জাপার সঙ্গে আসন ভাগাভাগি, সমঝোতা নাকি সংকটের পথে?
শরিকদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ রেখেই ১৪ দলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শেষ পর্যায়ে দর কষাকষি চলছে বর্তমান সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টির সঙ্গে। মহাজোটের শরিক থেকে বানানো এই বিরোধীদল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও জয়ের নিশ্চয়তা চায়। গত এক সপ্তাহে দলটির সঙ্গে গোপনে ও প্রকাশ্যে দফায় দফায় বৈঠক করেও শেষ হয়নি আসন ভাগাভাগি। আজকের মধ্যে সমঝোতা না হলে সংকট তৈরি হতে পারে নির্বাচনকে ঘিরে।
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর দুই দফায় বৈঠক করেছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি। এতেও চূড়ান্ত করতে পারেনি আসন ভাগাভাগি। আজ রোববার ফের বৈঠকে বসবেন দল দুটির নেতারা। আজকের বৈঠক থেকে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা। অবশ্য আজ মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। ফলে আজকের মধ্যেই বিষয়টির সমাধানে আসতে হবে।
আরও পড়ুন>>> ১৪ দলের শরিকদের ৭ আসন দিলো আওয়ামী লীগ
গতকালের (শনিবারের) বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত ছিলেন। জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে ছিলেন দলটির একজন কো-চেয়ারম্যান ও দপ্তর সম্পাদক সুলতান মাহমুদ।
শনিবারের দুই দফার বৈঠকের আগেও জাপার সঙ্গে দুইবার বসেছে আওয়ামী লীগ। চার দফার বৈঠকেও আসেনি আসন সমঝোতা। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বেশ কৌতুহলও তৈরি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে জাপা। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, শেষ মুহূর্তে হয়ে যাবে সমঝোতা। তবে, সমঝোতা না হলে সংকট ভালোভাবেই তৈরি হবে।
আরও পড়ুন>>> জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকে সরেও যেতে পারে: ওবায়দুল কাদের
এ নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘শিগগির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানতে পারবেন।’
যথারীতি জাপার দাবি ৪০টি আসন। সেখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী থাকতে পারবে না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কাজ করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে হবে।
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘দীর্ঘক্ষণ বৈঠক হলেও আসন ছাড় নিয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি। রোববার এই বিষয়ে চূড়ান্ত সমঝোতা হবে, সকালেই সব জানতে পারবেন।’
দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত শনিবার রাতে বলেন, ‘এখনো কোনো সমঝোতা হয়নি, সকালে (রোববার) হবে।’
আরও পড়ুন>>> জাপার সঙ্গে জোট না করতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ রওশনের
তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বার বার বৈঠকের বিষয়ে শনিবার বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমের চিঠি লিখবো, এটা কি বাবা-মাকে প্রথমে বলা যায়? আত্মীয়- স্বজনকে বলা যায়? বলা যায় না। পরে যখন হয়ে যায়, তখন বলা যায়।’
প্রেমের সম্পর্ক কতদূর এগিয়েছে- এমন প্রশ্নে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘প্রেম এমন সম্পর্ক; প্রেম হয়, বিরহ হয়। আবার গভীর হয়, আবার বিরহ হয়। প্রেমের তো শেষ পরিণতি বিয়ে।’
জানা গেছে, যথারীতি জাপার দাবি ৪০টি আসন। সেখানে নৌকার (আওয়ামী লীগ মনোনীত) প্রার্থী থাকতে পারবে না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কাজ করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন>>> যা থাকছে জাপার নির্বাচনী ইশতেহারে
যদিও ২০ থেকে ২৫টির বেশি আসন ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। আলোচনা এখানেই আটকে আছে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চূড়ান্ত নির্দেশনা নিয়ে আজ রোববার বৈঠক করে এ বিষয়ে সুরাহা করবে দুই দল।
দফায় দফায় বৈঠক করে ১৪ দলকে ৭টি আসন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামী লীগ বলেছে, ছেড়ে দেওয়া আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে লড়ে জিতে আসতে হবে। একই নির্দেশনা জাতীয় পার্টির জন্যও।
তবে বিষয়টি নিয়ে দুই দলই বেশ ইতিবাচক। মাঠে যতটা নেতিবাচক আওয়াজ আছে, ভেতরে (বৈঠকে) ততটাই ইতিবাচক আলোচনা হচ্ছে বলে জানাচ্ছে সূত্রগুলো।
এ নিয়ে দলগুলোর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে ঘোষণা না দিলেও মনোনয়ন প্রত্যাহারেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন>>> ‘কপাল পুড়ছে’ আওয়ামী লীগের ৭০ প্রার্থীর
এর আগে দফায় দফায় বৈঠক করে ১৪ দলকে ৭টি আসন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামী লীগ বলেছে, ছেড়ে দেওয়া আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে লড়ে জিতে আসতে হবে।
একই নির্দেশনা জাতীয় পার্টির জন্যও। দলটিকে ৩০, ৩৫টি বা যত আসন দেওয়া হোক না কেন, ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে লড়ে জিতে আসতে হবে। এমনটাই সাফ জানিয়ে দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল।
এসইউজে/কেএসআর/এমএস