ও রাজনীতি করতে আসছে, ক্রিকেটে যেমন ভালো করেছে, রাজনীতির মাঠেও হয়তো ভালো করবে। সুযোগ তো সৃষ্টি করে দিতে হবে।
জাগো নিউজ: আপনার পক্ষ থেকে শুভকামনা নিশ্চয় থাকবে?
সাইফুজ্জামান শিখর: সহযোগিতা, শুভকামনা সবই থাকবে।
জাগো নিউজ: আসনটি নৌকার জন্য ধরে রাখতে পারবেন কি না?
সাইফুজ্জামান শিখর: এ আসনটি জাতির পিতার হাতে গড়া মাগুরা আওয়ামী লীগ। উনি টুঙ্গিপাড়া থেকে বাইসাইকেলে মাগুরায় এসে আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করে গেছেন। এটা আমার পূর্ববর্তী প্রজন্মরা ধরে রেখে গেছেন। আমি আশা করি, এই ১৫ বছর আমরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছি, এর মধ্যে এমন কোনো কাজ করিনি যে মাগুরার মানুষ আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। আমরা মানুষকে ভালো রেখেছি। সুতরাং আমি বিশ্বাস করি, যতদিন এই পৃথিবী থাকবে, মাগুরার জনগণ আওয়ামী লীগের পাশে থাকবে।
জাগো নিউজ: যেহেতু মনোনয়ন পেলেন না। আগামী পাঁচ বছর কী করবেন?
সাইফুজ্জামান শিখর: পাঁচ বছর আমি রাজনীতিই করবো, মাগুরার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বা যদি সুযোগ হয় কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে, কাজ করবো। আপনি জানেন, একসময় আমি কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে ছিলাম। অত্যন্ত দুঃসময়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। সুতরাং রাজনীতির ভেতরেই থাকবো। প্রধানমন্ত্রী আমাকে যেখানে কাজে লাগাবেন, আমি সেখানে কাজ করতে প্রস্তুত।
এসইউজে/এএসএ/এমএস