ঐকমত্যে না পৌঁছাতে পারলে পুরো জাতি খাদে পড়বে

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৪৫ এএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩

ড. বদিউল আলম মজুমদার। অর্থনীতিবিদ, উন্নয়নকর্মী, গবেষক, রাজনীতি বিশ্লেষক, স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ। কাজ করছেন দাতব্য সংস্থা ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’র বাংলাদেশ শাখার পরিচালক ও বৈশ্বিক সহ-সভাপতি হিসেবে। দায়িত্ব পালন করছেন নাগরিক সংগঠন ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’র (সুজন) প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবেও।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে শেষটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ: আগের পর্বে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে উল্লেখ করেছিলেন, ‘এটিকে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বলে না।’ তাহলে পরিণতি কী?

ড. বদিউল আলম মজুমদার: এর পরিণতি ভয়াবহ। অর্থনৈতিক সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে, যা মানুষকে ক্ষুব্ধ করবে। সরকারের নৈতিক বৈধতা আরও কমবে এবার। সংকট মূলত এখানেই। এ সরকারকে আরও নির্ভরশীল হতে হবে বিদেশি কোনো শক্তির ওপর। এমন শক্তির ওপর নির্ভরতা বাড়তে থাকলে সার্বভৌমত্ব ধ্বংস হতে পারে।

আরও পড়ুন>> সামনে সরকার কোনো বিপদ দেখছে না

জাগো নিউজ: শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি ভারত, চীন, রাশিয়া সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে। এটি তো সরকারের বড় অর্জন বলেও মনে করা হচ্ছে।

ড. বদিউল আলম মজুমদার: আপনাকে দেখতে হবে বাংলাদেশের মানুষ কোন দিকে? বাংলাদেশের মানুষ এখন সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে।

ইসরায়েল এমন হেন কোনো কাজ বাকি রাখেনি যে ফিলিস্তিন ইস্যু চাপা পড়ে যাক। কিন্তু পারেনি। কারণ এটি ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার অধিকারবোধ। এ অধিকারবোধের প্রশ্নে গোটা দুনিয়ার মানুষ তাদের সঙ্গে রয়েছে। আমাদের ভোটাধিকারও ঠিক এরকমই।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আসলে কোনো পক্ষ নেওয়ার সুযোগ আছে?

ড. বদিউল আলম মজুমদার: সুযোগ না থাকলেও তো ভোটাধিকারের ইস্যুটি শেষ হয়ে যায়নি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে মানুষ ভোটাধিকার বঞ্চিত হয়েছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনেও হয়তো বঞ্চিত হবে। কিন্তু তাই বলে তো ইস্যু শেষ হয়ে যাবে না। বরং ভোটাধিকারের ইস্যু আরও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করছে। মানুষ আরও প্রতিবাদী হওয়ার চেষ্টা করছে এবং করবে।

জাগো নিউজ: আওয়ামী লীগ কীভাবে দেখছে বা এই দলটির জন্য কী বার্তা মিলছে?

ড. বদিউল আলম মজুমদার: হয়তো একদিন গণবিস্ফোরণ ঘটবে। ভোটাধিকারবোধ কখনো ধ্বংস করা যায় না। বরং এ অধিকারবোধ আরও জোরালো হয়। প্রকট হয়।

আরও পড়ুন>> ‘আমরা একটি বিপজ্জনক ফাঁদের ভেতরে পড়ে যাচ্ছি’

ইসরায়েল এমন হেন কোনো কাজ বাকি রাখেনি যে ফিলিস্তিন ইস্যু চাপা পড়ে যাক। কিন্তু পারেনি। কারণ এটি ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার অধিকারবোধ। এই অধিকারবোধের প্রশ্নে গোটা দুনিয়ার মানুষ তাদের সঙ্গে রয়েছে। আমাদের ভোটাধিকারও ঠিক এরকমই।

জাগো নিউজ: এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সংকট আরও বাড়তে পারে কি না?
ড. বদিউল আলম মজুমদার: আমাদের মধ্যে যদি শুভবুদ্ধির উদয় না হয়, আমরা যদি জনভাবনা আমলে না নিই তাহলে আমাদের কপালে আরও দুঃখ আছে।

জনগণ কী বলছে, কী ভাবছে তা সরকার পাত্তা দিচ্ছে না। জনগণের এই হতাশাকে আমলে না নেওয়া মানে রাষ্ট্র দিন দিন ভঙ্গুর হচ্ছে। সরকার বলছে জনগণ সব ক্ষমতার মালিক। অথচ সেই মালিক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তার কোনো ভূমিকা সরকার স্বীকার করছে না। মতামত দেওয়ার সব পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে। এটি কোনো সুখকর কথা নয়।

সংলাপের সময় কখনই ফুরিয়ে যায় না। যুদ্ধের মধ্যেও তো ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংলাপ করছে। বন্দিবিনিময় করছে। আলোচনা করে যে কোনো সংকট সমাধান করা যায়। দরকার সদিচ্ছা।

আপনাকে মনে রাখতে হবে পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে সরকার গঠন করতে দেয়নি বলে মুক্তিযুদ্ধ হলো। এই ইতিহাস তো আপনি ভুলতে পারবেন না। বাঙালি আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে খুব প্রতিবাদী। আমরা এখন আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের প্রশ্নে সংগ্রাম করছি।

জাগো নিউজ: এই ইতিহাস তো আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগের আরও বেশি মনে রাখার কথা।

ড. বদিউল আলম মজুমদার: ক্ষমতার মোহে সব ভুলে যায়। ক্ষমতা হারালে ফের ইতিহাসে ফেরে।

জাগো নিউজ: ফের ‘নিষেধাজ্ঞা’ আলোচনা। আপনার কোনো পর্যবেক্ষণ আছে?

ড. বদিউল আলম মজুমদার: আমি কায়-মন বাক্যে প্রার্থনা করি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কবলে বাংলাদেশ যেন না পড়ে। একদম সহজ কথা হচ্ছে বিদেশিরা আমাদের সমস্যা সমাধান করতে পারবে না। আমাদের সমস্যা আমাদেরই সমাধান করতে হবে। র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে বিচারবহির্ভূত হত্যা কমে গেছে। কিন্তু আমাদের আচরণ কি বদলে গেছে।

আরও পড়ুন>> জেলখানায় বসেও সংলাপ হতে পারে

আমরা যদি আমাদের আচরণ, মূল্যবোধ না বদলাই তাহলে কোনো নিষেধাজ্ঞায় আমাদের মানসিক পরিবর্তন নিশ্চিত করতে পারবে না। নিজেদের সমস্যা নিয়ে নিজেদেরই আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। ঐকমথ্যে না পৌঁছাতে পারলে পুরো জাতি খাদে পড়বে। সরকার বাঘের পিঠে চড়েছে। এই বাঘের পিঠ থেকে নামানোর একমাত্র পথ হচ্ছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। সরকার যদি এভাবে বাঘের পিঠে চড়েই থাকে তাহলে বাঘ আরও ক্ষুধার্ত হবে। তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

জাগো নিউজ: কিন্তু বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন সুষ্ঠু নির্বাচনে ক্ষমতার পরিবর্তন হলে বিএনপি-জামায়াত নামের আরেক বাঘ আসবে, যা আওয়ামী লীগের জন্য আরও ভয়ঙ্কর হতে পারে?

ড. বদিউল আলম মজুমদার: কিন্তু ভয়াবহ বাঘ আসবে বলে আপনি ধামাচাপা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না। এর তো শেষ একদিন হবেই। তখন কী ঘটবে? আওয়ামী লীগ নিজেদের আয়নার সামনে দাঁড় করাক। কেন এমন পরিস্থিতি হলো?

সুতরাং, আমাদের সমাধানের পথ বের করতে হবে। নইলে সবাইকে বড় মাশুল দিতে হবে। শুধু আওয়ামী লীগকেই এই মাশুল দিতে হবে তা নয়, গোটা জাতিকে এর মূল্য দিতে হবে।

জাগো নিউজ: আপনি কী মনে করেন সংলাপের সময় আছে?

ড. বদিউল আলম মজুমদার: সংলাপের সময় কখনই ফুরিয়ে যায় না। যুদ্ধের মধ্যেও তো ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংলাপ করছে। বন্দিবিনিময় করছে। আলোচনা করে যে কোনো সংকট সমাধান করা যায়। দরকার সদিচ্ছা।

এএসএস/এএসএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।