রাজনীতি করতে চাইলে চেয়ার ছেড়ে দেন, বিচারকদের আমীর খসরু

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৯:৫৮ পিএম, ২৩ আগস্ট ২০২৩

কোনো বিচারক যদি রাজনীতি করতে চান তাহলে তাকে চেয়ার ছেড়ে দেওয়া (বিচারকের পদ থেকে পদত্যাগ করা) উচিত বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক, সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিয়ে একটি সরকার অবৈধভাবে দেশ পরিচালনা করছে। কিন্তু আজকের এই প্রেক্ষাপটে, ভোট চুরির প্রকল্প এই যে রেজিম এটার মধ্যে কারা আছে? এর মধ্যে আছে, দুর্নীতিবাজ, দুর্বৃত্ত রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, লুটেরা ব্যবসায়ী। আছে বাংলাদেশ আওয়ামী বিচারক লীগ। এটা নতুন এডিশন। ভোট চুরির প্রকল্পে নতুন সংযোজন আওয়ামী বিচারক লীগ।’

বুধবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের আইনজীবী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপির এক দফা দাবির সমর্থনে ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্ট চট্টগ্রামের উদ্যোগে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন সংগ্রাম চালাচ্ছে এর মধ্যে বিচারক লীগ নতুন সংযোজন। আমাদের একটি বিষয় বুঝতে হবে। সেটা হচ্ছে এই বিচারক লীগের ভূমিকা কী? এই যে প্রেক্ষাপটটা সৃষ্টি হয়েছে, বিচার বিভাগের যে নতুন অ্যাক্টর যারা নিজেকে আগে প্রকাশ না করে কাজ করেছেন, এখন নিজেদেরকে প্রকাশ করে করছেন। প্রকাশ করার পেছনে যে বার্তা জাতি পেয়েছে, সেটা হচ্ছে সবচেয়ে বিবেচ্য বিষয়। বাংলাদেশের এই গোষ্ঠী যারা একটি ভোট চুরির প্রকল্পের মধ্যে বাংলাদেশের জনগণের সাংবাধিক, গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে এই প্রকল্পের মাধ্যমে টিকে আছে। তার মধ্যে এই বিচারকলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’

তিনি বলেন, ‘কোর্টগুলোতে এখন প্রতিদিন বাংলাদেশের নাগরিকরা বিচার মাধ্যমে সুরক্ষা তো পাচ্ছেই না বরং অন্যায় ও অবিচারের শিকার হচ্ছে। ভোট চুরি প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিরোধীদলের লাখ লাখ নেতাকর্মীদের প্রতিদিন কোর্টে উপস্থিত থাকতে হচ্ছে। বিচারকের মূল ভূমিকা ও তাদের শপথ হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান এবং বিচারের সুরক্ষা করবেন। তারা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থাকবের। তারা কোনো রাজনীতিতে অংশ নেবের না। এটা কোর্ট ইব কন্ডাক্ট। এটা বিশ্বজুড়ে। রাজনীতিতে ভাবাবেগে প্রভাবিত হয়ে কিংবা নিজের মতামতে প্রভাবিত হয়ে তারা বিচার করতে পারবের না। এটা তো বাংলাদেশে নেই।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘সংবিধান বিচারককে দায়িত্ব দিয়েছে সংবিধান রক্ষা করার জন্য। দেশের মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে ভোটাধিকার হচ্ছে অন্যতম অধিকার। ভোট হচ্ছে গণতন্ত্রের বাহক। ভোট ছাড়া কোনো গণতন্ত্র হতে পারে না। ভোটের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে, সাংবিধানিক অধিকার সে ভোটের মধ্যে প্রকাশ করে।’

তিনি বলেন, ‘এক বিচারক বলেছেন বিচারকরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। অথচ তার দায়িত্ব বাংলাদেশের আইন রক্ষা করা। কোনো দল ক্ষমতায় আসবে এটা কি তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে? তাদের কথাবার্তায় কি প্রকাশ পায় না, তারা কী চাচ্ছেন বাংলাদেশে। বিচারকরা এমন কী উপদেশও দিতে পারেন না। এমন উপদেশ দিতে পারেন না, যেটা তার নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন ঘটতে পারে। যেটা তার রাজনৈতিক ভাবনার প্রতিফলন ঘটতে পারে। এটা হচ্ছে বায়াস্টনেস। এটা তিনি দিতে পারের না।’

আমীর খসরু বলেন, ‘বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে আপনার ভোট কেড়ে নিচ্ছে। নেতা শূন্য, কর্মী শূন্য একটা নির্বাচন তাদের মাধ্যমে করাতে চাচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ৪০ লাখ নামের সঙ্গে আরও কয়েক লাখ যুক্ত হচ্ছে। প্রতিদিন এখন হেয়ারিং হচ্ছে। আবার সেই নির্দেশ আসছে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে। পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে চিঠিগুলো সহজে গণমাধ্যেমগুলোতে দেখা যাচ্ছে। তারা বিচারবিভাগকে নির্দেশ দিচ্ছে প্রতিদিন যেতে হবে সাক্ষী দিতে। যে পুলিশ অফিসার সাক্ষী দেবে না তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিচারকদের বলা হয়েছে দ্রুত বিচার শেষ করে দলকে নেতাশূন্য করে এমন নির্বাচনী পরিবেশ করা যাতে তারা আবার ক্ষমতা দখল করতে পারে। এইসব বিচারক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন, রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত ও লুটেরা ব্যবসায়ী এদের সবার কাজ কিন্তু একটাই। সেই দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণকে বাইরে রেখে আবার ক্ষমতা দখলে আওয়ামী লীগকে সহায়তা করা। এইসব বিচারক যারা এসব কাজ করছেন তারাও কিন্তু ভোট চুরি প্রকল্পের একটা অংশ। যেসব বিচারক ভোট চুরির প্রকল্পের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত একটি দলকে ক্ষমতায় নেওয়া জন্য, আপনারা আপনাদের চেয়ার থেকে অব্যাহতি নিয়ে শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ হয়ে যান। কারও কোনো আপত্তি থাকবে না।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘বিচারকের আসনে বসে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামীলীগ দেশের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। সর্বশেষ কাঁচা মরিচকেও সিন্ডিকেট করে খেয়ে ফেলেছে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘বাকশাল থেকে আওয়ামী লীগ হয়েছিল এই জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। শেখ হাসিনা বিদেশে ছিলেন, জিয়াউর রহমানের কারণে দেশে আসতে পেরেছিলেন। জিয়াউর রহমান সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেছিলেন। তাই সরকার সেটাকে ধ্বংস করতে চায়।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘দেশ এখন সংকটকাল পার করছে। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সমগ্র জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সরকার বিচার বিভাগকে শেষ করে দিয়েছে। বিচারপতি এস কে সিনহাকে জোর করে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার যা চায় বর্তমান বিচারকরা তাই রায় দিচ্ছেন। তারেক রহমান ও ডা. জোবায়দা রহমানের রায়ও এ ধরনের বিচারপতিদের কাছ থেকে এসেছে। আগামীতে এদেরকে বর্জন করা হবে।’

অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দীন সরকার বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন আজ ভূলুণ্ঠিত। বর্তমান সরকার জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। সারা বাংলাদেশকে কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। তারা ১৮ সালের নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করেছে। তারা এখন মৃত ব্যক্তির জানাজাও পড়তে দেয় না। তাদেরকে আর বিশ্বাস করা যায় না। শেখ হাসিনার অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে যাবো না। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের আহ্বায়ক সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার। প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট জহুরুল আলমের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট এ এস এম বদরুল আনোয়ার, বাংলাদেশ ইসলামিক লইয়ার্স কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দীন সরকার, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দীন চৌধুরী প্রমুখ।

ইকবাল হোসেন/কেএসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।