ঢাকায় আজ আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশ, সতর্ক পুলিশ
পুলিশের দেওয়া ২৩ শর্তে আজ বুধবার (১২ জুলাই) রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। একই দিনে বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সাদা পোশাকধারী পুলিশও দায়িত্ব পালন করবে বলে জানা গেছে।
বুধবার (১২ জুলাই) বিকেল ৩টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট সংলগ্ন স্থানে শান্তি সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে দলটিকে শান্তি সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন (ডিএমপি) পুলিশ। বিএনপির মতো আওয়ামী লীগও ২৩ শর্ত পালন সাপেক্ষে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: ২৩ শর্তে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি
আওয়ামী লীগকে দেওয়া ডিএমপির শর্তে বলা হয়, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন সাপেক্ষে ১২ জুলাই বিকেল ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট সংলগ্ন স্থানে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হলো।
এদিকে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন ঘিরে আজ বুধবার দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ডিএমপি। দলটিকে সমাবেশ করতে ২৩ শর্ত জুড়ে দিয়েছে পুলিশ।
বিএনপিকে দেওয়া ডিএমপির শর্তে বলা হয়েছে, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ শর্ত যথাযথভাবে পালন সাপেক্ষে ১২ জুলাই দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ের সামনে (পুলিশ হাসপাতাল ক্রসিং থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্থানে) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির উদ্যোগে সমাবেশ করার অনুমতি প্রদান করা হলো।
আরও পড়ুন: বিএনপির ২৩ শর্তেই আওয়ামী লীগকে সমাবেশের অনুমতি
বিএনপির আজকের সমাবেশ ঘিরে রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় চলছে মাইকিংসহ নানামুখী প্রচার। নগরবাসীকে সমাবেশে যোগদানের আহ্বান জানাচ্ছে দলটি। জানা গেছে, এ সমাবেশ থেকে এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।
সবশেষ গত বছরের ৯ ডিসেম্বর ২৬ শর্তে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের কাছে গোলাপবাগ মাঠে গণসমাবেশ করেছিল বিএনপি।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ ঘিরে যা আছে ২৩ শর্তে
১. এ অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
২. স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রের উল্লেখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
৩. অনুমতি পাওয়া স্থানেই সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: জামায়াত ছাড়াই এক দফার আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি
৪. নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।
৫. স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী- নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের চারদিকে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
৬. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলে আগতদের হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রচিতভাবে) চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৮. শব্দদূষণ প্রতিরোধে সীমিত আকারে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করতে হবে, কোনোক্রমেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
৯. অনুমোদিত স্থানের বাইরে প্রজেক্টর স্থাপন করা যাবে না।
১০. অনুমোদিত স্থানের বাইরে, রাস্তায় বা ফুটপাতে কোথাও লোক সমবেত হওয়া যাবে না।
১১. আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময়ে মাইক ব্যবহার করা যাবে না।
আরও পড়ুন: বিএনপির একদফার কর্মসূচি ১২ জুলাই
১২. ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে- এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।
১৩. সমাবেশ কার্যক্রম ছাড়া মঞ্চকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
১৪. সমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টা আগে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে।
১৫. অনুমোদিত সময়ের মধ্যে (দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা) সমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে।
১৬. কোনো অবস্থায়ই মূল সড়কে যানবাহন চলাচল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।
১৭. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়- এমন কার্যকলাপ করা যাবে না।
১৮. রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ বা বক্তব্য প্রদান করা যাবে না।
১৯. উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।
২০. কোনো ধরনের লাঠিসোঁটা/ব্যানার, ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি, রড ব্যবহার করা যাবে না।
২১. আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও কোনো বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।
আরও পড়ুন: বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশে ‘উপেক্ষিত’ তরুণরা
২২. উল্লেখিত শর্তাবলি পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এ অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে।
২৩. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ছাড়া এ অনুমতির আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।
এমকেআর/এমএস