মানবাধিকার দিবস থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় বিএনপির

খালিদ হোসেন
খালিদ হোসেন খালিদ হোসেন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৩২ পিএম, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩
সর্বশেষ ২৮ অক্টোবর সমাবেশ করে বিএনপি, ফাইল ছবি

প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর পালন করা হয় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। সরকারের পতনের আন্দোলনে থাকা বিএনপি এই দিবস থেকে আন্দোলনের রূপরেখায় বদল আনতে চায়। আন্দোলন জমাতে শীর্ষ নেতাদের মাঠে না পেয়ে হতাশ দলের কর্মী-সমর্থকরা। এ অবস্থায় দিবসটি ঘিরে তারা এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চায়।

রোববারের মানববন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে দলটি সারাদেশের নেতা-কর্মীদের মাঠে নামাতে চায় বিএনপি। নতুন করে উজ্জীবিত করতে চায় দলের নেতা-কর্মীদের। উপস্থিত করার চেষ্টা করা হবে বিভিন্ন সময় নির্যাতিত, গুম, হত্যার শিকার নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের। একই সঙ্গে জাতিসংঘসহ বিদেশি দূতাবাসগুলোতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজনীয়তা তুলে চিঠি দেবে দলটি।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সক্রিয় করার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। কারও কোনো গাফিলতি থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে জানা যায়।

আরও পড়ুন>> ‘নির্বাচন ঠেকাতে’ জামায়াতকে কাছে টানছে বিএনপি

সূত্র জানায়, রোববার (১০ ডিসেম্বর) মানববন্ধন কর্মসূচিতে সারাদেশের নেতাকর্মীদের নামানোর জোর চেষ্টা থাকলেও শেষ পর্যন্ত কতজনকে দেখা যাবে তা নিয়ে এখনো রয়েছে সংশয়। বিগত কর্মসূচির ভিত্তিতেই এই সংশয় তৈরি হয়েছে। দলের পদধারী প্রায় প্রত্যেকেই মামলার আসামি। আর আসামি পেলে পুলিশ গ্রেফতার করবে। এ কারণে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিয়ে একটা শঙ্কা থেকেই যায়।

নেতারা বলছেন, কর্মসূচিতে এবার কারও গাফিলতি থাকলে তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। এবার কর্মসূচি সফল করতে বিকল্প ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বিএনপির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আইনজীবী-পেশাজীবিরা থাকবেন এ মানববন্ধনে। পাশাপাশি দলের পক্ষ থেকে জাতিসংঘসহ বিদেশি দূতাবাসগুলোতে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ সার্বিক চিত্র তুলে ধরে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের জন্য সমর্থন চাইবে বিএনপি।

বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, কর্মসূচিতে প্রশাসন বাধা না দিলে তারা আপাতত হরতাল-অবরোধ থেকে বের হয়ে এসে জনসম্পৃক্তমূলক কর্মসূচি পালন করতে চায়। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত এ ধরনের কর্মসূচিতেই থাকতে চায় দলটি। যদি প্রশাসন, বিশেষ করে পুলিশ বাধা দেয় বা সেখান থেকে ব্যাপকহারে গ্রেফতার করা হয় তবে ভিন্ন কর্মসূচির কথাও ভাবছে দলটি। সেক্ষেত্রে ফের হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি ইসিসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন ভবন ঘেরাও কর্মসূচি আসতে পারে।

আরও পড়ুন>> রোববার প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করবে বিএনপি

দীর্ঘদিন থেকে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা মাঠে না থাকায় হতাশ বিএনপির তৃণমূল। কর্মী-সমর্থকরা মনে করছেন, নেতারা যদি সিরিয়াসলি মাঠে না নামেন শেষ পর্যন্ত তাদের অনেকেই সাহস পাবেন না। তাদের অভিযোগ, আত্মগোপনে থাকা নেতাদের সঙ্গে তাদের বেশিরভাগই এখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তাহলে কার নির্দেশনায় তারা মাঠে নামবেন।

তারা আরও বলছেন, গত ২৮ অক্টোবর সরকার ঝামেলা করতে পারে ধরে নিয়েই তো বিএনপির মাঠে নামা উচত ছিল। একদিন সংঘর্ষের পর নেতারা সবাই ঘরে উঠে বসে থাকবে আর কর্মীরা মার খাবে সেটি হতে পারে না। বিএনপির ব্যাপক সমর্থন থাকলেও মাঠের নেতৃত্ব বলিষ্ঠ নয় বলে দাবি তাদের। বেশিরভাগ সময় মাঠের নেতাকর্মীকে বাদ দিয়ে কমিটি করায় দুঃসময়ে এসব নেতারা আর মাঠে নেই।

শেষ পর্যন্ত যদি ব্যাপক পুলিশি তৎপরতা থাকে আর জ্যেষ্ঠ নেতারা মাঠে না নামে তাহলে দলের তৎপরতা কোনো কাজে আসবে না। শেষ পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের কতজন ঝুঁকি নিয়ে মাঠে নামেন তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। তবে ইউনিটের নেতারা যদি ভয় উপেক্ষা করে মাঠে নামেন তবে কর্মী-সমর্থকেরা সবাই মাঠে থাকবেন। যশোর, সাতক্ষীরা, সিলেটের তৃণমূলের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এমন তথ্য।

এ বিষয়ে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু জাগো নিউজকে বলেন, ‘আসলে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে মাঠে সক্রিয় সব নেতার নামেই অসংখ্য মামলা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিরোধী দল দমনে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে মামলা। অনেকে তাই মাঠে কম নেমে ভিন্ন কাজ করছেন। নেতাকর্মীরা মাঠে নেই এমন কথা ঠিক নয়।’

আরও পড়ুন>> ‘হাসিনা সরকারের পতন ঘটলেও বিএনপি ক্ষমতায় আসবে না’

মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক পৌরমেয়র অ্যাডভোকেট শহীদ মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘মামলার হাত থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছেন না। আমি আইনজীবী হয়ে আমার নামে একের পর এক মামলা হচ্ছে। তারপরও মাঠে আছি। মানববন্ধনে এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে অংশ নেবো।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘মানবাধিকার দিবসে আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। সেটি নেতাকর্মীরা যথাযথভাবে পালন করবেন। বিএনপি নেতারা মাঠে নেই এটি সত্য নয়। কৌশলগত কারণে আমাদের নেতাদের একেকজন একেক ধরনের কর্মকাণ্ডে রয়েছেন।’

‘যখন যেটা করা দরকার দল করছে। আগামী দিনেও দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ফিরিয়ে আনতে যা করার তা বিএনপি করবে। কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো সংশয় আছে বলে মনে করি না।’

রোববারের কর্মসূচিতে প্রশাসনের মনোভাবের ওপর আগামী দিনের কর্মসূচি ঠিক করা হবে বলেও জানান তিনি।

কেএইচ/এএসএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।