জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে খালেদা জিয়া, গোটা জাতি উদ্বিগ্ন: রিজভী
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাবি করে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জরুরি ভিত্তিতে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছেন বাংলাদেশে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হচ্ছে। কোনো প্রিজনারকে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু কারাবন্দি অবস্থায় বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ বাংলাদেশসহ বিশ্বে অজস্র নজির আছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও কারাবন্দি থাকা অবস্থায় বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছেন।’
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল করে জাতীয়তাবাদী যুবদল। এতে সভাপতিত্ব করেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।
আরও পড়ুন>>> বাংলাদেশকে ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার: ফখরুল
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে চাই, আমার নামে আপনি মানহানি মামলা দিলে দিতে পারেন- আপনার লেখাপড়ায় ঘাটতি আছে। আপনার জানাশোনার ঘাটতি আছে। যে নেত্রী আপনাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানিয়েছেন, আপনি যে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী; আপনার সেই সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০০৭ সালের জুন মাসে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে কারাবন্দি থাকা অবস্থায় কারাগার থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছিল। যদিও তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলেছিল শেখ হাসিনার কানের যে সমস্যা এটার চিকিৎসা বাংলাদেশে হতে পারে। কিন্তু শেখ হাসিনার চিকিৎসকরা যখন বললেন তার উন্নত চিকিৎসা দরকার, তখন তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হলো।’
বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, ‘চিকিৎসকরা তো প্রতিদিনই বলছেন বেগম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। তার চোখে সমস্যা, লিভারে সমস্যা, হার্টে সমস্যা, ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা। সরকারের নিপীড়ন, নির্যাতনের কারণেই বেগম খালেদা জিয়ার ওপর এতগুলো অসুখ আক্রমণ করেছে। তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। গোটা জাতি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। খালেদা জিয়ার কেন উন্নত চিকিৎসা হবে না পররাষ্ট্রমন্ত্রী?’
তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সিস লাভলিনকে সেখানকার একদলীয় কর্তৃত্ববাদী সরকার কারাদণ্ড দিয়েছিল। তিনি সাইবেরিয়া থেকে মস্কো আসার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে তার কারাদণ্ড স্থগিত রেখে তাকে বার্লিনে পাঠানো হলো উন্নত চিকিৎসার জন্য। এটা কি আপনি জানেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী? আজ তো সেই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছেন, তাকে জিজ্ঞাসা করুন কর্তৃত্ববাদী দেশেও এই ধরনের মানবিক আচরণ করা হয়।’
আরও পড়ুন>>> খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে আবার আবেদন
বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘চীনের নোবেল বিজয়ী লুই জিয়াও বু ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে কারাগারে মারা যান। তার স্ত্রী লি জিয়াওকেও কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু যখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন তাকে কিন্তু কানাডা পাঠানো হয়েছিল, উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আপনি কি তা জানেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী? আপনি জানেন না। আপনি কি জানেন সৌদি আরবে ভিন্ন মতের একজন লেখক ও ব্লগার বাদাও গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে স্ত্রী-সন্তানসহ উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠানো হয়েছিল।’
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনাদের এই মানবিক গুণাবলি থাকবে কেন? যে সরকার খুন, গুম করে, বিরোধীদলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য একের পর এক নীল নকশা করে, ধ্বংসযজ্ঞা অবলম্বন করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আপনি তো শুধু চাকরি রক্ষার জন্য শেখ হাসিনার মনমতো কথা বলেন। কোনো মানবিকতা, মানবতা আপনার মধ্যে নেই।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলের কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘আপনি জানেন না বিএনপি কতটা মানবিক। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন আ স ম আব্দুর রব। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে পাঠানো হয়েছিল। শুধু তাই নয় তাকে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর আগে তার গ্রামের বাড়িতে ঘুরিয়ে আনা হয়েছিল। এটা বিএনপির ইতিহাস, মানবতার ইতিহাস, গণতন্ত্রের ইতিহাস। আর যারা গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল করে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচন রাতে করে, দিনের বেলা নির্বাচন করতে সাহস পায় না। তারাই তো অমানবিক, জনগণের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে তিলে তিলে ধ্বংস করার জন্য উন্নত চিকিৎসা হতে দেয় না, কারাগারে আটক রাখে।’
আরও পড়ুন>>> বিএনপির নিরপেক্ষ সরকারের দাবি ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু না: ইনু
তিনি বলেন, ‘এদেশের জনগণ, বিএনপির নেতাকর্মী- সবাই উদ্বিগ্ন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য। তারা দোয়া করছেন, নিশ্চয়ই বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হবেন। আমরা কার কাছে দাবি জানাবো যারা মিথ্যা দিয়ে, অসত্য দিয়ে তাকে আটক করেছে তাদের কাছে চাইবো? উপরে আল্লাহ আছেন, নিচে জনগণ। বেগম খালেদা জিয়া জনগণের নেত্রী, জনগণই রাস্তায় নামছে তার জন্য।’
বিএনপির এ সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমরা তারুণ্যের সমাবেশ দেখেছি। এই তারুণ্যের সমাবেশে যত তরুণ দেখেছি আমার মনে হয় বাংলাদেশে আর কোনো তরুণ ছাত্রলীগ, যুবলীগ করে না। হয় সন্ত্রাসী, না হয় বখাটে- এরাই ছাত্রলীগ-যুবলীগ করে। আর সব শানিত চেতনার তরুণরা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল করে- এটা আমাদের বিশ্বাস।’
যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের পরিচালনায় এসময় উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন প্রমুখ। পরে বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।
কেএইচ/কেএসআর/এএসএম