রাজনীতির সমাধান রাজপথে হলে সংঘাত অনিবার্য

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫০ পিএম, ২৪ জুলাই ২০২৩

ফের রাজপথে রাজনীতি। সংঘাতের আবহ সর্বত্রই। চরম অনিশ্চয়তা জনমনে। কী ঘটবে এবার! প্রধান দুই রাজনৈতিক জোট নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকলে আবারও কি ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের মতো সংঘাত হতে পারে? নাকি ২০১৪ সালের জ্বালাও-পোড়াও ঘেরে আটকে যাবে জনপথ?

প্রধান বিরোধীদল বিএনপি বলছে, রাজনীতির চলমান সংকটের ফায়সালা হবে রাস্তায়। সরকারি দল আওয়ামী লীগও রাস্তায় থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এরই মধ্যে রাস্তায় থেকেই কর্মসূচি পালন করেছে দুই দল। তাও একই দিনে। মাঠে আছে জোটের শরিক দলগুলোও। একই কায়দায় কর্মসূচি পালন করছে জামায়াতও।

রাজনীতিতে সংঘাত শুরু হয়ে গেছে। সম্প্রতি দুজন মারাও গেলো। আসলে সামনে কী ঘটবে তা বলা মুশকিল। আমরা তো ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে এসেছি। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে এক ধরনের পরিবেশ তৈরি হবে। বিএনপি না এলে আরেক রকম হবে

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন>> ‘সামনের নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বিপদ ঘটবে’

নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘প্রধান দুই রাজনৈতিক জোট ক্রমশই যুদ্ধংদেহী রূপ ধারণ করছে। এটি কোনোভাবেই ভালো লক্ষণ নয়।’

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

একই শঙ্কা প্রকাশ করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে। নইলে সংঘাতের পথ প্রসারিত হবে।’

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন আমলে নিয়ে এই জোট নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করে তুলছে।

আরও পড়ুন>> ‘সাধারণ মানুষের জন্য সাধারণ মানুষকেই জাগতে হবে’

যত বেশি আলোচনা হবে, রাজনীতি তত বেশি সহনশীল হয়ে উঠবে। রাস্তায় সমাধান হলে অতিসহিংসতা দেখা হবে। আগেও তাই হয়েছে। সংঘাত কোনো সমাধানের পথ হতে পারে না

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

টানা তিনবার ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগও মাঠের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। সরকারি দল বিএনপির দাবিকে পাত্তাই দিচ্ছে না। সংবিধানকে উপলক্ষ মেনে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

আগামী ২৭ জুলাই রাজধানীতে পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এমন কর্মসূচিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হলেও এক চুল ছাড় দিতে নারাজ দুই দল।

দুই জোটের এমন অবস্থানে সামনের রাজনীতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছে মানুষ। উদ্বেগ জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও। এমন উদ্বেগের কথা শুনে গেলেন সম্প্রতি সফর করে যাওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘রাজনীতিতে সংঘাত শুরু হয়ে গেছে। সম্প্রতি দুজন মারাও গেলো। আসলে সামনে কী ঘটবে তা বলা মুশকিল। আমরা তো ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে এসেছি। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে এক ধরনের পরিবেশ তৈরি হবে। বিএনপি না এলে আরেক রকম হবে।’

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন>> ‘চোখ-কান খোলা রাখলেই গরিবের কান্না দেখতে পাওয়া যায়’

‘২০১৪ এবং ২০১৮ সালের দুটি নির্বাচনের মডেল জাতির কাছে আছে। কোনো ভালো অভিজ্ঞতা নেই। সামনে কোন মডেল আসবে, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। রাজনীতির কৌশল তো আমরা বলতে পারবো না।’

তিনি বলেন, ‘সরকার নির্বাচনের ছক করে ফেলছে। বিএনপি না এলেও সরকার নির্বাচন করবে, এটি বারবার বলে আসছে। বোঝাই যাচ্ছে, কী ঘটবে। নির্বাচন হয়ে গেলে তো বিদেশিদের চাপে কিছু হয় না। এর আগে তো দেখেছি। নির্বাচন কমিশন স্বাক্ষর করে দিলেই শেষ। কী আর করার থাকে।’

বিজ্ঞাপন

‘ক্ষমতায় যাওয়া আর থাকা ছাড়া তো কোনো কমিটমেন্ট নেই রাজনৈতিক দলগুলোর। আমাদের রাজনীতির সংস্কৃতি সংঘাতের। এর বাইরে তো আমরা ভাবতে অভ্যস্ত নই। আলোচনা করে সমাধান করার মানসিকতা তো কারও নেই। রাস্তায় সব ফয়সালা হলে সংঘাতকে সঙ্গে রাখতেই হয়।’

ড. বদিউল আলম মজুমদার সংকট নিরসনে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যত বেশি আলোচনা হবে, রাজনীতি তত বেশি সহনশীল হয়ে উঠবে। রাস্তায় সমাধান হলে অতিসহিংসতা দেখা হবে। আগেও তাই হয়েছে। সংঘাত কোনো সমাধানের পথ হতে পারে না।’

এই বিশ্লেষক বলেন, ‘পরিস্থিতি সামলে আনতে নাগরিকদের পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। এখন সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব নাগরিক সমাজের। রাজনীতির নামে যা ইচ্ছা তাই হতে পারে না, এটি বোঝাতে হবে নাগরিক সমাজকেই। আমরা চাই আলোচনার মধ্য দিয়ে শান্তি ফিরে আসুক। মানুষ এগিয়ে যাক, দেশ এগিয়ে যাক।’

বিজ্ঞাপন

এএসএস/এএসএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।