১৪ দলের আসন বণ্টন

প্রত্যাশা বেশি, ভাগাভাগিতে আগ্রহ কম

সালাহ উদ্দিন জসিম
সালাহ উদ্দিন জসিম সালাহ উদ্দিন জসিম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:১৭ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

আসন বণ্টন নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে ১৪ দলীয় জোটে। জোট শরিকরা প্রত্যাশা করেন আগের চেয়ে বেশি আসন পাবেন। আর আওয়ামী লীগ ভাবছে কত কম দেওয়া যায়। এ নিয়ে শরিকদের মধ্যে জমছে ক্ষোভ। সবাই এই ক্ষোভ এখনই প্রকাশ না করলেও সুযোগের অপেক্ষায় পুষে রাখছেন। জোটের সমন্বয়ক বলছেন, জোট করেছি আদর্শিক জায়গা থেকে, আসন ভাগাভাগির জন্য নয়।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আসন ভাগাভাগি নিয়ে সোমবার (৪ ডিসেম্বর) জোটনেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে বসেন ১৪ দলের নেতারা। দীর্ঘ প্রায় চার ঘণ্টার বৈঠক শেষে শরিক নেতারা বেরিয়ে জানান, বৈঠকটি ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎ ও ভোজসভা। এতে আসন ভাগাভাগিসহ দেশ-বিদেশের নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, কিন্তু চূড়ান্ত হয়নি। আওয়ামী লীগের চার নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তারা জোট শরিকদের সঙ্গে বসে ঠিক করবেন।

আরও পড়ুন>> ‘আমরা একটি বিপজ্জনক ফাঁদের ভেতরে পড়ে যাচ্ছি’

পরদিন (৫ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগ নেতারা বসেও সেটি ঠিক করতে পারেননি। বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সঙ্গে বসার পর আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হবে। তবে, এটির জন্য ১৭ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’

একদিন পরে (৬ ডিসেম্বর) জাতীয় পার্টির সঙ্গে বেশ গোপনীয়তার সঙ্গে বৈঠক করে আওয়ামী লীগ। আসন ভাগাভাগি নিয়ে বসলেও নেতারা প্রকাশ্যে বলেন, ‘বৈঠকটি ছিল সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে দুই দলের আলাপ-আলোচনার জন্য।’

অথচ জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ থেকে আশ্বাস পেয়েই আমরা নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ এদিকে, মাঠেও চাউর আছে, জাতীয় পার্টি সংসদে ডেপুটি স্পিকারসহ ৪০টি আসন চায়। ডেপুটি স্পিকারের বিষয়ে কথা না বললেও ২০-২২টি আসন ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। তবে এখন পর্যন্ত দরকষাকষি চলছে। যত কম দেওয়া যায়, সেই চেষ্টায় আছে ক্ষমতাসীন দল।

আরও পড়ুন>> সামনে সরকার কোনো বিপদ দেখছে না

এটি চূড়ান্ত হলে একইভাবে ১৪ দলকে যত কম আসন ছেড়ে সন্তুষ্ট করা যায় সেই চেষ্টায় মূলত এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। সবশেষ খবর অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১৪ দলকে ছয়টি আসন ছাড়ের বিষয়ে আলাপ অগ্রসর হয়ে আছে। এর মধ্যে জাসদের দুটি, ওয়ার্কার্স পার্টির দুটি, জাতীয় পার্টির (জেপি) একটি ও তরিকত ফেডারেশনের একটি।

আসন বণ্টনে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কথা চলছে। যার যত আসন আছে, সেখান থেকে একটু বাড়াবে। তবে বাড়ানোর মাত্রা তো ঠিক নেই। যেখানে আছি, সেখান থেকে বাড়লে মনটা খুশি হবে। আমার কর্মীরা খুশি হবে। দল খুশি হবে। জোট শক্তিশালী হবে।- হাসানুল হক ইনু

জাসদের আসন দুটির মধ্যে কুষ্টিয়া-২ সেখানে প্রার্থী দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং লক্ষ্মীপুর-৪ স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি মোশাররফ হোসেন। ওয়ার্কার্স পার্টির আসন দুটি- বরিশাল-৩ আসনে দলটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী-১ আসনে। এছাড়া জেপির আগের পিরোজপুর-২ আসনেই সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং চট্টগ্রাম-২ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী নির্বাচন করবেন।

তবে ওয়ার্কার্স পার্টি আরও দুটি আসন চায়। অন্তত একটিও হলেও দিতে হবে এমন মনোভাব তাদের। সেগুলো হলো- সাতক্ষীরা-১, সেখানে বর্তমান এমপি দলটির মোস্তফা লুৎফুল্লাহ অথবা ঠাকুরগাঁও-৩, সেখানে দলটির এমপি ইয়াসিন আলী।

আরও পড়ুন>> চমক নিয়ে আসছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার

জাসদও আরও একটি আসন চায়- এজন্য তাদের পছন্দ ময়মনসিংহ-৬, সেখানে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিন্টু অথবা বগুড়া-৪, সেখানে দলটির বর্তমান এমপি রেজাউল করিম তানসেন।

এর বাইরে জেপিও আরেকটি আসন চায়, সেটি হলো ঢাকা-১৪। সেখানে দলটির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম প্রার্থী।

একসঙ্গে (পরিস্থিতি) সামাল দেওয়া, একসঙ্গে সংগ্রাম করার ক্ষেত্রে ১৪ দল অনেক পরীক্ষিত। এটা শুধু আসন বিন্যাসের ওপর নির্ভর করে না। আমরা একটা রাজনৈতিক আদর্শিক জোট। এটা ভাগাভাগির জোট নয়।- আমির হোসেন আমু

এ বিষয়ে জোট নেতাদের অবস্থান পরিষ্কার। তারা বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছি। বর্তমানে আসন যা আছে তার চেয়ে বেশিই চেয়েছি। দেখি (আওয়ামী লীগ) কী করে!’

তবে জোটের ভেতরের ক্ষোভ অনেকটা অনুমিত। নিজেদের অসন্তোষ বা ক্ষোভ প্রকাশে বেশ সতর্ক জোট নেতারা। তারা দেখতে চান- জোটের নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী করে!

এ বিষয়ে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু জাগো নিউজকে বলেন, ‘আসন বণ্টনে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কথা চলছে। যার যত আসন আছে, সেখান থেকে একটু বাড়াবে। তবে বাড়ানোর মাত্রা তো ঠিক নেই। যেখানে আছি, সেখান থেকে বাড়লে মনটা খুশি হবে। আমার কর্মীরা খুশি হবে। দল খুশি হবে। জোট শক্তিশালী হবে।’

তিনি বলেন, ‘আসন বণ্টন যদি সম্মানজনক না হয়, যদি কম আসন পাই, তাহলে ১৪ দলীয় জোটের অভ্যন্তরে এর নীতিগত মেন্টাল ক্ল্যাশ হচ্ছে না। নীতিগত জায়গাটা ঠিক থাকছে। কিন্তু দলে এর প্রভাব পড়ছে। দলের কর্মীরা হতাশ হচ্ছে, নিরুৎসাহিত হচ্ছে এবং মন ভেঙে যাচ্ছে। এই নিরুৎসাহিত, হতাশ কর্মী বাহিনী দিয়ে এবং মানসিকভাবে বিধ্বস্ত দল দিয়ে তো ১৪ দলের যে লড়াই, সেটা চালাতে পারবো না আমরা।’

জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি দেন-দরবার করার লোক না। জোট করেছি জেতার জন্য। আমার যেমন বড় দলকে প্রয়োজন আছে, তেমনি বড় দলেরও আমাকে নিশ্চয়ই প্রয়োজন আছে। আমার ব্যক্তিগত চাহিদা না থাকলেও আমার দলে যারা এত বছর টিকে আছেন, তাদের আছে। তারপরও তারা যা দেয়, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবো। বাকি আসনে আমার ‘সাইকেল’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবো।’

কবে নাগাদ শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু জাগো নিউজকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর একটা পর্যায়ে যেতে পারি। জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ, ১৪ দলের মধ্যে আসন বিন্যাসে কনফ্লিক্ট হতে পারে, সেটা অ্যাডজাস্টমেন্টের ব্যাপার থাকতে পারে। সব কিছুর জন্য ১৭ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে (পরিস্থিতি) সামাল দেওয়া, একসঙ্গে সংগ্রাম করার ক্ষেত্রে ১৪ দল অনেক পরীক্ষিত। এটা শুধু আসন বিন্যাসের ওপর নির্ভর করে না। আমরা একটা রাজনৈতিক আদর্শিক জোট। এটা ভাগাভাগির জোট নয়।’

এসইউজে/এএসএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।