সরকারবিরোধী আন্দোলন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে: আব্বাস

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৪৭ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২৩

সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলন এখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেছেন, স্বেচ্ছাতন্ত্র, উগ্র অহংকার ও একক কর্তৃত্বের মত গণতন্ত্রের নীতিবিরোধী সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার জোর প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে এ আন্দোলন চলছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, দেশ আজ চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। মানুষের জান-মাল, বিষয়-সম্পত্তি আজ চরমভাবে বিপন্ন। নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ কোনো বয়সের মানুষই নিরাপদ নয়। মানুষ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসনের যাঁতাকলে গণতন্ত্রের সর্বশেষ চিহ্নটিও মুছে ফেলা হয়েছে।

তিনি বলেন, মধ্যম ও নিম্নআয়ের মানুষেরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা। বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানিসহ নিত্যব্যবহার্য জিনিস মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। দম বন্ধ করা পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের সামাজিক জীবন অস্থির হয়ে পড়েছে। এরকম শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি আজ ১৫ বছর ধরে দেশে বিরাজমান।

বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার এক কঠিন সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া। তাকে চক্রান্তমূলকভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর চালানো হয়েছে নির্যাতন এবং চক্রান্তমূলক মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাকেও সাজা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার একদফা আন্দোলনে আজ গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংগঠন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বেই এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরে এসেছিল। বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করে। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দল হিসেবে বিএনপি বরাবরই সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে এসেছে। অথচ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে নৃশংস হামলা চালানো হয়েছে। এরপরও বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে।

মির্জা আব্বাস বলেন, গত কয়েকমাস ধরে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ধারাবাহিক কর্মসূচিতে সরকারের পক্ষ থেকে হামলা হলেও বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন কখনোই সহিংসতার পথে পা বাড়ায়নি। সরকারের পক্ষ থেকেই হামলা চালিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের খুন, জখম ও পঙ্গু করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপির সমাবেশ, পদযাত্রা, তারুণ্যের সমাবেশ ইত্যাদি নানা কর্মসূচিতে সরকারি দল বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে হামলা হলেও এর প্রতিবাদ জানাতে বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি থেকে সরে আসেনি এবং কোনো উসকানিতে পা দেয়নি।

মির্জা আব্বাস বলেন, আজ ২৭ জুলাই পূর্ব নির্ধারিত মহাসমাবেশ কর্মসূচি ছিল। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মদিবসের অজুহাত তোলা হয়। অথচ আমরা দেখেছি, আওয়ামী লীগ বা তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো যে কোনো দিবসেই কর্মসূচি পালন করে। তাদের ক্ষেত্রে কোনো বাধা বা অজুহাত থাকে না। আমরা সব দিক বিবেচনা করে মহাসমাবেশ একদিন পিছিয়ে দিয়েছি। আগামীকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন জুমার নামাজের পর দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে আমাদের মহাসমাবেশ হবে। বিলম্বে হলেও আগামীকালের মহাসমাবেশে পুলিশ কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক ভূমিকার জন্য আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, মহাসমাবেশ সফল করতে এরই মধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছি। দলের নেতাকর্মীরা ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মহাসমাবেশে দলে দলে যোগ দেবেন।

এসময় মির্জা আব্বাস মহাসমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে পুলিশের ধরপাড়কের অভিযোগ তুলে বলেন, আমাদের প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গত দুদিনে আটক করা হয়েছে। আমি মনে করি, সরকারের এ সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক এবং নিপীড়নমূলক। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আটক নেতাকর্মীদের মুক্তি দিন। আগামীকালের নয়াপল্টনের মহাসমাবেশে নিরাপত্তা বিধানে সহযোগিতা করুন। আশা করি, সমাবেশে আসার পথে সাধারণ মানুষ এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের কোনো বাধা দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, ঢাকার বিভিন্ন মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। আমাদের নেতাকর্মীদের বাসাবাড়ি ও হোটেল থেকে আটক করা হচ্ছে। একটা কথা পরিষ্কারভাবে আবারও বলতে চাই, বিএনপি কখনো অশান্তির রাজনীতি করে না। বরং ক্ষমতাসীনরাই এখন আমাদের কর্মসূচি দেখে পাল্টা কর্মসূচি দেয়।

মাত্র একদিন আগে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের অনুমতি পাওয়ায় জমায়েত নিয়ে কোনো আশঙ্কা আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপির দিক থেকে কোন আশঙ্কা নেই। বিএনপি স্বল্প সময়ের মধ্যেও লাখ লাখ লোক জমায়েত করতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান এজেড এম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী ও কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কেএইচ/এমকেআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।