‘পুরোনো ফরম্যাট’ ধরেই এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ!
কী হচ্ছে, কী হবে? সবার মুখে এমন প্রশ্ন। বিএনপির অবরোধ, আওয়ামী লীগের প্রতিরোধ এবং নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী প্রস্তুতি- আসলে কোনদিকে যাচ্ছে দেশ? এখন পর্যন্ত সমঝোতা হয়নি বড় দুটি রাজনৈতিক দলের। দুই দল হাঁটছে দুই পথে। আওয়ামী লীগ এখনো দাবি করছে, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। যদিও বিএনপি তাদের আগের অবস্থানেই অনড়!
নির্বাচন কমিশন বলছে, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় তারা নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। এরই মধ্যে তফসিল ঘোষণার পূর্বানুষ্ঠানিকতা হিসেবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও দেখা করেছেন। একই সুর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। তারা চায়, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন।
এদিকে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন বেশ কয়েকটি দল এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড়। তারা অব্যাহতভাবে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। তফসিল ঘোষণা হলে আরও জোরালোভাবে মাঠে নামবে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা।
আরও পড়ুন>> আ’লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি: কে হচ্ছেন কো-চেয়ারম্যান?
জানা যায়, নির্বাচনী ট্রেন এভাবেই চলতে থাকলে ২০১৪ এবং ২০১৮ এর পুরোনো ফরম্যাটেই নির্বাচন হবে। বিএনপি ও তাদের মিত্ররা অংশ না নিলেও ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট ও তাদের মিত্ররা সমঝোতার ভিত্তিতে সরকার ও বিরোধীদলের ভূমিকায় থাকবে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে বোঝা যাবে, কারা অংশ নিচ্ছে বা নিচ্ছে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে এখনো মনে করি, মোটামুটিভাবে সব দলই নির্বাচনে অংশ নেবে। কারণ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যাদের সক্ষমতা আছে, তারা অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেবে। কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নিলে তারা অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।-মাহবুবউল আলম হানিফ
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য দেশি-বিদেশি চাপ অগ্রাহ্য করে আওয়ামী লীগের একলা চলো নীতি এবং বিএনপির আলোচনায় সাড়া না দেওয়ায় রাজনৈতিক যে সংকট তৈরি হচ্ছে এটার জন্য দায়ী তারাই। এ সংকট সমাধানেরও দায় রাজনীতিকদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক জাগো নিউজকে বলেন, তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, আমরা সেটি দেখার অপেক্ষায়।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। সেখানে সব দল অংশগ্রহণ করবে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের দাবি বা প্রস্তাব থাকতে পারে, তারা সেগুলো উপস্থাপন করবে। যেমন বিএনপি শুধু তাদের দাবি উপস্থাপন করেনি, সেটির সমর্থনে অব্যাহতভাবে অবরোধ-হরতাল চালিয়ে যাচ্ছে। সেটি তাদের অধিকার, করতেই পারে। কিন্তু কোনোভাবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে না। রাস্তায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করতে পারে না। আমরা সাধারণ মানুষ যারা ভোটার, তারা এগুলো পর্যবেক্ষণে রেখেছি। বিএনপির সমর্থকরাও পর্যবেক্ষণ করছে।’
আরও পড়ুন>> এমপিদের ‘আমলনামা’ দেখেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন
অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা আশা করি, তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনমুখী হবে। কারণ রাজনৈতিক দল হিসেবে যদি নির্বাচনে না আসতে চায়, অতীতে আমরা দেখেছি তাদের বহু নেতকার্মী ও সমর্থক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, ভোট দিতে যান। এবারও হয়তো সেরকমই হবে।’
রাজনৈতিক এ সংকটের দায় রাজনীতিবিদদের, সমাধানও তাদেরই বের করতে হবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজনীতিকরা নিজেদের কথা ভাবেন, সাধারণ মানুষের কথা ভাবেন না। রাজনীতিকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসার দায় রাজনীতিবিদদের, সাধারণ মানুষের নয়। সাধারণ মানুষ খুবই ত্যক্ত-বিরক্ত।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা শুভবুদ্ধি, নীতি-নৈতিকতাবোধ, দেশপ্রেম ইত্যাদি প্রদর্শন করলেই আমরা এ থেকে মুক্তি পাবো। সমাধানের পথ রাজপথ নয়, আলোচনার টেবিল।’
আমরা আশা করি, তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনমুখী হবে। কারণ রাজনৈতিক দল হিসেবে যদি নির্বাচনে না আসতে চায়, অতীতে আমরা দেখেছি তাদের বহু নেতকার্মী ও সমর্থক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, ভোট দিতে যান। এবারও হয়তো সেরকমই হবে।- অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক
বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনে অংশ নেবে। গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ হিসেবে সব দলই নির্বাচনে আসবে বলে আমরা আশা করি। যারা নির্বাচনে আসবেন, তাদের অভিনন্দন। আর যারা আসবে না, তাদেরও অভিনন্দন। নির্বাচনে আসা এবং না আসা, দুটোরই অধিকার সবার আছে।’
আরও পড়ুন>> অনমনীয় রাজনৈতিক মনোভাব, সংঘাতের দিকে ঝুঁকছে দেশ
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে বোঝা যাবে, কারা অংশ নিচ্ছে বা নিচ্ছে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে এখনো মনে করি, মোটামুটিভাবে সব দলই নির্বাচনে অংশ নেবে। কারণ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যাদের সক্ষমতা আছে, তারা অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেবে। কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নিলে তারা অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনোই একলা চলো নীতিতে বিশ্বাস করে না। তেমন পথেও হাঁটে না। বিএনপি দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশিদের দ্বারস্থ হয়েছে। আমাদের সার্বভৌমত্ব ম্লান করছে। ফিলিস্তিনে মুসলমান হত্যাকারীদের চিরন্তন বন্ধুদের তল্পিবাহক হয়ে বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব মজলুম মুসলমানের মনে আঘাত হেনেছে। তাদের সঙ্গে আলোচনার পথ তারাই বন্ধ করেছে। আওয়ামী লীগের পক্ষে তাদের আর আলোচনার আমন্ত্রণ জানানোর সুযোগ নেই।’
তবে তিনি মনে করেন, ‘আলোচনা বন্ধও নেই। পেন্টাগনের বার্তা পেয়ে বিএনপির নিরাপত্তাবিষয়ক সম্পাদক সাহেব অনেক রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন, তাদের নির্বাচনে আনতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। নিশ্চয় তাদের কথা বিএনপি ফেলতে পারবে না। ক্রমশ শিথিল রাজপথের কর্মসূচির পথ ধরে বিএনপি নির্বাচনে আসছে। নির্বাচন কমিশনের আইনগত কঠোর নেতৃত্বে দেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
গত বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন করতে আমাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা দ্রুত তফসিল ঘোষণা করবো।’
বর্তমান সংসদের মেয়াদ ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি শেষ হবে। এক্ষেত্রে ৯০ দিনের গণনা শুরু হয়েছে ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর থেকে। নভেম্বরের মাঝামাঝি জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও জানুয়ারির প্রথম দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
এসইউজে/এএসএ/জিকেএস