বছরজুড়ে রওশন-জিএম কাদের দ্বন্দ্ব, শেষ মুহূর্তে ভোটে জাপা

সাইফুল হক মিঠু
সাইফুল হক মিঠু সাইফুল হক মিঠু
প্রকাশিত: ০৯:৪৪ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩

দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের সঙ্গে চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের দ্বন্দ্ব; জাতীয় নির্বাচনের আসন বণ্টন নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক আর শীর্ষ নেতাদের অসন্তোষ; বছরজুড়ে জাতীয় পার্টিতে (জাপা) এরকম নাটকীয়তার শেষ ছিল না। গত ২৭ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮৯টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে দলটি। তবে প্রার্থিতা প্রত্যাহার শুরু হলেও দল নির্বাচনে অংশ নেবে কি নেবে না, তার ঘোষণা আসছিল না।

এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে সংশয় ও ধোঁয়াশা বাড়ছিল। শেষ মুহূর্তে জাপা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে কি না, তেমন ভাবনাও উঁকি দিচ্ছিল জনমনে। তবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন গত ১৭ ডিসেম্বর শেষ বিকেলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়ে সারাদেশে ‘টক অব দ্য পলিটিক্স’ হয়ে ওঠে সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাতে গড়া দলটি।

ওইদিন আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দিয়ে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। দলের প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে ২৮৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে জাপা। আমরা নির্বাচনকে অংশগ্রহণ করবো। নির্বাচন যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতামূলক হয়, আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করে যাবো। এ নির্বাচন করার মাধ্যমে সব অপচেষ্টা দূর করে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে কাজ করে যাবো।

আরও পড়ুন: রওশনের আসন খালি, রাঙ্গা-রুস্তম-সাদ বাদ

দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর থেকেই ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে জাতীয় পার্টি। গুঞ্জন ওঠে, ৪০টি আসনে ছাড় চায় জাপা। যদিও তাতে রাজি হয়নি আওয়ামী লীগ। ১৭ ডিসেম্বর বিকেলে খবর আসে, আওয়ামী লীগ এবার জাপাকে ২৬টি আসনে ছাড় দিচ্ছে। এসব আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন।

আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। দলের প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে ২৮৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে জাপা। আমরা নির্বাচনকে অংশগ্রহণ করবো। নির্বাচন যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতামূলক হয়, আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করে যাবো। এ নির্বাচন করার মাধ্যমে সব অপচেষ্টা দূর করে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে কাজ করে যাবো

জাপা মহাসচিবের দাবি, এবার তারা কোনো জোট বা মহাজোটের অংশ হিসেবে নির্বাচন করছেন না। আর আসন সমঝোতাকে ‘কৌশল’ উল্লেখ করে বিষয়টি এড়িয়ে যায় জাতীয় পার্টি।

বছরজুড়ে রওশন-জিএম কাদের দ্বন্দ্ব, শেষ মুহূর্তে ভোটে জাপা

এ বিষয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, কিছু কিছু আসনে আমাদের অনেক সিনিয়র নেতা আছেন। এসব আসনে যারা নির্বাচন করেন বা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল হয়তোবা তাদের সঙ্গে আমাদের একটা সমঝোতা হয়েছে বা হবে এমন একটা অবস্থা আছে। আর যে কোনো আসনে নির্বাচনের বিষয়ে একটা টেকনিক থাকতে পারে। সেটা এখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলার সুযোগ নেই। আমাদের নিজস্ব কৌশল আছে, সেই কৌশলের কারণে আমরা সবকিছু বলছি না।

আরও পড়ুন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকি নেই

নানা নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে অবশেষে নির্বাচনে আসা জাতীয় পার্টি ২৯৪টি আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেয়। আপিল শেষে ২৮৩ আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী পায় দলটি।

সব হারালেন রওশন অনুসারীরা
এরশাদপত্নী রওশনের সঙ্গে এরশাদের ভাই জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিভক্তি বছরজুড়েই স্পষ্ট ছিল। গত বছর হঠাৎই রওশন কাউন্সিলের ঘোষণা দিলে দেবর-ভাবির সম্পর্কে চূড়ান্ত ফাটল দেখা দেয়। এ নিয়ে জলঘোলাও কম হয়নি। কাউন্সিল-কাণ্ডে দল থেকে বহিষ্কৃত হন মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ একাধিক নেতা। এরপর গত বছরের শেষ দিকে কাউন্সিল থেকে পিছু হটেন রওশন।

রওশন-কাদের দ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে আসে চলতি বছরের নভেম্বর মাসে। ২৮৯টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও সেখানে জায়গা হয়নি রওশন এরশাদ ও তার ছেলে সাদ এরশাদের।

রওশনের সঙ্গে এরশাদের ভাই জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিভক্তি বছরজুড়েই স্পষ্ট ছিল। গত বছর হঠাৎই রওশন কাউন্সিলের ঘোষণা দিলে দেবর-ভাবির সম্পর্কে চূড়ান্ত ফাটল দেখা দেয়। এ নিয়ে জলঘোলাও কম হয়নি। কাউন্সিল-কাণ্ডে দল থেকে বহিষ্কৃত হন মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ একাধিক নেতা। এরপর গত বছরের শেষ দিকে কাউন্সিল থেকে পিছু হটেন রওশন

বারবার পার্টি মহাসচিব বলেছেন, রওশন এরশাদ মনোনয়ন নিতে চাইলে বাসায় গিয়ে তা পৌঁছে দেওয়া হবে। রওশনকে সম্মানীয় ব্যক্তি উল্লেখ করে তার ময়মনসিংহ-৪ আসনটি খালি রাখা ও রওশনের কাছে দোয়া নিয়ে ভোটের প্রচার শুরুর কথাও বলেন চুন্নু।

রওশনের দাবি ছিল, পার্টি থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের অন্তত ১০টি আসন দিতে হবে। আলোচনা ও দেন দরবার না হওয়ায় রওশন-সাদকে মনোনয়ন দেয়নি জাতীয় পার্টি। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশও করেন রওশন। এবার এরশাদপুত্র সাদ এরশাদের সংসদীয় আসন (রংপুর-৩) থেকে নির্বাচন করছেন পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

আরও পড়ুন: ক্ষমতায় গেলে যা যা করবে জাপা

রওশনপন্থি দলের নেতারা বলছেন, গত বছর কাউন্সিল করতে পারলে তাদের এই দশা হতো না। জিএম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুর কৌশলের কাছে তারা পরাজিত। এখন রওশন এরশাদ দলের কোনো ক্ষমতা রাখেন না। চুন্নুও বলেছেন, রওশন দলের কেউ না।

রওশনের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ দাবি করেছেন, দলে ফের ভাঙনের সৃষ্টি করেছেন জিএম কাদের। জাপা চেয়ারম্যান রওশন ও সাদকে ভোট থেকে বাইরে রাখতে বাধ্য করেছেন।

বছরজুড়ে রওশন-জিএম কাদের দ্বন্দ্ব, শেষ মুহূর্তে ভোটে জাপা

মুখ খুলেননি জিএম কাদের
গত ১৪ নভেম্বরের পর থেকে গণমাধ্যম এড়িয়ে চলতে শুরু করেন জিএম কাদের। গত বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) পর্যন্ত তিনি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হননি। এর আগে গত ১৪ নভেম্বর দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভায় বক্তব্য দেন তিনি। ওই সভায় দলের অধিকাংশ সদস্য ক্ষমতাসীনদের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। উপস্থিত নেতাকর্মীদের সামনে সেদিন জিএম কাদের বলেছিলেন, নির্বাচনে যাওয়ার এখনো পরিবেশ তৈরি হয়নি। সুষ্ঠু পরিবেশ না হওয়ার আগে নির্বাচনে গেলে আমাদের ওপর স্যাংশনস আসার শঙ্কাও রয়েছে।

পরবর্তী সময়ে জিএম কাদেরের নীরবতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, প্রয়োজন ছাড়া পার্টি চেয়ারম্যানের কথা বলার দরকার নেই। এরমধ্যে অন্য কোনো উদ্দেশ্য বা ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই। এছাড়া চেয়ারম্যান আমাকে বলেছেন, তোমার সঙ্গে যেহেতু গণমাধ্যমকর্মীরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তুমিই কথা বলো।

আরও পড়ুন: জাপাকে ২৬ ও শরিকদের ৬টি আসন দিলো আওয়ামী লীগ

এসএম/এমকেআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।