সন্ত্রাসীদের পক্ষে দালালি করছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো: হানিফ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৩৯ পিএম, ০৫ আগস্ট ২০২৩

 

‌‘বি‌রোধীদলের মতপ্রকাশে আওয়ামী লীগ সরকার অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছে- মানবাধিকার সংস্থাগুলোর এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, কী চান আপনারা? কার পক্ষে, কোন খেলায় নেমেছেন? আপনাদের এ বক্তব্যগুলো মনে হয় সন্ত্রাসী, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পক্ষে নির্লজ্জ দালালি ছাড়া আর কিছু নয়। জাতি আপনাদের এসব বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার (৫ আগস্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি কয়েকদিন আগে সমাবেশ করার পর ঢাকার প্রবেশমুখ অবরোধ ঘোষণা দিল। তারা অবস্থান নিয়ে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি চলাচল বন্ধ করলেন। এরকম কর্মসূচি কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আছে। আপনি রাস্তা বন্ধ করে দিলেন এটা তো কোনো কর্মসূচি হতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছে তখন পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা করে আহত করে দেয়া হয়েছে। রাস্তায় গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে। আর সেটার জন্য আজকে মানবাধিকার সংস্থা থেকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, সরকার অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করছে।

পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনা করে হানিফ বলেন, আজকে কারপক্ষে ওকালতি করছেন? যে তারেক রহমানের বিপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বাসেডর জেমস মরিয়াটি ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন। সেই রিপোর্টে পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন, তারেক রহমান অত্যন্ত ভয়ংকর, দুর্ধর্ষ, দুর্নীতিপরায়ণ সন্ত্রাসী এবং সহিংসতার প্রতীক। এটা আমাদের কথা নয়। এ কথা বলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সেই সময়কার রাষ্ট্রদূত। আজকে সেই ব্যক্তি এত ভালো হয়ে গেল তাদের রাজনৈতিকভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে তাদের নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত করে সরকার উৎখাত করার খেলায় মত্ত হতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা আজকে আহ্বান জানাবো, সেই সব বিদেশি সংগঠন, বিদেশি দূত বা যারা আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন, উন্নয়ন সহযোগী দেশ হিসেবে অনেক বিষয়ে আপনাদের কথা বলার সুযোগ আছে। কিন্তু দয়া করে এ ধরনের একজন প্রতিষ্ঠিত সন্ত্রাসী আপনাদের অভিযোগে অভিযুক্ত, কয়দিন আগেও কানাডার ফেডারেল আদালত পঞ্চমবারের মতো সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যায়িত করেছে বিএনপিকে। এরকম একটি দল নিয়ে দেশের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করবেন না। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে মদদ দেবেন না।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল সম্পর্কে হানিফ বলেন, শেখ কামাল ছিলেন তারুণ্যের অহংকার, আমাদের যুবসমাজের অহংকার। তিনি শুধু একজন ছাত্র নেতা নয়, লেখাপড়ার পাশাপাশি একজন দক্ষ ক্রীড়াবিদও ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই তার ছিল বহুমাত্রিক প্রতিভা। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী, নম্র, ভদ্র ও সদালাপী। আমাদের দুর্ভাগ্য শেখ কামাল ২৬ বছর বয়সে ঘাতকদের নির্মম বুলেটের আঘাতে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।

বাংলাদেশের আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক হিসেবে শেখ কামালের নাম বারবার চলে আসে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, আজকে যে আবাহনী ক্রীড়াচক্র এটা শেখ কামালের হাতে প্রতিষ্ঠিত। তিনি একজন দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন। শুধু ক্রীড়া জগতেই তার পদচারণা ছিল এমন নয়, সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও ছিল তার অবাধ বিচরণ। তিনি অত্যন্ত সংস্কৃতিমনা ছিলেন। স্পন্দন নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। যে সংগঠনের মাধ্যমে সংস্কৃতি জগতে বিকাশ ঘটানোর জন্য কাজ করেছেন।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির পুত্র হয়েও শেখ কামাল অর্থবিত্তের পেছনে কখনো ছুটেননি। তিনি নিরহংকারী ও নির্লোভ মানুষ ছিলেন। অথচ আজকে আামদের দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পুত্র তারেক রহমান, তাকে যদি দেখি এ দুইটা মানুষের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। ২০০১ থেকে ২০০৬ যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন সরকারের মধ্যে সরকার গঠন হয়েছিল। একদিকে তারেক রহমানের মায়ের সরকার আরেকদিকে হাওয়া ভবন বানিয়ে তারেক রহমানের সরকার। এবং হাওয়া ভবনের সরকারই ছিল সবচেয়ে ক্ষমতাধর।

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ওখান (হাওয়া ভবন) থেকে সিদ্ধান্ত হতো। বিশেষ করে প্রকিউরমেন্ট, যা হয়েছে সব হাওয়া ভবন থেকে হয়েছে। কারণ হাওয়া ভবনের কমিশন ছাড়া সেসময় কোনো কাজ হতো না। এক রাষ্ট্রপতির ছেলে ক্রীড়াবিদ, সাংস্কৃতিক সংগঠক। আর আরেকজন রাষ্ট্রপতির ছেলে হাওয়া ভবন বানিয়ে সন্ত্রাস, মানুষ হত্যা করেছে। দু'জনের মধ্যে পার্থক্য খুব স্পষ্ট- বলেন তিনি।

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট দেখলে আজকে দুঃখ হয়। বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা অনেক সময় অনেক কথা বলছেন। সবচেয়ে অবাক হলাম বিএনপি নামক দলটি যে কোনো বিষয়ে কর্মসূচির করার পর দৌড়ে বিশেষ কোনো রাষ্ট্রদূতের অফিসে বা বাসায় যায়। তাদের কাছে রিপোর্ট করার জন্য। এর মানে কি দাঁড়ালো? তার মানে কি দাঁড়ায় বিএনপির এসব কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রদূতের পরামর্শে হচ্ছে?

বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, কাদের নিয়ে আপনারা এদেশের মানবতার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলছেন? এ বিএনপি তারেক রহমানের নেতৃত্বে চলছে। যে তারেক রহমান ক্ষমতায় থাকতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে। হাওয়া ভবন বানিয়ে শুধু দেশের অর্থ লুটপাট করেনি তার বিরুদ্ধে যেন কেউ কথা বলতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছে। আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। আমাদের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করেছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া সাহেব, আহসানুল্লাহ মাস্টার এমপি, নাটোরের মমতাজউদ্দিন আহমেদের মতো সিনিয়র নেতাদের হত্যা করেছিল। আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা, তাকেও হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘একজন (তারেক রহমান) স্বীকৃত সন্ত্রাসী। যার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের। সেই একজন ব্যক্তির নেতৃত্বে যে দল চলছে সেই দল নিয়ে আপনারা মানবাধিকার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। এসব দেখে দেশের মানুষ অবাক হয়ে যায়।’

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সভায় অংশ নেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ।

এসইউজে/এমএএইচ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।