ঢাকা-৬

এলাকাবিমুখ ফিরোজ রশীদ, মনোনয়ন দৌড়ে মান্নাফি-সাঈদ খোকন

রায়হান আহমেদ
রায়হান আহমেদ রায়হান আহমেদ , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:০২ এএম, ১০ নভেম্বর ২০২৩

সংসদীয় আসন ঢাকা-৬। ২০১৪ সাল থেকে টানা দুবারের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন তিনি। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিপদে-আপদে এমপিকে পাওয়া যায় না। এলাকায় আসেন না। কোনো উন্নয়নেও মনোযোগ নেই। আসনটি ধরে রাখতে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা আবু আহমেদ মান্নাফি ও ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন এ আসনে এবার মনোনয়ন চাইবেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৪, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫ ও ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ আসন। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ওয়ারী, গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর, কোতোয়ালির একাংশ ও বংশালের একাংশ পড়েছে এ আসনে। মোট ভোটার দুই লাখ ৬৯ হাজার ২৭৬।

আরও পড়ুন>> ঢাকা-১৪/গরমে পানি সংকট বর্ষায় জলাবদ্ধতা, উদাসীন জনপ্রতিনিধি

এ আসনের আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে মহাজোটের শরিককে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান এমপি নির্বাচনী এলাকায় আসেন না। নির্বাচিত হওয়ার পর খুব কম কাজ করেছেন। হাটখোলায় একটি অফিস আছে গত চার বছর সেই অফিসও বন্ধ। জনগণ তো ওনাকে হাতের নাগালেই পায় না। এবার নির্বাচনের কৌশল কী হবে আমরা জানি না। যদি আবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে আসে, তাহলে কাজী ফিরোজ রশীদ মনোনয়ন পাওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। আগামী নির্বাচনে দলের কৌশল কী হবে সেটা শিগগির জানা যাবে।

ওয়ারী থানাধীন নারিন্দার বাসিন্দা লোকমান হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই সংসদীয় আসন পুরান ঢাকা অন্যতম ঘনবসতি এলাকা। গত ১০ বছরে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন হয়নি। উনি তো মানুষের খোঁজ-খবর নেওয়া দূরে থাক, এলাকায়ই আসেন না।’

‘রায়সাহেব বাজার থেকে মুরগীটোলা মোড় পর্যন্ত এ রাস্তার ভয়াবহ অবস্থা। বৃষ্টি হলেই খানাখন্দে পানি জমে। নারিন্দা দক্ষিণ মৈশুন্ডী এলাকায় একটু ভারী বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা হয়। গত তিন মাস এ এলাকায় ওয়াসার পানির লাইনও নষ্ট। এভাবেই চলছে কয়েক বছর ধরে।’

বংশালের বাসিন্দা জাবেদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বংশালের জলাবদ্ধতার সমস্যা ৮-১০ বছর ধরে। একটু ভারী বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সেপ্টেম্বর মাসেও রাতে টানা ছয় ঘণ্টা বৃষ্টিতে পরদিন দুপুর পর্যন্ত রাস্তাঘাটে হাঁটু পানি ছিল। সিটি করপোরেশন কিংবা এমপি কেউ দেখার নেই। পানি উঠে ড্রেনের ময়লা মিশে বাজে অবস্থা তৈরি হয়।’

আরও পড়ুন>> ঢাকা-৭/নাগরিক সুবিধায় নজর নেই, বিভক্ত আওয়ামী লীগ

এ আসনের আরেক বাসিন্দা লক্ষ্মীবাজারের গোবিন্দ। তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছরে ফিরোজ রশীদ কী উন্নয়ন করছেন জানি না। তবে মানুষের সঙ্গে ওনার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমাদের ধূপখোলা মাঠে আগে বাচ্চাদের খেলাধুলা আর মানুষের ব্যায়ামের সুযোগ ছিল। এখন উন্নয়নের নামে মার্কেট করে সীমাবদ্ধ করে ফেলছে সিটি করপোরেশন। এই মাঠ নিয়ে ওনার কোনো বিকল্প চিন্তা দেখিনি। এরপর গ্যাসের সমস্যা রয়েই গেছে। আগামী নির্বাচনে এমন কেউ আসুক যে আমাদের কথা ভাববে।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে মনোনয়ন পেতে লবিং করছেন হেভিওয়েট নেতারা। সরাসরি ব্যানার, পোস্টারিং না করলেও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপের কথা জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

ঢাকা দক্ষিণের ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরোয়ার হোসেন আলো জাগো নিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যাকে মনোনয়ন দেবে আমরা তার জন্য নির্বাচন করবো। তবে এখানে মান্নাফি ভাই এগিয়ে আছেন। বর্তমান এমপি তো জনগণের সঙ্গে মেশেনই না। আমরা তাকে চাই না। এই আসনে যদি আওয়ামী লীগের কেউ হয় তাহলে আমরাও কাজ করে মজা পাবো। জনগণ উপকৃত হবে।’

কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন বাবলা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ আসনে আর কাউকে চাই না। যদি সেখানে আওয়ামী লীগের কেউ হয় সেটা তো অবশ্যই ভালো। তবে এখানে মান্নাফি ভাই কিছুটা এগিয়ে আছেন। যদি প্রধানমন্ত্রী দেন অবশ্যই মান্নাফি ভাই নির্বাচন করার কথা।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি খালেকুজ্জামান ভুলু জাগো নিউজকে বলেন, ‘এমপি সাহেবকে ফোন দিলে উনি আমাদের ফোনই ধরেন না। প্রধানমন্ত্রী যদি আওয়ামী লীগ থেকে কাউকে এবার নমিনেশন দেন আমরা উপকৃত হবো। সিটি করপোরেশন এলাকা হিসেবে আমাদের মেয়র সব সময় দেখাশোনা করেন। ফিরোজ সাহেবের ১০ বছরে কোনো উন্নয়ন নেই। কলাবাগানে একটা অফিস আছে উনি ওখানে বসেন। ওনার আসনে হাটখোলা একটা অফিস ছিল সেটি এখন করেন না।’

এই আসনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী বিবেচিত হচ্ছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি। এদিকে আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনও। আওয়ামী লীগ থেকে এবার তারাই নিজেদের যোগ্য মনে করছেন। জাতীয় পার্টি থেকে না দিয়ে এবার নিজের দলের থেকে নমিনেশন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

আরও পড়ুন>> ঢাকা-৫/আওয়ামী লীগে প্রার্থী জট, আসতে পারে চমক

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ আসন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। গত দুই নির্বাচন দলের স্বার্থেই জাতীয় পার্টিকে দেওয়া হয়েছে। কী উন্নয়ন হয়েছে, কী হয়নি সেটি নিয়ে কথা বলতে রাজি নই। এ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি। তবে আমি নমিনেশন চাইবো। নির্বাচনের জন্য খুবই আগ্রহী।’

একই সুরে কথা বলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘১৯৬৭ সাল থেকে আমি এ আসনে রাজনীতি করে আসছি। ১৯৯২ সালে আমি সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলাম। আমার রাজনৈতিক জীবনটা পার করেছি এ আসনের মানুষের সঙ্গে। এ আসনের এমন কোনো ওয়ার্ড নেই যেখানে মানুষ আমাকে চেনে না। মানুষও আমাকে চায়। ঢাকার সাত-আট নম্বর আসনের মানুষও আমাকে চায়। প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে নৌকা দেন, আমি অবশ্যই জিতে আসবো। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের এখন শেষ সময়। তাই সংসদে যাওয়ার ইচ্ছা, মানুষের সেবা করার ইচ্ছা আছে।’

বর্তমান এমপি কাজী ফিরোজ রশীদও আগামী নির্বাচনে এমপি হওয়ার জন্য লড়বেন। তবে এটি সিদ্ধান্ত হবে শরিক দল জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের একান্ত আলোচনায়।

কাজী ফিরোজ রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি যদি অংশগ্রহণ করে আর আমাকে নমিনেশন দেয় তাহলে আমি নির্বাচন করবো। তবে আওয়ামী লীগ বড় দল, তাদের অনেক নেতা প্রার্থী হতে চান। তারা প্রচারণাও চালাচ্ছেন। এবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট হয়ে নির্বাচন করলে সেটি দুই দলের আলোচনার বিষয়। আর আওয়ামী লীগ এ আসন ছাড়বে কি না সেটা প্রধানমন্ত্রী জানেন।’

সংসদীয় এলাকার উন্নয়ন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আমার কাজ করেছি। সিটি করপোরেশন তার কাজ করেছে। রাস্তাঘাট, পানির সমস্যা এসব তো সিটি করপোরেশন দেখবে। আমি এলাকায় স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদরাসা, হাসপাতাল নির্মাণ ও সংস্কার করেছি। মানুষ ভিত্তিহীন অভিযোগ করে। আমি তো এলাকায় গিয়ে চাঁদাবাজি করি না। নিয়মিত অফিসও করি, মানুষও আসে আমার কাছে।’

জানা যায়, ২০০৮ সালে ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের মিজানুর রহমান খান দীপু। বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকাকে প্রায় ৩০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শরিক মহাজোটকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে মনোনয়ন পান কাজী ফিরোজ রশীদ। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও মহাজোট থেকে নির্বাচিত হন তিনি। বিএনপির মির্জা আব্বাস এ আসনের এমপি ছিলেন ১৯৯১ ও ২০০১ মেয়াদে। ১৯৯৬ সালে জয়ী হন আওয়ামী লীগের সাবের হোসেন চৌধুরী।

আরএ/এএসএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।