বিএনপি বিদেশিদের কাছে অনেক অনুনয়-বিনয় করেছে: তথ্যমন্ত্রী
বিএনপি গত কয়েক বছর ধরে বিদেশিদের কাছে গিয়ে অনেক অনুনয়-বিনয় করেছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, শেষ-মেষ দেখতে পেল, তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি বিদেশিরা কোনো সমর্থন জানালো না। তারা যেভাবে চেয়েছিল, সেভাবে কিছুই হচ্ছে না। এখন তারা ভিন্ন সুরে কথা বলা শুরু করেছে।
শুক্রবার (১১ আগস্ট) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা এসব কথা বলেন তিনি। জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট।
তিনি বলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র কি বললো, তাতে কিছু আসে যায় না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বাংলাদেশে আসার পর বিএনপি আশা করেছিল, তিনি তাদের অভিযোগ, অনুনয়-বিনয়, দাবির ব্যাপারে কিছু একটা বলবেন। কিন্তু তিনি কিছুই বলেননি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল এসেছিল, তারাও কিছু বলেনি। অর্থাৎ, তারা বুঝতে পেরেছে বিদেশিদের পেছনে ছুটে কোনো লাভ নেই। রাত-বিরাতে মহিলা নেত্রীদের সাজগোজ করিয়ে বিদেশিদের কাছে ধর্না দেওয়া বন্ধ করতে বিএনপির প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। বলেন, এই দেশ বাংলাদেশের মানুষের, অন্য কারও নয়। যদি যেতে হয়, তাহলে জনগণের কাছে যেতে হবে। বিদেশিদের কাছে গিয়ে কোনো লাভ নেই। রাত বিরাতে মহিলা নেত্রীদের সাজগোজ করিয়ে নিয়ে বিদেশিদের কাছে ধর্না দেওয়া দয়া করে বন্ধ করুন। এতে কোনো লাভ হয় না। ওরাসহ (মহিলা নেত্রী) আপনারা যান, আমরা (সরকার) জানি।
তিনি আরও বলেন, চার থেকে সাড়ে চার মাসের মধ্যে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে গেছে, সেটি সমগ্র বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে এবং হয়েছে। আমরা গত পরশুদিন ভারত সফর করে এসেছি। ভারত সফরকালে আমরা যাদের সঙ্গে দেখা করেছি, আলাপ করেছি, তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, ভবিষ্যতেও যেন এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে এবং বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যেন বজায় থাকে।
কিন্তু এই স্থিতিশীলতা নষ্ট করার জন্য আজকে বিএনপি ও তার মিত্ররা উঠে পড়ে লেগেছে অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, আজকে নাকি তারা গণমিছিল করবে। গণমিছিল থেকে যদি মানুষের ওপর হামলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা হয়, মানুষের সহায়-সম্পত্তি নষ্ট করা হয়, তাহলে আমরা ছেড়ে দেবো না। আমরা জনগণকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।
বিএনপির অপরাজনীতি বন্ধ করা দরকার জানিয়ে তিনি আরও বলেন, জ্বালাও-পোড়াও করে কোনো লাভ হয়নি, হবেও না। বিএনপি এমন একটি দল, যে দল করলে কোনো নির্বাচন করা যাবে না। মেম্বার, কাউন্সিলর, উপজেলা, চেয়ারম্যান কোনো নির্বাচন করা যাবে না। নেতাকর্মীদের কি ঠেকা পড়েছে, সেই দল করে তারেক রহমানের লাঠিয়াল বাহিনী হওয়ার। বিএনপিকে এখন তারেক রহমান তার লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করছে। তারেক রহমান যতদিন নির্বাচন করতে পারবে না, ততদিন কেউ বিএনপি করলে মেম্বার নির্বাচনও করতে পারবে না। অন্য নির্বাচন তো দূরের কথা। এই হচ্ছে এখন বিএনপির নীতি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, আগামী নির্বাচন বর্জন করলে বিএনপি বুঝতে পারবে, কম্বল বাঁচাতে গিয়ে কম্বলটাই উজার হয়ে গেছে। আগামী নির্বাচন বর্জন করলে বিএনপি বুঝতে পারবে, বিএনপি বর্জন করলেও তাদের নেতারা বর্জন করেনি, করবে না।
বিএনপিকে গণতন্ত্রের পথে হাঁটার অনুরোধ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রের পথে হাঁটলে তাদের লাভ হবে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের জিজ্ঞেস করতে চাই, আপনারা আর কতদিন আপনাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত অনুসরণ করবেন? আপনাদের দল আজকে খাদের কিনারায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন খাদের মধ্যে পড়ে যাওয়া বাকি আছে। আগামী নির্বাচন বর্জন করলে খাদের মধ্যে পড়ে যাবে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সম্পর্কে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, তার সহযোগিতা ছাড়া বঙ্গবন্ধু যে অসাধ্য সাধন করেছেন, যেভাবে একটি ঘুমন্ত জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের মূল মন্ত্রে উজ্জ্বীবিত করে এক সাগর রক্ত পাড়ি দিয়ে স্বাধীনতার বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন, স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে এনেছেন, সেটি সম্ভব হতো না। শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা এই উত্তরণের ক্ষেত্রে বঙ্গমাতার বিরাট ভূমিকা ছিল। বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে থাকতেন, তখন বঙ্গমাতা সব সময় সংসার সামলেছেন।
তিনি আরও বলেন, একজন নিভৃতচারী, মহিয়সী নারী ছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। একেবারে একজন সাধারণ নারী হিসেবে তিনি জীবন-যাপন করেছেন।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, বঙ্গমাতা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একমাত্র সহচর। যিনি সুখে, দুঃখে সব সময় ছায়ার মতো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন। বঙ্গমাতার জীবনী থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজকে বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। আওয়ামী লীগ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে তাহলে পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই আমাদের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই আমাদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আসারারুল হাসান আসুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাড. বলরাম পোদ্দার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুর রহমান টিটু।
এএএম/এসএনআর/জিকেএস