১৫ দিনের কর্মসূচি আরও বাড়ালো বিএনপি
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে চলমান যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বিএনপির ঘোষিত টানা ১৫ দিনের কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা থাকলেও তা আরও দুদিন বাড়িয়ে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে।
দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নতুন করে কর্মসূচি ৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হলো। একই সঙ্গে বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী প্রয়োজনে কিছু কর্মসূচি যোগ হতে পারে।
আরও পড়ুন: টানা ১৫ দিনের কর্মসূচি দিলো বিএনপি
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা জানান।
এর আগে গত সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ১৫ দিনের এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। এটি সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের বিএনপির সপ্তম কর্মসূচি।
কর্মসূচিতে পরিবর্তন বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকার যাত্রাবাড়ী এবং উত্তরের সমাবেশ। একই দিনে বাদ জুমা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় সারাদেশের মহানগর, জেলা, উপজেলা এবং পৌরসভায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
কর্মসূচির প্রথম দিন গতকাল বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা জেলার জিনজিরা, কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে সমাবেশ করে দলটি। আজ বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) কিশোরগঞ্জের ভৈরব-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার-সিলেটে রোডমার্চ কর্মসূচি রয়েছে।
এছাড়া আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর বৃহত্তর বরিশাল পটুয়াখালী রোডমার্চ; ২৪ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবিতে দেশের সব জেলা এবং মহানগরে প্রতিবাদ সমাবেশ; ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরের নয়াবাজার এবং আমীনবাজারে সমাবেশ; ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগের রোডমার্চ; ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় জনসমাবেশ; ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে ঢাকায় মহিলা সমাবেশ; ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় শ্রমজীবী কনভেনশন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের নয়া ভিসানীতিতে শঙ্কা-সম্ভাবনার দোলাচলে বিএনপি!
১ অক্টোবর ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ জেলায় রোডমার্চ; ২ অক্টোবর ঢাকায় কৃষক সমাবেশ; ৩ অক্টোবর ফরিদপুর বিভাগের রোডমার্চ এবং সমাবেশ; ৪ অক্টোবর ঢাকায় পেশাজীবী কনভেনশন এবং ৫ অক্টোবর কুমিল্লা, ফেনী, মিরসরাই ও চট্টগ্রামে রোডমার্চ।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা মনে করছি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যা করছে এটা কোনোভাবেই একটি দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সহায়ক নয়, বরং এর বিপক্ষে যাচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, বিএনপি একটি পলিটিক্যাল পার্টি। আমরা যে কোনো বিষয়ে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করি। এর আগে আমরা সরকারেও ছিলাম বিরোধীদলেও ছিলাম। সেক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের সামনে এসব বিষয় বলা এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা। যে কাজটা আমরা বর্তমানে করছি।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, এত প্রহসন ও গ্রেফতার, মামলা এবং বাধার মুখেও আমরা একেবারে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। আমরা এর শেষ পর্যন্ত যাবো। তবে শেষ পরিণতি কী হবে না হবে, এটা নির্ভর করছে সরকারের ওপর। সরকারের আচরণ কী হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করবে। পাশাপাশি আমাদের আচরণও নির্ভর করবে সরকারের আচরণের ওপর।
এক দফার যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সবশেষ গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় গণমিছিল করে বিএনপি। সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল, জোট ও বিএনপির সমমনারাও নিজ নিজ অবস্থান থেকে এ কর্মসূচি পালন করে। সেটি ছিল সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের বিএনপির ষষ্ঠ কর্মসূচি।
আরও পড়ুন: ‘কাঠগড়ায়’ বিএনপির নেতৃত্ব নির্বাচন
এর আগে এক দফা আন্দোলনের পঞ্চম কর্মসূচি ছিল গত ২৫ আগস্ট। ওইদিন বিএনপি এবং সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল, জোট ও বিএনপির সমমনারা ঢাকায় কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি পালন করে।
গত ১২ জুলাই নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ থেকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। এরপর থেকে এক দফা দাবি আদায়ে রাজপথে ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে দলটি। এসব কর্মসূচিতে সরকারবিরোধী জোটগুলোও সংহতি জানাচ্ছে।
এক দফা ঘোষণার পর গত ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ এবং ২৯ জুলাই ঢাকার সব প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এর আগে গত ১১ ও ১৮ আগস্ট গণমিছিল হয়।
কেএইচ/এমকেআর/জিকেএস