ভিশন ২০৩০ ঘোষণা খালেদার
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে সংসদ থেকে ছিটকে পড়া বিএনপি ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শনিবার দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে ভিশন ২০৩০ রূপরেখা তুলে ধরেন।
সকাল ১০টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কাউন্সিল শুরু হয়। সাড়ে ১০টার দিকে সেখানে পৌঁছানোর পর ১২টা ৫০ মিনিটে বক্তব্য শুরু করেন খালেদা।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, অংশীদারিত্বমূলক সামাজিক ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা বিএনপির লক্ষ্য। বিএনপি বিশ্বাস করে জনগণই সকল উন্নয়নের চাবিকাঠি।
কাউন্সিলে আগত সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করা বক্তব্যে খালেদা জিয়া কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন ভাষা শহীদদের। ধন্যবাদ জানান ভারতসহ যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছেন তাদের।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন খালেদা জিয়া। স্মরণ করেন জিয়াউর রহমানসহ জাতীয় নেতাদেরও। দলের চেয়ারপারসন হিসেবে আবারো আস্থা ও আকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করার জন্য নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, বৈধ সরকার নেই, সুশাসন নেই, ন্যায় বিচার নেই, নারীর সম্মান ও মানবাধিকার বিপন্ন, নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা নেই।
তিনি বলেন, জাতিকে উশৃঙ্খল, দিশেহারা করা হয়েছে। জাতিকে আবার ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সকল স্তরে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। বিএনপির পরম গৌরবের বিষয় হচ্ছে শহীদ জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র এনেছেন।
শুধু বিএনপিই পারে ইতিবাচক এবং ভবিষ্যত রাজনীতি করতে- এমন দাবি করে তিনি বলেন, এটা শুধু কথার কথা না। আমরা যা বলি তা বাস্তবায়ন করি। আমরা বিনামূল্যে ঘরে ঘরে চাকরির কথা বলে মিথ্যা বলি না।
জাতিকে পেছনে ঠেলে দেয়ার নষ্ট রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে ভবিষ্যত অন্ধকার বলেও হুঁশিয়ার করে দেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
ভিশন ২০৩০ রূপরেখায় মানবাধিকার, সুশাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি দূর করার অঙ্গীকার করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা ভারসাম্য করতে সংসদীয় গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে সংস্কারের কথা বলেন তিনি।
জাতীয় সংসদ দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার কথাও আসে তার বক্তব্যে।
সকল স্তরে ব্যাপক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, স্থানীয় সরকারকে সুশাসনের সহায়ক পরিবেশ করে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করার প্রতিশ্রুতি দেন খালেদা জিয়া।
দুর্নীতি বন্ধ করতে ন্যায়পাল পদ কার্যকর করার কথা বলেন বিএনপিপ্রধান।
খালেদা জিয়া বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বিএনপি সবসময় তৎপর। সন্ত্রাস দমনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমরা একযোগে কাজ করে যাবো। দেশের ভূখণ্ডে কোনো সন্ত্রাসী বা বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা মেনে নেব না। এর বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলতে কার্যকর ব্যবস্থা নেব।
তিনি বলেন, শুধু ধনীদের নয়, দরিদ্রদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। এক দশকের মধ্যেই দেশ থেকে নিরক্ষতা দূর করা হবে। বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিকায়ন করা হবে। শিক্ষা বিস্তারের জন্য আলাদা টিভি চ্যানেল খোলার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথাও বলেন খালেদা জিয়া। বলেন, মেয়েদের স্নাতক এবং ছেলেদের জন্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত অবনৈতিক শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়াও প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার গুরুত্বের কথা বলেন তিনি।
কাউন্সিলে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্যসহ বেশ কয়েকজন বিদেশি অতিথি অংশ নেন। তাদের সামনে খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি অন্য কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না, একইভাবে বিএনপি আশা করে অন্য কোনো দেশ বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। প্রতিবেশিদের সঙ্গে সততার মাধ্যমে সম্পর্ক রাখার কথা বলেন।
তিনি বলেন, সুন্দরবনসহ জাতীয় ঐতিহ্যসমূহ রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সড়ক রেল ও নৌপথের সংস্কারের কথা বলেন খালেদা জিয়া। দরিদ্র, বস্তিবাসী এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আবাসন নিয়ে ব্যাপক চিন্তা রয়েছে খালেদা জিয়ার নতুন ভিশন ২০৩০-এ।
এমএম/এনএফ/এমএস