ঢাকা-১৬ আসন
‘জলাবদ্ধ’ মিরপুরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান তিন হেভিওয়েট প্রার্থী
# আসনটিতে দলীয় গ্রুপিং দৃশ্যমান নয়, ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ
# পুলিশ, পুলিশের সোর্স ও দলীয় পরিচয়ে চাঁদাবাজি চরমে
# মাদক দিয়ে ফাঁসানো পুলিশের নিয়মিত কর্মকাণ্ড
ঢাকা-১৬। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২, ৩, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে জাতীয় সংসদের ১৮৯ নম্বর আসনটি। আসনটিতে বড় সমস্যা হলো জলাবদ্ধতা, গ্যাস সংকট ও মাদকের ছোবল। তবে, সরকারের দৃশ্যমান উন্নয়নে সন্তোষ রয়েছে জনমনে। বিশেষ করে মেট্রোরেল, কালশীতে উড়াল সড়ক ও এলাকার প্রধান সড়কগুলোর সংস্কার চোখে পড়ার মতো। এতে বদলে গেছে মিরপুর এলাকার সড়কের চিত্র। এর সুফল ভোগ করছেন মিরপুরবাসী।
এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কথা হলে মিরপুর-১২ এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকা-১৬ আসনে নেতা একজনই, তিনি হলেন এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ। বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে স্কুলের অনুষ্ঠান, ওয়াজ-মাহফিল সবখানে তার সরব উপস্থিতি। এলাকার একাধিক স্কুল ও বাজারের নেতৃত্বে তার মনোনীত লোকজন।
আরও পড়ুন>> জরিপের ভিত্তিতে যোগ্যরা মনোনয়ন পাবেন: শেখ হাসিনা
তিনি বলেন, ‘ইতিবাচক দিক হলো- রাস্তাঘাট মোটামুটি ভালো, এলাকায় মাস্তানি, কিশোর গ্যাং কম। সকালে ও রাতে রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া হয়। এমপি তার বাসভবনে সবার কথা শোনেন। আর নেতিবাচক দিক হলো- একটু বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। পুলিশ ও পুলিশের সোর্স এবং দলীয় পরিচয়ে চাঁদাবাজি চরমে। মাদক দিয়ে ফাঁসানো পুলিশের নিয়মিত কর্মকাণ্ড। এছাড়া ফুটপাত দখল করে চাঁদাবাজি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজেদের লোক বসিয়ে শিক্ষার মান নষ্ট করা হয়েছে।’
‘এখানে দলাদলি বা গ্রুপিং দৃশ্যমান নয়। এমপি তার মতো কাজ করছেন। অন্যরাও নীরবে কাজ করছেন। প্রকাশ্যে কেউ কারও বিরোধিতায় নেই। দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ।’
এ আসনের আরেক বাসিন্দা তৌফিক মাহমুদ বলেন, এখানকার বড় সমস্যা ‘মাদক’। আছে তৈরি পোশাকের কারখানা ঘিরে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই অনেক এলাকার রাস্তা তলিয়ে যায়। এর মধ্যে পল্লবীর ‘বি’ ব্লক, কালশী, বাউনিয়া বাঁধ এলাকা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ইস্টার্ন হাউজিং আবাসিক এলাকা, আলবদী গ্রামে সড়ক ভাঙাচোরা।
আরও পড়ুন>> সংবিধান অনুযায়ী সঠিক সময়ে নির্বাচন করব: ইসি হাবিব
তিনি বলেন, ‘আগামীতে সন্ত্রাসমুক্ত, জনবান্ধব এবং নাগরিক সমস্যাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান করবেন এমন নেতৃত্ব চাই।’
দীর্ঘদিন আসনটির নেতৃত্বে মোল্লা পরিবার। গত তিন মেয়াদে এখানের এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ। তার পাশাপাশি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল হোসেন।
‘দীর্ঘদিন রাজনীতি করি এখানে। এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। স্বাভাবিকভাবেই আমি মনোনয়নের জন্য আবেদন করবো। তারপরও আমি যেহেতু দলের একটা দায়িত্বে আছি, দলীয় নির্দেশনা তো নিশ্চয়ই থাকবে। সেটা মেনেই চলবো।’
আসনটির ইতিবাচক দিক হলো- এখানে দলীয় গ্রুপিং দৃশ্যমান নয়। এমপি তার মতো কাজ করছেন। অন্যরাও নীরবে কাজ করছেন। প্রকাশ্যে কেউ কারও বিরোধিতায় নেই। দলীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ।
আরও পড়ুন>> বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঢুকতে চাচ্ছে আন্তর্জাতিক মোড়লরা
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি যেহেতু এ আসনে থাকি। দীর্ঘদিন রাজনীতি করি এখানে। এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। স্বাভাবিকভাবেই আমি মনোনয়নের জন্য আবেদন করবো। তারপরও আমি যেহেতু দলের একটা দায়িত্বে আছি, দলীয় নির্দেশনা তো নিশ্চয়ই থাকবে। সেটা মেনেই চলবো।’
‘মানুষের সঙ্গে মিশি, সবার সঙ্গে যোগাযোগ আছে, সম্পর্ক রাখি। সময় হলে মনোনয়নও চাইবো। আমি তো নোংরামি করি না। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এ ধরনের কর্মসূচিও দিই না। যতটুকু সম্ভব হয় মানুষের পাশে থাকি।’
ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘রাজনীতি যেহেতু করি, প্রত্যাশা তো থাকবেই। মানুষের সঙ্গে মিশি, সবার সঙ্গে যোগাযোগ আছে, সম্পর্ক রাখি। সময় হলে মনোনয়নও চাইবো। আমি তো নোংরামি করি না। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এ ধরনের কর্মসূচিও দিই না। যতটুকু সম্ভব হয় মানুষের পাশে থাকি।’
আরও পড়ুন>> সংগঠন গোছানো-ভোটারদের কেন্দ্রে আনাই আওয়ামী লীগের বড় চ্যালেঞ্জ
এলাকার সমস্যা ও দলের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে জানতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহর মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। খুদেবার্তা পাঠিয়েও জবাব পাওয়া যায়নি।
পল্লবী ও রূপনগর থানা ঘিরে ঢাকা-১৬ আসন। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৩৪০। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৮৩ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৮৫ হাজার ১৫৭। এ এলাকায় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিরোধীদেরও সাংগঠনিক অবস্থান ভালো। সব দল ভোটে অংশ নিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে চরম।
এসইউজে/এমএএইচ/জিকেএস