মাদারীপুর-৩

আওয়ামী লীগের গোলাপের সঙ্গে কে এই স্বতন্ত্রপ্রার্থী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৩৪ এএম, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩
আব্দুস সোবহান গোলাপ ও অধ্যাপক তাহমিনা সিদ্দিকী

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মাদারীপুর-৩ আসন (কালকিনি, ডাসার, মাদারীপুর সদর আংশিক) অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এ অঞ্চলে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। একাধিকবার মন্ত্রী হয়েছেন সৈয়দ আবুল হোসেন। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাল্টে যেতে পারে হিসাব-নিকাশ। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে এবার প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক তাহমিনা সিদ্দিকী।

জানা গেছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনকে শক্তিশালী করেছেন অধ্যাপক তাহমিনা সিদ্দিকী। দক্ষিণবঙ্গের প্রবীণ এ নারী নেত্রী সবার পরিচিত মুখ। তার পারিবারিক নাম মোসা. তাহমিনা বেগম। তাহমিনা সিদ্দিকী দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে রাজনীতি করে আসছেন। তিনি মাদারীপুরের কালকিনি পৌর এলাকা চর ঝাউতলার সরদার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম মো. ইব্রাহীম সরদার, মা নূরজাহান বেগম। স্বামী মরহুম মো. আবু বকর সিদ্দিক হাওলাদার। তিনি এক কন্যার জননী।

নেতাকর্মীরা জানান, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাহমিনা সিদ্দিকীর বিশেষ অবদান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ভারত যেতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতির প্যাডে প্রত্যয়নপত্র দরকার হতো। তাহমিনা ও তার বড় বোন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মরহুম আব্দুল আজিজ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতির স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র প্রশিক্ষণার্থীদের কাছে পৌঁছে দিতেন। ফলে যুদ্ধকালীন দীর্ঘ সাত মাস বাড়িতে না থেকে আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে।

আরও পড়ুন: আসন ভাগাভাগি ছাড়াই শেষ হলো ১৪ দলের বৈঠক

অধ্যাপক তাহমিনা সিদ্দিকীর বাবা ব্যবসায়ী এবং থানা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ছিলেন। ফলে ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। পেশাগত জীবনে ১৯৭৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি কালকিনি মহাবিদ্যালয়ে (বর্তমান কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ) শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে দীর্ঘসময় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ফলে শিক্ষার্থীদের কাছেও তিনি জনপ্রিয়। ২০১২ সালের ২৪ আগস্ট তিনি অবসরে যান।

ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হলেও ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি ১৯৮০ এবং ১৯৮৬ সালে কালকিনি থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ এবং ১৯৮৯ সালে কালকিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৫ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে পুনরায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। আবার ২০১৭ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ১৯৮৭ সাল থেকে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন।

শিক্ষকতা ও রাজনীতির বাইরেও তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল এবং ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মাদারীপুর জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ছিলেন। মাদারীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জন্মলগ্ন ১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মহিলা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিষদের মাদারীপুর জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১০ সালে কালকিনি কিশলয় কেজি বিদ্যানিকেতনের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন। এছাড়া ২০১০ সালে শশীকরের শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের দুই মেয়াদে আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। ২০২০ সাল পর্যন্ত পরিচালনা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনবার কালকিনি বালিকা দাখিল মাদরাসার সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ১৯৯৫ সাল থেকে কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাত দিনের সফরসঙ্গী হয়েছিলেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা ১৯৯২-১৯৯৩ সালে তার ভাড়া বাসায় পুলিশি পাহারায় দুই বার ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। ২০০৪ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের সমাবেশে চার হাজার মানুষের মিছিলে বিএনপির নেতাকর্মীদের গুলি ও বোমার মুখে পড়েন।

অধ্যাপক তাহমিনা সিদ্দিকী ২০১৪ সালে কালকিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু পরে দলীয় সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। ব্যক্তিগত কারণে তিনি একাধিকবার সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তাহমিনা সিদ্দিকী একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন-৪১ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন তিনি।

আরও পড়ুন: জোট না থাকলে আওয়ামী লীগ একা হয়ে যাবে

তিনি রাজনৈতিক জীবনে ‘ক্লিনম্যান’ হিসেবে পরিচিত। শিক্ষকতা পেশায় জড়িত থাকায় অসংখ্য ভক্ত-শিক্ষার্থী রয়েছে তার। আদর্শ শিক্ষক হিসেবেও সবার অন্তরে জায়গা করে নিয়েছেন। রাজনৈতিক জীবনে অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। কিন্তু কখনো ভেঙে পড়েননি। তিনি অবিচল ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে। সবাইকে তিনি আগলে রাখতে চান স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে। অভিমান করে রাজনীতি থেকে সরে যেতে চাইলেও নেতাকর্মী বা দল তাকে কখনোই ছেড়ে যেতে দেয়নি।

তবে শেষ বয়সে কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তার নেতৃত্বে মাদারীপুর-৩ আসনে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দলীয় প্রতীক বা দলের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেননি। উপজেলা আওয়ামী লীগের দুর্দিনে-দুঃসময়ে শক্ত হাতে হাল ধরেছেন। মাদারীপুর-৩ আসনের সর্বস্তরের জনগণ তাকে অভিভাবক মনে করেন।

তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এ আসনের জনগণের সামনে এক চ্যালেঞ্জ হাজির হয়েছে। জীবনের শেষপ্রান্তে যে সংগ্রামে অধ্যাপক তাহমিনা সিদ্দিকী অবতীর্ণ হয়েছেন, সেটি কেউ হয়তো কামনা করেননি। পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছে। দলীয় ঘোষণা অনুযায়ী উন্মুক্ত মাঠ বলেই তিনি এ প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। তিনি দলের বিরুদ্ধে নয়, ব্যক্তির বিরুদ্ধে নির্বাচন করবেন।

এসইউজে/ইএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।