প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরছে বিএনপির আলটিমেটাম!
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে দলটির নেতারা সরকারকে যে আলটিমেটাম দিয়েছিলেন তা কার্যত প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরছে। কোনো ফলাফল দৃশ্যমান না হওয়ায় দলের ভেতরেও চলছে নানা আলোচনা। হুঁশিয়ারি যারা দিয়েছেন তাদের প্রতি বিরক্ত অনেক নেতাকর্মী। তারা যদিও প্রকাশ্যে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থতার ভয়াবহতা জানাতেই এমন আলটিমেটাম! কিন্তু মুখ ঘোরাতেই সুর পাল্টিয়ে বলছেন, আলটিমেটাম দিয়ে নয়, সরকারের পতন ঘটানো ছাড়া খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা হবে না।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর (রোববার) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার সময় সীমা বেঁধে দেন। এরপর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও বলেন, এই সময়সীমার মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে পরিণাম শুভ হবে না। বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হলেও খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা তথা বিদেশ চিকিৎসার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
আলটিমেটামের পর সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখতে পাইনি। আইনমন্ত্রী বলে দিয়েছেন এটা সম্ভব না। তারা আলটিমেটামকে থোরাই কেয়ার করছে। কিন্তু এটা তাদের জন্য শুভ হবে না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে দেশের মানুষ ছেড়ে দেবে না।
আরও পড়ুন: ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামের পর কী করবে বিএনপি?
যদিও এর পরের দিন সোমবার ধোলাইখালের এক সমাবেশে অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব তার এই আলটিমেটামের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘আজকে তিনি (খালেদা জিয়া) জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। শরীর এতোই বেশি অসুস্থ যে, ডাক্তাররা বলছেন অবিলম্বে দেশের বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা দরকার। সেই কারণে আমরা গতকাল বলেছি, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আপনারা তার বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় এর সব দায়-দায়িত্ব এই সরকারকে নিতে হবে।’
৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামের প্রতিফলন আমরা মনে করি সুস্থ স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক সরকারের যে প্রতিক্রিয়া, সেই প্রতিক্রিয়াটা কর্তৃত্ববাদী শাসকের কাছ থেকে প্রত্যাশা না করাটাই ভালো।
সূত্র জানায়, ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম ঘোষণা নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা অন্ধকারে ছিলেন। এর আগের দিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাই এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ কৌতূহল ছিল। তাদের ধারণা, সরকারের সঙ্গে ভেতরে ভেতরে এক ধরনের আলোচনা চলছে, যেটাকে আরও ফলপ্রসূ করতেই আলটিমেটাম। অথবা যদি সরকার দাবি না মানে সেক্ষেত্রে দলের পক্ষ থেকে আরও কঠিন চাপ প্রয়োগ করা হবে। কিন্তু আলটিমেটামের সময়সীমা পার হওয়ার পর দৃশ্যত কোনো উদ্যোগ না থাকায় তাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। যেখানে সরকারের পতন ছাড়া তারা বিএনপির কোনো দাবি মানবে না সেখানে আলটিমেটাম অর্থহীন। মহাসচিবের এই আলটিমেটাম গত বছরের ১০ ডিসেম্বরে ঘিরে আমানউল্লাহ আমানের বক্তব্যের মতো হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়াকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশে নিতে হুঁশিয়ারি ফখরুলের
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে আমাদের মধ্যে যেমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে। তেমনি আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচিত হচ্ছে। বিষয়টা আরও জোরালো করতে মহাসচিবসহ কয়েকজন থেকে আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে।
দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে আমাদের মধ্যে যেমন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে। তেমনি আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচিত হচ্ছে। বিষয়টা আরও জোরালো করতে মহাসচিবসহ কয়েকজন থেকে আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে।
নির্ধারিত সেই ৪৮ ঘণ্টা শেষ হওয়ার পর বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, এমন মানবিক একটা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে মহাসচিব আলটিমেটাম দেওয়ার পরও সরকার সেটা বিবেচনা নেয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচিত ছিল এই আলটিমেটামের পর নির্দেশনা দেওয়া। রাষ্ট্র যে এখন মানবিক নেই অমানবিক হয়ে গেছে, সেটাই প্রমাণ হলো। আওয়ামী লীগ সরকার যে বিষয়টা কর্ণপাত করলো না আমি মনে করি এটা তাদের ক্রেডিট না, এটা তাদের দেউলিয়াপনা। এটার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ মানবতার কাছে পরাজিত হলো।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার কিছু হলে পরিণতি শুভ হবে না: আব্বাস
ফখরুল-আব্বাসের এই আলটিমেটাম আমানের সেই আলোচিত বক্তব্যের মতো কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রফিক শিকদার বলেন, সরকারের বিদায়ের সাইরেন বাজছে অপেক্ষা করেন। সরকার আমান উল্লাহ আমানের কথা শুনলে স্যাংশনসের মধ্যে পড়তো না।
সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, আলটিমেটামের পর সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখতে পাইনি। আইনমন্ত্রী বলে দিয়েছেন এটা সম্ভব না। তারা আলটিমেটামকে থোরাই কেয়ার করছে। কিন্তু এটা তাদের জন্য শুভ হবে না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে দেশের মানুষ ছেড়ে দেবে না।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও দলের মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আলটিমেটাম দেওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কোনো উদ্যোগ দেখতে পাইনি। দেশনেত্রীর অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হলে সেটাকে হত্যা হিসেবে আমরা ধরে নেব। তাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে এই সরকার। সরকারের তালবাহানার পরিণতি শুভ হবে না।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামের প্রতিফলন আমরা মনে করি সুস্থ স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক সরকারের যে প্রতিক্রিয়া সেই প্রতিক্রিয়াটা কর্তৃত্ববাদী শাসকের কাছ থেকে প্রত্যাশা না করাটাই ভালো।
কেএইচ/এসএইচএস/জেআইএম