নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ: জি এম কাদের
আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের। শনিবার (১৪ অক্টোবর) চট্টগ্রামের কাজীর দেউরিতে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে মহানগর জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সম্মেলনে জি এম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি ক্ষমতার জন্য যুদ্ধ করে না, জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করে। বর্তমান সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা কুক্ষিগত করেছে। ভোটারাধিকার ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকারের দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে বাংলাদেশ এখন দেউলিয়ার পথে।
তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতার জন্য যুদ্ধ করছি না। আমরা নিজস্ব রাজনীতির জন্য যুদ্ধ করছি। এখনই হয়তো ক্ষমতায় যেতে পারবো না। যখনই যেতে পারবো জনগণের জন্য কাজ করে জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে চাই। যেটা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পারেনি। তার অপেক্ষায় আছে জাতীয় পার্টি। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে জাতীয় পার্টি।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী সময়মতো নির্বাচন করতে চায়। আর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন করবে না বলে বিএনপি আন্দোলন করছে। দেশ এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। প্রধান দুটি দল একমঞ্চে, এক টেবিলে এসে সব দলের গ্রহণযোগ্য একটি ফর্মুলা তৈরি করুক, যাতে সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেয়।
জি এম কাদের বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনা বা আওয়ামী লীগের বি-টিম হওয়ার জন্য আমরা রাজনীতি করি না। ৯০ এর পর দুঃশাসন, দুর্নীতি, অবিচার, গুম-খুন ও দলীয়করণ করেছে বিএনপি। তাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে দুর্নীতি, বৈষম্য থেকে দেশকে উদ্ধার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ঠিক তার উল্টো কাজ করেছে। দেশকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেললো। একদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, ডিসি, এসপি, পুলিশ, প্রশাসন ও সুবিধাভোগী গোষ্ঠী তৈরি করা হলো। লাঠিয়াল বাহিনী তৈরি করে দেশকে শাসন-শোষণ করতে লাগলো। ৫-১০ শতাংশ লোকে আওয়ামী লীগ করে বাকি ৯০ শতাংশ লোককে বাইরে রাখলো। তাই এখন আওয়ামী লীগ নিজেরাই ভীত। তারা বলছে, ক্ষমতা ছেড়ে গেলে মহাবিপদ আসতে পারে। পুলিশ সঙ্গে না থাকলে বিপদে পড়বে। কেন? দেশভাগ করার ফলশ্রুতির কারণে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়াও সাইবার সিকিউরিটি আইন করে মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করেছে। সরকারের বিরুদ্ধে কেউ বললে রাষ্টদ্রোহী বলে আখ্যায়িত করতে পারবে সরকার। গ্রেফতার ও জেল হতে পারে। দেশে গণতন্ত্র নেই। মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ এখন দেউলিয়ার পথে মন্তব্য করে বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করে দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। ব্যাংকগুলো খালি করে দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি, ব্যাংক খালি ও টাকা পাচার এবং মেগা প্রকল্পগুলোয় বিপুল অঙ্কের লস যাচ্ছে। মেগা প্রকল্পের টাকাগুলো সামনের দিকে শোধ করতে হবে। উন্নয়নের নামে লুটপাট হয়েছে। রিজার্ভ কমে আসছে। দুর্নীতির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। দেশ এখন গভীর সংকটে রয়েছে। বাংলাদেশ এখন দেউলিয়ার পথে।
জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট করে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যায়। তখন বাংলাদেশে ২১ হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি ছিল। এখন দেড় লাখ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের নামে সরকার নিজেদের কয়েকজন ব্যবসায়ীকে বসিয়ে বসিয়ে এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ব্যাংক লুট ও টাকা পাচার করে খেয়েছে। বিএনপিও হাওয়া ভবন করে দুর্নীতি করেছে। দুই দল-ই লুটপাট করে খেয়েছে। আগামী নির্বাচনে জাপার সঙ্গে সমঝোতা করার জন্য বড় দুই দল মরিয়া হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে মহাসচিব বলেন, বিএনপি বলে কাদের সাহেব কয়টি আসন লাগবে। আর আওয়ামী লীগ বলে ছেড়ে যাবেন না। আগামীতে মূল্যায়ন করা হবে। জাতীয় পার্টি এখনও কারও তাবেদার হতে চায় না।
ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, জাতীয় পার্টির জন্ম ক্যান্টনমেন্টে নয়। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এর জন্ম হয়েছে। একমাত্র জাতীয় পার্টিই মানুষের সুখ-দুঃখের কথা বলে। আর অন্যরা ক্ষমতায় গিয়ে লুটপাট আর দুর্নীতি করেছে।
চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. সোলায়মান আলম শেঠ সভাপতিত্ব করেন অনুষ্ঠানে। উদ্বোধন করেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি। প্রধান বক্তা ছিলেন দলের মহাসচিব অ্যাডভোকেট মো. মুহিবুল হক চুন্নু। অতিথির বক্তব্য রাখেন কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মো. জহিরুল ইসলাম, মোস্তফা আল মাহমুদ, এসএম ফয়সাল চিশতী। বক্তব্য রাখেন মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক মো. এয়াকুব হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। সম্মেলনের সোলায়মান আলম শেঠকে পুণরায় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক মো. এয়াকুব হোসেনকে সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং জাফর মাহমুদ কামালকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
ইকবাল হোসেন/এমডিআইএইচ/এসএনআর/এএসএম