‘রেজা কিবরিয়ার অপসারণ অবৈধ’
গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার অপসারণ সম্পূর্ণ অবৈধ ও প্রতারণামূলক বলে দাবি করেছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গণঅধিকার পরিষদের নয়জন কেন্দ্রীয় নেতা এ দাবি করেন। তবে, কয়েকদিন আগেও তারা দলটির সদস্যসচিব নুরুল হক নুরের পক্ষে ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ড. রেজা কিবরিয়ার কথিত অপসারণ সম্পূর্ণ অবৈধ। আমরা রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধ অপসারণ প্রক্রিয়াকে সমর্থন করি না এবং তিনি দলের আহ্বায়ক হিসেবে বহাল আছেন বলে মনে করি। সেই সঙ্গে আমরা ঘোষণা করতে চাই, ড. রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে যারা কাউন্সিলের দিন নির্ধারণ করেছেন তারা পরিকল্পিতভাবে দলকে ভাঙনের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছেন।
আরও পড়ুন>> মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে দেখা করার কথা স্বীকার করেছেন নুর
নুরুল হক দলের গঠনতন্ত্রের ব্যতয় ঘটিয়ে কীভাবে রেজা কিবরিয়াকে অব্যাহতি দিয়েছেন এসময় সে ব্যাখ্যা দেন ফারুক হাসান।
তিনি বলেন, দলের গঠনতন্ত্রের ৩৮ ধারা অনুযায়ী আহ্বায়কের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস ও অপসারণ করতে হলে কেন্দ্রীয় কমিটির মোট সদস্যের দুই তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ১২১ জন সদস্যের মধ্যে অন্তত ৮১ জন সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হয়। কাজেই মাত্র ৪৫ জন সদস্যের উপস্থিতি বিশিষ্ট সভায় আহ্বায়ককে অপসারণ করা অসম্ভব। অধিকন্তু উক্ত সভায় সদস্যরা গোপন ব্যালটে ভোটগ্রহণের আহ্বান জানালে তা না করে প্রকাশ্যে হাত তুলে সমর্থন জানাতে বলা হয়। ফলে অনেকেই ভোটদানে বিরত থাকেন। কিন্তু সভা শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে রেজা কিবরিয়াকে দুই তৃতীয়াংশের ভোটে অপসারণ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়, যা সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক এবং প্রতারণামূলক।
ফারুক হাসান বলেন, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়ার পক্ষে যারা রয়েছেন, তাদের বক্তব্য কেবল দলের অফিসিয়াল বক্তব্য হিসেবে গৃহীত হবে। নুরুক হক নুর বা বাকিরা কোনো সংবাদ সম্মেলন বা বিবৃতি দিলে তা আনুষ্ঠানিক বক্তব্য হিসেবে বিবেচিত হবে না।
এসময় নুরের বিরুদ্ধে রেজা কিবরিয়া অর্থ লোপাটের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান দলটির আরেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান।
তিনি বলেন, নুরুল হক নুরকে প্রতিমন্ত্রী করার অফার দিয়ে, তাকে ১০টি আসনের অফার দিয়ে সরকার পক্ষে নিতে চেয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নুর সেই অফার গ্রহণ করেছেন নাকি প্রত্যাখান করেছেন তা এখনো তদন্তাধীন। পাশাপাশি ইসরায়েলের নাগরিক ‘মোসাদ’ এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠকে কী কী আলোচনা করেছেন, তা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের নুর জানাননি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
আরও পড়ুন>> গণঅধিকার পরিষদ থেকে অপসারণ, যা বললেন রেজা কিবরিয়া
মিয়া মশিউজ্জামান জানান, পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডের যে ভবনে গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়, ওই ভবনের মালিকানা তার। তাই ভাড়ার লেনদেন হয় না। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বিকাশ ও নগদে সারাদেশ থেকে সাধারণ মানুষের অনুদানে দলটি চলে। পাশাপাশি নিজেদের চাঁদায় তারা দলের নানা কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সাদ্দাম হোসেন ও জাকারিয়া পলাশ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব মো. আতাউল্লাহ, যুগ্ম সদস্যসচিব আবুল কালাম আজাদ, সহকারী সদস্যসচিব মো. শামসুদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন বানচাল করার চেষ্টা নুর পন্থিদের
এদিন দলের একাংশের নেতাকর্মীরা প্রেস ক্লাবে যেন না আসতে পারে সেজন্য বাধা দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানান, নেতাদের প্রেস ক্লাবে আসা ঠেকাতে বাসায় বাসায় লোক পাঠানো হয়েছে।
প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে হট্টগোল করেন নুরপন্থি ৮-১০ নেতাকর্মী। এসময় দলটির যুগ্ম সদস্যসচিব মশিউর রহমান বলেন, এটা অনেক কষ্টে গড়ে তোলা দল। এখানে নুর ও দল বিরোধী কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না। পরে বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলন শুরু হলে তারা চলে যান।
এসএম/ইএ/এএসএম