রাজধানীতে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর বিক্ষোভ মিছিল
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিলের প্রতিবাদে বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে সমমনা জোটগুলো পুরানা পল্টনের বিজয়নগর সড়কে ‘বিক্ষোভ মিছিল’ করেছে।
রোববার (১৯ নভেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর পুরানা পল্টন, বিজয় নগর, তোপখানা রোড, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, সায়েন্স ল্যাবরেটরির সামনে, তেজগাঁও রেলস্টেশন সড়ক, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল সড়ক, বাড্ডা, ফকিরাপুল, গ্রিন রোড প্রভৃতি সড়কে এসব কর্মসূচি পালন করে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে বিএনপিসহ সমমনাজোটগুলো সারাদেশে রোববার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ঘোষণা করেছে।
হরতালের প্রথম দিন সকালে বিএনপির নেতাকর্মীরা তেজগাঁও রেলস্টেশন সড়ক, ফকিরাপুল, কবি নজরুল সরকারি কলেজ সড়ক, জিগাতলা, বনানীর কাকলির সামনের সড়ক, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল সড়ক, গুলশানে ছাত্রদল ও বাড্ডায় মহিলা দল, শাহবাগ, রমনা, মতিঝিল, গ্রিন রোডে স্বেচ্ছাসেবক দল ঝটিকা মিছিল করে চলে যায়। এসব মিছিলে কোথাও ৩০-৩৫ জন আবার কোথাও কোথাও অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গত ২৯ অক্টোবর থেকে বিএনপি টানা কর্মসূচি দিয়ে এলেও নেতাকর্মীদের রাজপথে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। ঝটিকা মিছিল করে ফেসবুকে পোস্ট করে সটকে পড়ছেন তারা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় একডজনের অধিক নেতৃবৃন্দ কারাগারে আছেন, অন্যরা আত্মগোপনে। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নিজেও আছেন আত্মগোপনে। অবরোধ কর্মসূচির তিনদিন ভোরে তাকে রাজধানীর তিনটি এলাকায় ঝটিকা মিছিলে দেখা গেছে। প্রতিদিনই তিনি বক্তব্য রাখছেন ভার্চুয়ালি।
এদিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ। গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ পণ্ডের পর রাত থেকে এই কার্যালয়ে নেতাকর্মীর কাউকে দেখা যায়নি। কার্যালয়ের কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ। কার্যালয়ের সামনে দুই পাশে বসানো হয় পুলিশি নিরাপত্তা যা এখনো বলবৎ।
বিএনপির এই আন্দোলনের মধ্যে গত বুধবার তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। গত ৩১ অক্টোবর থেকে সরকারি ছুটির দিন ও দুটি মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন অবরোধ পালন করে আসা বিএনপি এর প্রতিক্রিয়ায় রোববার ও সোমবার হরতালের ডাক দেয়।
গণতন্ত্র মঞ্চ
এদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় বিজয় নগর সড়কে তফসিলের প্রতিবাদে মিছিল করে গণতন্ত্র মঞ্চ। মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীো বিজয়নগর সড়ক প্রদক্ষিণ কৃরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। মিচিল থেকে সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের।
সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়কারী গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ২০২৩-২৪ এ বাংলাদেশে যে সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছে এটা বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষা, এটা বাংলাদেশের মানুষের রক্ষার লড়াই। গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা না হলে স্বাধীনতাও থাকবে না, মানুষের কোনো অধিকার থাকবে না। কাজেই এই লড়াইয়ে পরাজয়ের কোনো জায়গা নেই। এই লড়াইয়ে আমাদের বিজয়ী হতেই হবে।
আরও পড়ুন>> লাল-সবুজ পতাকা যতদিন থাকবে ততদিন বিএনপি থাকবে: রিজভী
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, একতরফা নির্বাচনের তফসিল কি মানুষ গ্রহণ করেছে? সব মানুষ এটা প্রত্যাখান করেছে, বর্জন করেছে। তারপরও সরকারি দলের নেতারা এবং সরকারের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত প্রতিদিন তাদের যে মিথ্যাচার, শঠতার প্রতারণা এবং তাদের যে জালিয়াতির বক্তব্য তাতে শয়তান পর্যন্ত লজ্জ্বা পাচ্ছে এবং এদের অধীনে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন তারা করতে পারবে- এই কথা শুনে গাধাও নাকি হাসে। আর প্রতিদিন সরকার বলছে তারা নাকি অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবে।আপনি বিরোধীদলের ওপরে দমন-নিপীড়ন চালিয়ে সেখানে ভোটের উৎসবের আয়োজন করেছেন।
সমাবেশে ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, জেএনডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, সৈয়দ বেলায়েত হোসেন বেলায়েত, কামাল উদ্দিন পাটোয়ারি, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের দিদারুল ভুঁইয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট
বেলা সাড়ে ১১টায় বিজয়নগর সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। মিছিলে এনপিপির ফরিদুজ্জমান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জাগপার খন্দকার লুতফুর রহমান, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, এনডিপির আবু তাহের প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে তারা সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে মিছিল শেষ করে।
গণঅধিকার পরিষদ
নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে পরিষদের শতাধিক নেতাকর্মীরা বিজয় নগর ও নয়াপল্টনের সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলে ‘ভোট ডাকাতের তফসিল, মানি না, মানবো না’, ‘শেখ হাসিনার গদিতে আগুন জ্বালাও এক সাথে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা। এসময় তাদের হাতে ‘ইন্তেকাল কমিশন’ লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য
তোপখানা রোড থেকে পুরানা পল্টন মোড়ে প্রতিবাদ মিছিল করে তারা। ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও, লড়াই করো’, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের হরতাল চলছে চলবে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা। মিছিলে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমন্বয়ক বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (মার্কসবাদী-লেলিনবাদী) সাধারণ সম্পাদক হারুন চৌধুরী, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের হারুন আল রশিদসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
১২ দলীয় জোট
বেলা সাড়ে ১১টায় বিজয়নগর সড়কে মিছিল করে ১২ দলীয় জোট। মিছিলে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) নওয়াব আলী আব্বাস, জাগপার রাশেদ প্রধান, ইকবাল হোসেন, লেবার পার্টির ফারুক রহমান, কল্যাণ পার্টির নুরুল কবির ভুঁইয়া পিন্টু, বিএলডিপির এম এ বাশার, জাতীয় দলের শামসুল আহাদ, ইসলামী ঐক্যজোটের ইলিয়াস রেজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এলডিপি
দুপুর ১২টায় নাইটিঙ্গেল মোড়ে মিছিল করে তারা তফসিল বাতিলের দাবি জানায়। মিছিলে এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য নেয়ামূল বশির, যুগ্ম মহাসচিব বিল্লাহ মিয়াজীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/ইএ/জেআইএম