সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ সমূলে তুলে ফেলতে হবে: কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সাম্প্রদায়িকতা এখনো আমাদের এই স্বাধীন দেশে অগ্রগতির পথে, স্বাধীন দেশের বিকাশের ধারার অন্তরায় রয়ে গেছে। কবি কাজী নজরুল ইসলামের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ থেকে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিষবৃক্ষকে সমুলে উৎপাটন করতে হবে।
রোববার (২৭ আগস্ট) জাতীয় কবি নজরুলের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এই দিনে আজ আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ সমূলে তুলে ফেলতে হবে। আজ আমরা এই শপথ করি। বাংলাদেশের যারা সত্যিকারে বাঙালি তাদের কাছে আমাদের এই চেতনার উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন: কবি নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা
তিনি বলেন, আগস্ট মাস শেষ হয়নি, এই আগস্ট মাস বাঙালি জাতির জন্য ট্র্যাজিডির মাস, এ মাসে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি আমরা, কাজী নজরুল ইসলামকেও হারিয়েছি। নজরুল আগেও প্রাসঙ্গিক ছিলেন এখনও আছেন, তিনি আমাদের যেকোনো সংগ্রামে অপূরণীয়, তিনি চিরদিন আমাদের হৃদয়ে থাকবেন।
এর আগে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কবির সমাধিতে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ও পরে আওয়ামী লীগের পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদনে অংশ নেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, শাজাহান খান, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সবুর, শিক্ষা সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
১৯৭৬ সালের এ দিনে (২৭ আগস্ট, ১২ ভাদ্র) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (তৎকালীন পিজি হাসপাতাল) তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজ তার ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী।
আরও পড়ুন: সৃষ্টিকর্মের জন্য চির অমর হয়ে থাকবেন কাজী নজরুল: ফখরুল
কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস। নজরুলের কবিতা, গান ও সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তার লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে।
নজরুল ছিলেন চিরপ্রেমের কবি। তিনি যৌবনের দূত। তিনি প্রেম নিয়েছিলেন, প্রেম চেয়েছিলেন। মূলত তিনি বিদ্রোহী, কিন্তু তার প্রেমিক রূপটিও প্রবাদপ্রতিম। তাই মানুষটি অনায়াসেই বলতে পারেন, ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন খুঁজি তারে আমি আপনায়।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তিনি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন এবং ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি দেন। জাতীয় কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন।
এসইউজে/বিএ/জেআইএম