বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলনের রসদ ‘তারুণ্যের সমাবেশ’
সরকার পতনের আন্দোলনে বিগত কয়েক বছর ধরে কার্যত ব্যর্থ বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ দশ দফা দাবি বাস্তবায়নে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আস্থা এবার তাই তরুণদের ওপর। জ্যেষ্ঠ নেতাদের বয়স, বিশেষ মহলে দলের গোপন তথ্য ফাঁস, বিভিন্ন সময় আঁতাতের অভিযোগসহ নানান কারণে মাঠের আন্দোলনের চাবিকাঠি যাচ্ছে তরুণদের হাতে। এরই অংশ হিসেবে সারাদেশে চলছে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ কর্মসূচি। তবে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে থাকবে জ্যেষ্ঠ নেতাদের কর্তৃত্ব।
বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা যায়। তারা বলছেন, এটা তরুণদের ‘ওয়ার্মআপ’ চলছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে এই নেতারাই মাঠে অবস্থান করে সরকার পতনের আন্দোলন ত্বরান্বিত করবেন।
আরও পড়ুন>>ঈদের পর চূড়ান্ত আন্দোলনে বিএনপির যত চ্যালেঞ্জ
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, দলের সিনিয়র নেতাদের গড় বয়স প্রায় ৮০ ছুঁই ছুঁই। বার্ধক্যজনিত কারণে মাঠের আন্দোলনে ভূমিকা রাখা তাদের জন্য মুশকিল। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে আঁতাত, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার হয়ে দলের গোপন তথ্য ফাঁসের অভিযোগ নিত্য ঘটনা। তাই আন্দোলনের জন্য এবার তরুণদের মাঠে নামানো হয়েছে। যাকে বলে একদম ফ্রেশ ব্লাড। জ্যেষ্ঠ নেতারা শুধু নীতি প্রণয়নে মতামত দেবেন।
এ নীতির আলোকে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল যৌথভাবে সারাদেশে অঞ্চলভিত্তিক ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ শুরু করেছে। গত ১৪ জুন চট্টগ্রামে তারুণ্যের সমাবেশের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯ জুন বগুড়া, ২৪ জুন বরিশালসহ মোট তিনটি তারুণ্যের সমাবেশ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৯ জুলাই সিলেট, ১৭ জুলাই খুলনা এবং ২২ জুলাই ঢাকায় একই কর্মসূচি পালন করা হবে।
আরও পড়ুন>>ঈদের পর কি আন্দোলন আরও চাঙা করবে বিএনপি?
জাতীয়তাবাদী যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু জাগো নিউজকে বলেন, দেশ পরিচালনা করে তরুণরা। যে কোনো কাজেই তরুণদের মুখ্য ভূমিকা থাকে। এখন পরিস্থিতি উত্তরণে তরুণরা ভূমিকা রাখবে। ১৫ বছর ধরে যারা ভোট দিতে পারেনি তাদের একটা আবেদন আছে এই সমাবেশ ঘিরে। এই তরুণরা সরকার পতনের আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করবে এবং সব অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে।
‘ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। সমাবেশগুলো দেখে বোঝা যাবে সব জায়গায় তরুণদের মিলনমেলা ঘটে। আস্তে আস্তে রেসপন্স বাড়ছে। সব মহলে এটা নিয়েই আলোচনা। আমাদের নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নতুন আইডিয়া দিয়েছেন।’
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশে যে বৈষম্য চলছে এর বিরুদ্ধে তরুণরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। আমরা নেতৃত্ব দিচ্ছি। আমরা শক্তিশালী হলে খালেদা জিয়ার হাত শক্তিশালী হবে, তারেক রহমানের হাত শক্তিশালী হবে এবং আমরা যুবসমাজ অধিকার আদায়ের যে লড়াই করছি সেই লড়াই সফল হবে। সেই লড়াই সফল হলে সরকারের পতন হবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, এখানে মানুষের ব্যাপক উচ্ছ্বাস। কয়েকটা নতুন থিম আমরা এনেছি। যারা নতুন ভোটার, ভোট দিতে পারেনি ১৪ বছরে তাদের আমরা এখানে নিয়ে এসেছি। দলীয় বিবেচনায় চাকরি হচ্ছে। মেধার ভিত্তিতে চাকরি হচ্ছে না। শিক্ষিত যুবকরা যারা চাকরিবঞ্চিত হচ্ছে তাদের আমরা নিয়ে এসেছি। প্রত্যেকটা সেক্টরকে আমরা টাচ করছি।
আরও পড়ুন>>ধাপে ধাপে কঠোর কর্মসূচিতে যাবে ‘কৌশলী’ বিএনপি
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া বলেন, তরুণ্যের সমাবেশের মাধ্যমে তরুণ সমাজ উজ্জীবিত। আমরা তরুণদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে রাজপথে আছি।
আয়োজক সংগঠনের শীর্ষ নেতারা অভিযোগ করেন, তারুণ্যের সমাবেশে সরকারের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।
দলের তারুণ্যের সমাবেশ নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, তারুণ্যের সমাবেশ আমার মনে হয় অনেক সাকসেসফুল একটা প্রোগ্রাম। লাখো মানুষ এ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। শুধু আমাদের দলীয় নেতাকর্মীরাই নন, সাধারণ মানুষও যোগ দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল বলেন, এটা একটা ইউনিক আইডিয়া। আমাদের দেশ এখন তরুণরা চালাচ্ছে। কর্মোদ্যম তরুণদের বিএনপি একত্রিত করতে পারছে। আওয়ামী লীগ না করার কারণে ফুটবলার ফুটবল খেলতে পারছে না। মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ না হওয়ায় পুলিশ ভেরিফিকেশনে বিসিএস পরীক্ষায় টিকে উত্তীর্ণ হতে পারেনি তরুণরা- এসব কথা বলতে পারছে। এটা আমি মনে করি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দূরদর্শী চিন্তা। চট্টগ্রামের সমাবেশে অনেক তরুণ এসেছে যারা আমাদের দল করে না।
তিনি বলেন, যে কোনো আন্দোলনে তরুণরাই মূলত নেতৃত্ব দেয়! এখন আমরা হিংসাত্মক মুহূর্তে যাবো না। এক্ষেত্রে তরুণরাই ভূমিকা রাখবে।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মামুন হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত তরুণ ও নতুন ভোটাররা ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য তারুণ্যের এ সমাবেশ। সমাবেশে রেসপন্স ভালো।
সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল বলেন, দেশের তরুণরা সব একত্রিত হচ্ছে। তাদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বেড়েছে। এর মাধ্যমে সরকার পতনের আন্দোলন আরও বেগবান হবে। এটা তো চূড়ান্ত আন্দোলন নয়, চূড়ান্ত আন্দোলন বিএনপিকেই করতে হবে।
সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, তারুণ্যের সমাবেশের মাধ্যমে তরুণ সমাজ উজ্জীবিত হচ্ছে। তাদের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। তারা বারবার জীবন দিয়ে প্রমাণ করছে তারা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে।
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন জাগো নিউজকে বলেন, আন্দোলনের নেতৃত্ব এখন নেতাদের কাছে নেই, আন্দোলনের নেতৃত্ব এখন মাঠের কর্মীদের হাতে।
কেএইচ/এএসএ/এএসএম