‘সরকার ৭ জানুয়ারি নির্বাচন করতে পারবে বলে মনে করি না’

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫৮ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩

‘শাহজাহান ওমর নিজেই বলেছেন তিনি ২০২২ সালে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন। শাহজাহান বানরের পিঠা ভাগাভাগির টেনশনে থাকেননি। তিনি একবারে নৌকায় উঠেছেন। এই ঘুণপোকা চলে যাওয়ার কারণে বিএনপি আরও শক্তিশালী হয়েছে।’

আসন্ন নির্বাচন ও বিএনপির আন্দোলন নিয়ে জাগো নিউজের মুখোমুখি হয়ে একথা বলেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ: ২৮ অক্টোবর সমাবেশের পর বিএনপির আন্দোলনে ক্রমশই ভাটা পড়ছে। সরকার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্নের পথে। কী বলবেন এখনকার আন্দোলন নিয়ে অথবা দলের অনুসারীরাই বা কী প্রত্যাশা করবে?

ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা: আমি মনে করি বিএনপি আন্দোলনে শতভাগ সফল। সফল এ কারণে বলছি যে, আমাদের ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ ঘিরে সরকারের যে পরিকল্পনা তা বিভিন্ন সময় আওয়াজ দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব শাপলা চত্বর বানানো, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র তাপস সাহেব লগি-বৈঠা দিয়ে গণতন্ত্র রক্ষার কথা বলেছিলেন। দলের বড় নেতারা মোটা মোটা লাঠি নিয়ে মাঠে থাকার নির্দেশনা দেন।

আরও পড়ুন>>ঐকমত্যে না পৌঁছাতে পারলে পুরো জাতি খাদে পড়বে

অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের ২৮ অক্টোবরের আগে থেকেই গ্রেফতার শুরু হয়। পথে পথে তল্লাশি চালানো হয়। হোটেল, বাসাবাড়ি, মেসগুলোতে তল্লাশি করে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা যে ওই সমাবেশ ঘিরে সাঁড়াশি অভিযান চালাবে তা স্পষ্ট হচ্ছিল। আমরা যখন অতিশান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করে যাচ্ছিলাম, তখন হঠাৎ করে পুলিশ আমাদের ওপর গুলি চালায়। বিচারপতি ভবনে হামলা, পুলিশের গাড়িতে হামলা, পুলিশ হত্যার মতো নাটক সাজিয়ে পুরো দোষ বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা করে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপিকে একেবারে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।

জাগো নিউজ: ছত্রভঙ্গ তো হয়েছেও বটে?

রুমিন ফারহানা: মোটেও না। সরকার দোষ চাপিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের আটক করেছে বটে। কিন্তু এখন স্পষ্ট হয়েছে কেন নেতাদের আটক করা হয়েছে। আটক নেতাদের চাপ দিয়ে বিএনপি ভেঙে একটি অংশকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করছিল সরকার। সরকার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য চাপ দিয়েছে, ভয় দেখিয়েছে, হামলা-মামলা করেছে। কিন্তু পারেনি বিএনপিকে ভাঙতে।

দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে অন্য কোনো দেশের স্বার্থ রক্ষা করবে না বিএনপি। আমরা সমমর্যাদার ভিত্তিতে বন্ধুত্বে বিশ্বাসী। খালেদা জিয়া স্পষ্ট করে বলেছেন বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে, প্রভু নেই। আমরা কোনো দেশকে প্রভু মেনে রাজনীতি করতে আসিনি।

জাগো নিউজ: বিএনপির ভাঙন প্রশ্নে সরকার কিছুটা সফলও তো বটে। কেউ কেউ তো আওয়ামী লীগের নৌকায়ও উঠলো?

রুমিন ফারহানা: একদম না। প্রথমত আমি মনে করি, একজন-দুজন ব্যক্তির চলে যাওয়া মানে দল ভাঙা নয়। শমসের মবিন চলে গেছেন ২০১৫ সালে। তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছেন এবং খুব ভালো কিছু পাচ্ছেন না। শাহজাহান ওমর নিজেই বলেছেন তিনি ২০২২ সালে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন। শাহজাহান বানরের পিঠা ভাগাভাগির টেনশনে থাকেননি। তিনি একবারে নৌকায় উঠেছেন। এই ঘুণপোকা চলে যাওয়ার কারণে বিএনপি আরও শক্তিশালী হয়েছে।

জাগো নিউজ: ভাঙার সময় কি শেষ হয়ে গেছে মনে করছেন?
রুমিন ফারহানা: আমি মনে করি শেষ হয়ে গেছে। ১৭ বছর ধরে সরকার বিএনপিকে তছনছ করে যাচ্ছে। ভাঙতে পারেনি। বিএনপি চেয়ারপারসন পাঁচবছর ধরে কারাগারে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন দেশে আসতে পারছে না। আমাদের মহাসচিবকে বারবার আটক করা হয়েছে। শীর্ষ নেতাদের কাউকে স্বস্তিতে থাকতে দেওয়া হয়নি। ইউনিয়নের তৃণমূল নেতাকর্মীদের বাড়িতে থাকতে দেওয়া হয় না। পুকুর, ডোবা, ধানক্ষেতে রাত কাটাচ্ছে। তারা কেউ বিএনপি ছেড়ে যায়নি। তারা চাইলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাঁত করে রক্ষা পেতো। করেনি। ব্যবসা ছেড়ে শহরে এসে রিকশা চালায়। কিন্তু বিএনপি ছাড়েনি।

আরও পড়ুন>>‘ইবরাহিম সাহেব জামায়াতের কপালেও চুমু খেতেন’

জাগো নিউজ: আপনারা বলছেন, ধানক্ষেতে, পুকুর-ডোবায় পালিয়ে থেকেও রক্ষা পাচ্ছে না। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত ২০ হাজার নেতাকর্মী আটক হয়েছে বলে দাবি করছেন। পালিয়ে আটক হওয়ার চেয়ে রাজপথের আন্দোলন থেকে আটক হলে আরও সফল হতে পারতো বিএনপি…

রুমিন ফারহানা: তারা আন্দোলন থেকেই গ্রেফতার হচ্ছে। আমরা কি আন্দোলনের বাইরের কেউ?

সরকার ৭ জানুয়ারি নির্বাচন করতে পারবে বলে মনে করি না। প্রথমত, এটি কোনো নির্বাচন বলেই কেউ বিশ্বাস করে না। এটি নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি। জোটের শরিকরা প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থী তো বটেই, স্বতন্ত্র প্রার্থীকেও সরিয়ে দিতে বলছেন। একই ভাগাভাগির আবদার জাতীয় পার্টিও করছে। এটি সফল হবে বলে মনে হয় না।

জাগো নিউজ: রাতে গ্রেফতার হচ্ছে। চোরাগোপ্তা হামলা, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের অভিযোগে আটক করা হচ্ছে। এসব কি আন্দোলনের অংশ?

রুমিন ফারহানা: এমন বয়ান প্রধানমন্ত্রীর। প্রধানমন্ত্রী তার এজেন্সি দিয়ে এসব করাবেন এবং দোষ দেবেন আমাদের ঘাড়ে। এসব নাটক পুরোনো স্ক্রিপ্টের।

জাগো নিউজ: এমন স্ক্রিপ্টেই বিএনপি নাস্তানাবুদ হলো কি না?

রুমিন ফারহানা: একটুও নাস্তানাবুদ হয়নি। ভিন্নমত দমন করতে একজন স্বৈরাচার দু’বার চিন্তা করে না। স্বৈরাচারকে এভাবেই টিকে থাকতে হয়। তবে এত কিছুর পরেও প্রথমত প্রমাণ হয়েছে বিএনপিকে কোনোভাবেই ভাঙা যাবে না। দ্বিতীয় সফলতা হচ্ছে বাম, ডানসহ সবাই এ স্বৈরাচার সরকারের পতনে একমঞ্চে এসেছে। হালুয়া-রুটির ভাগবাটোয়ারা ছাড়া সব দলই বুঝতে পারছে যে ঘরে আগুন লাগলে তা আগে নেভানো দরকার। মত-পথের আলোচনা পরে।

জাগো নিউজ: সবাই একসঙ্গে মিলছেন। কিন্তু সরকার পাত্তা দিচ্ছে না। দৃশ্যত কোনো ফলাফল নেই।

রুমিন ফারহানা: সরকার পাত্তা দিচ্ছে না এ কথার সঙ্গে আমি একমত না। পাত্তা না দিলে প্রধানমন্ত্রী সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিএনপি, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের নাম এত জপতেন না। এ থেকেই বোঝা যায় বিএনপিকে আওয়ামী লীগ কতটুকু আমলে নেয়। পাত্তা না দিলে বিএনপির যে কোনো কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগ কর্মসূচি দিতো না। বিএনপির প্রতিটি সমাবেশে সরকার যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে হরতালের পরিবেশ তৈরি করে। কারও মোবাইলে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ছবি দেখলে আটক করা হয়। কতটুকু ভয় কাজ করলে এমন হীন কাজ করতে পারে! সরকার তো বিএনপির ভয়ে সারাদিন কাঁপাকাঁপিতেই থাকে।

আরও পড়ুন>>রাজনীতিতে হেভিওয়েটদের ডায়েটে যাওয়া উচিত

জাগো নিউজ: কাঁপছে কই? আপনারা আন্দোলনে আছেন, সরকার ক্ষমতায় আছে। সত্যিকারার্থে সফল কে?

রুমিন ফারহানা: গণতান্ত্রিক সরকার আর স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন দুটো ভিন্ন বিষয়। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এক দল আরেক দলের সঙ্গে লড়ে। আওয়ামী লীগ বলে কোনো দল আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। কিছু সুবিধাভোগী আমলা, এজেন্সি, ব্যবসায়িক শ্রেণি মিলে সরকারটা টিকিয়ে রেখেছে।

আমাকে যুদ্ধটা করতে হচ্ছে পুরো রাষ্ট্র কাঠামোর বিরুদ্ধে। একদিকে পুলিশ বাহিনী, র‌্যাব, এজেন্সি অন্যদিকে বিচার বিভাগও সরকারের লেজুড়বৃত্তি করছে।

জাগো নিউজ: রাষ্ট্র কাঠামোর এই উইংসগুলো কী কারণে আপনাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে?

রুমিন ফারহানা: বিএনপির বিপক্ষে নয়, তারা সরকারের সঙ্গে অবস্থান নিচ্ছে।

জাগো নিউজ: কেন অবস্থান নিচ্ছে বলে মনে করেন?

রুমিন ফারহানা: বিপুল সুযোগ-সুবিধার লোভে কিছু অংশ সঙ্গে আছে। আরেক অংশ আছে টিকে থাকার স্বার্থে। চাকরি থাকবে না।

জাগো নিউজ: এই অভিযোগ বিএনপির সময়েও তীব্র ছিল?

রুমিন ফারহানা: ঘোষিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়কার অভিযোগ আর গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এক বিষয় নয়।

জাগো নিউজ: সরকার নিজেকে কখন ফ্যাসিস্ট ঘোষণা দিলো?

রুমিন ফারহানা: আপনি টাইম ম্যাগাজিনে শেখ হাসিনার বয়ান দেখেন। এর বাইরেও বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং জরিপে সরকারকে ‘স্বৈরাচারী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

জাগো নিউজ: বাইরের মিডিয়া বললেই তো সরকারের ঘোষণা হয়ে যায় না?

রুমিন ফারহানা: সরকার অস্বীকারও করছে না। বরং সরকারের যে আচরণ তাতে প্রমাণ হয় যে কেউ তাকে স্বৈরাচার বললে খুশিই হয়।

জাগো নিউজ: বিএনপির আন্দোলনের কৌশলগত ভুল আছে কি না?

রুমিন ফারহানা: আমি মনে করি, বিএনপির আন্দোলনে কৌশলগত কোনো ভুল নেই। যেমন, ২০১৪ সালে নির্বাচনে না যাওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। এটি সঠিক প্রমাণ করেছি আমরা ২০১৮ সালের নির্বাচনে গিয়ে।

২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আরেকটি নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তিনি কথা রাখেননি। এরপর ২০১৮ সালের রাতের ভোট আমরা দেখতে পেলাম।

বিএনপি টিকে গেছে কিন্তু আওয়ামী লীগ যে হেরে গেছে সেটা প্রমাণ হয়েছে। নইলে আওয়ামী লীগ এত বেশি সংস্থানির্ভর হতো না।

জাগো নিউজ: অভিযোগ আছে আপনাদের আন্দোলনও বিদেশনির্ভর। এমনকি হরতাল-অবরোধে কয়টি গাড়ি পুড়বে তাও যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে। এ অভিযোগের বিপরীতে কী বলবেন?

রুমিন ফারহানা: আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী তো এ-ও বলেন যে বিএনপি মুরগির বাচ্চার ট্রাকে আগুন দেয়। এসব কথার তো আসলে উত্তর হয় না।

আওয়ামী লীগ বলছে, দিল্লি আছে আমরা আছি। পিটার হাসের মুরুব্বিদের সঙ্গে তলে তলে আপস হয়েছে বলে কাদের সাহেব বললেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, ‘আমি ভারতকে বলে এসেছি আরেকবার শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় দরকার।’ এই লোকগুলো আবার অন্য দলের দিকে আঙুল তোলে কীভাবে? লজ্জায় তো নিজেদেরই মরে যাওয়া উচিত।

জাগো নিউজ: কিন্তু আপনারা যখন বিদেশি নিষেধাজ্ঞার কথা বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন, তাতে মনে হয় বিএনপি অধিক মাত্রায় বিদেশনির্ভরশীল হয়েই গেছে?

রুমিন ফারহানা: এমন একটি ধারণা সরকার দেওয়ার চেষ্টা করে। বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি আছে বলে আমি মনে করি না। স্যাংশন্সের কারণে বাংলাদেশে কিছু মানুষের প্রাণ বেঁচে গেছে এটি তো অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই। ক্রসফায়ার তো কমে এসেছে।

বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার কথা আমরা বলিনি। এটি বিজিএমইএ-এর সভাপতি বলেছেন। যিনি শেখ হাসিনার একজন পোষ্য ব্যবসায়ী। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের হাইকমিশন থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারাই ভয়ে গুজব ছড়িয়ে বিএনপির নাম দেয়।

জাগো নিউজ: রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো সরকারের সঙ্গে বলছে। আন্দোলনে জনগণকেও খুব মাঠে নামাতে পারেননি। পাশের দেশ ভারতের সঙ্গেও বিএনপির টানাপোড়েন। ফল কী?

রুমিন ফারহানা: দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে অন্য কোনো দেশের স্বার্থ রক্ষা করবে না বিএনপি। আমরা সমমর্যাদার ভিত্তিতে বন্ধুত্বে বিশ্বাসী। খালেদা জিয়া স্পষ্ট করে বলেছেন বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে, প্রভু নেই। আমরা কোনো দেশকে প্রভু মেনে রাজনীতি করতে আসিনি। এর জন্য যদি আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয় দেবো। আরও ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি। আমরা ভয় পাই না।

জাগো নিউজ: সরকার যে ছকে নির্বাচন করতে যাচ্ছে, তা সম্পন্ন হলে বিএনপির রাজনীতির ভবিষ্যৎ কী?

রুমিন ফারহানা: সরকার ৭ জানুয়ারি নির্বাচন করতে পারবে বলে মনে করি না। প্রথমত, এটি কোনো নির্বাচন বলেই কেউ বিশ্বাস করে না। এটি নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি। জোটের শরিকরা প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থী তো বটেই, স্বতন্ত্র প্রার্থীকেও সরিয়ে দিতে বলছেন। একই ভাগাভাগির আবদার জাতীয় পার্টিও করছে। এটি সফল হবে বলে মনে হয় না। এরপর ১৮ তারিখ থেকে নিজেদের মধ্যে হবে রক্তারক্তি। মারামারি শুরু হয়ে গেছে খবরে আসছে। আওয়ামী লীগ এবার আরও শেষ হয়ে যাবে।

জাগো নিউজ: নির্বাচন হবে না বলছেন, এর ভিত্তি কী?

রুমিন ফারহানা: নিজেদের মধ্যে এখনো সমাধানে আসতে পারেনি। জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঝামেলা মেটাতে পারেনি।

জাগো নিউজ: জাতীয় পার্টির সঙ্গে গত দুটি নির্বাচনেও ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে।

রুমিন ফারহানা: ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সাল এক নয়।

জাগো নিউজ: জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব নিয়ে নানান আলোচনা। আন্দোলনও হচ্ছে আলাদাভাবে। এখন জামায়াত নিয়ে আপনাদের ভাবনা কী?

রুমিন ফারহানা: আমি মনে করি যারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেন, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারে বিশ্বাস করেন তারা সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়েছি। এখানে ডান, বাম, মধ্যপন্থা পরের বিষয়।

আমরা মানুষের অধিকার নিয়ে বলছি। যে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি, তা এ সরকার এককভাবে ধ্বংস করছে।

জাগো নিউজ: জামায়াত সামগ্রিক আন্দোলনের অন্তরায় কি না? যেমন আপনাদের জোটের অনেকেই জামায়াত নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন।

রুমিন ফারহানা: আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত এমন কোনো বার্তা নেই। এখন কোনো আদর্শ বেছে জোট বা আন্দোলন করার বিষয় নয়। এক মঞ্চে এসে সরকার পতনে ভূমিকা রাখা দরকার। এই প্রশ্নে আমরা কোনো দ্বিমত দেখিনি।

জাগো নিউজ: আন্দোলন নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে কোনো কংক্রিট আলোচনা হচ্ছে?

রুমিন ফারহানা: এটি জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিষয়। অভিজ্ঞ নেতা যারা আছেন তারাই নিশ্চয় যেটা ভালো সেটা করবেন।

জাগো নিউজ: মামলা আপনার বিরুদ্ধেও আছে। মিডিয়ায় সরবে সরকারের সমালোচনা করছেন। আপনি গ্রেফতার হচ্ছেন না কেন?

রুমিন ফারহানা: আমার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা আছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। মামলাগুলো চলমান। আমার বিরুদ্ধেও বাস পোড়ানো মামলা দেওয়া হয়েছে। আমার বাড়িতেও পুলিশ আসছে। কিন্তু গ্রেফতারের ভয়ে আমি পালিয়ে যাইনি। প্রস্তুত আছি।

এএসএস/এএসএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।