গাজীপুরের নির্বাচন থেকে অনেক কিছুর বার্তা মিলেছে
আ ন ম এহসানুল হক মিলন। বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ, লেখক ও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইআরআই’র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
আসন্ন নির্বাচন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা, খালেদা জিয়ার মুক্তির মতো বিষয় নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে শেষটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।
জাগো নিউজ: আপনি আগের পর্বে আওয়ামী লীগ সরকারের জোর করে ক্ষমতায় থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। এ অভিযোগ বিএনপির বিরুদ্ধেও আছে। ক্ষমতায় থাকতে বিএনপিও নানা সময় নানা কৌশল নিয়েছে।
এহসানুল হক মিলন: শোনেন, বিএনপি জনগণের রায়ের বিপক্ষে কখনই অবস্থান নেয়নি। আপনারা মাগুরার উপ-নির্বাচনের কথা বলে আসছেন। এক মাগুরা থেকে আওয়ামী লীগ ৩শ মাগুরা তৈরি করেছে। চালুনি যেমন বলে বেড়ায় সুই তোমার পেছনে ছিদ্র আছে!
জাগো নিউজ: আপনার এ অভিযোগ যদি সত্য হয়, তাহলে বিএনপি আন্দোলনে তো ব্যর্থ। মাগুরার এক উপ-নির্বাচনেই বিএনপি সরকারের পতন নিশ্চিত করেছিল আওয়ামী লীগ।
এহসানুল হক মিলন: বিএনপির ব্যর্থতার আগে আপনাকে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট মনোভাবকে গুরুত্ব দিতে হবে। ৩শ মাগুরার উদাহরণ সৃষ্টি করে ক্ষমতায় থাকাটা বিশাল কিছু নয়। স্বৈরাচারেরও একটা সীমা থাকে। আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারের সব সীমা পার করেছে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে উত্তর কোরিয়ার মতো করে ফেলেছে।
এক মাগুরার কারণে আপনি প্রতিটি আসন মাগুরার মতো করে ফেলতে পারেন না।
জাগো নিউজ: আওয়ামী লীগের এই শক্ত অবস্থানের দায় বিএনপিরও।
আরও পড়ুন>> ‘আমরা তো ফাঁদে পা দিতে পারি না’
এহসানুল হক মিলন: আপনি কেন বিএনপিকে দায় দেবেন? আওয়ামী লীগ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করলো, তখন আমরা আওয়ামী লীগের দাবি গ্রহণ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলাম। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলাম।
জাগো নিউজ: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে মাসের পর মাস আওয়ামী লীগও আন্দোলন করেছে। হরতাল করেছে, অবরোধ করেছে। বিএনপি অতো সহজে মেনে নেয়নি, যত সহজে আপনি বললেন।
এহসানুল হক মিলন: ১৯৯৪ সালে মাগুরার ঘটনা ঘটেছিল। সেই প্রেক্ষাপটেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতিষ্ঠা পেল। একটি সুস্থ পরিবেশে রাজনীতি, জাতি চলে এলো। আবারও সেই অসুস্থ পরিবেশ কে তৈরি করলো। আজ ৩শ আসনে কে হরিলুট করছে? কারা এজন্য দায়ী আপনি সে দিকটা বিবেচনা করবেন না?
২০০৮ সালে আমি নির্বাচনে জিতেছি, উচ্চ আদালত আমার পক্ষে রায় দিয়েছেন। এরপরেও আমাকে সংসদে যেতে দেওয়া হয়নি। এই স্বৈরাচারী অবস্থা তো আপনাকে বিবেচনায় আনতে হবে।
আওয়ামী লীগ যা ইচ্ছা তাই করবে, তা তো হতে পারে না। আমরা আওয়ামী লীগকে একেবারে ছাড় দেইনি। আন্দোলন হচ্ছে ও জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে।
জাগো নিউজ: বিএনপি আন্দোলন করছে তারেক রহমানকে দেশে ফেরানো, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। এর সঙ্গে জনসম্পৃক্ততার প্রমাণ নেই।
এহসানুল হক মিলন: আমাদের সব আন্দোলন মানুষের মুক্তির জন্য। আমরা যখন আন্দোলনে যাচ্ছি, সরকার তখন হামলা, মামলায় মরিয়া। কোনো সভ্য দেশে তো আপনি এই চিত্র পাবেন না।
আরও পড়ুন>> যুক্তরাষ্ট্রের নয়া ভিসানীতিতে শঙ্কা-সম্ভাবনার দোলাচলে বিএনপি!
আমার বিরুদ্ধে এই সরকার ঘড়ি চুরির মামলা দিয়েছে। ৭০ বছরের বৃদ্ধাকে ধর্ষণের মামলা দিয়েছে। সরকারের এই চরিত্র আরও বেপরোয়া হয়েছে।
জাগো নিউজ: আবারও তারেক রহমান প্রসঙ্গ। তার দেশে ফেরার বিষয়টি নেতাকর্মীরা কীভাবে বিশ্বাস করবেন?
এহসানুল হক মিলন: আমরা মনে করি, বাংলাদেশে তারেক রহমান আসবেন এবং এই বিশ্বাস সব নেতাকর্মীর মধ্যে বিরাজ করছে। পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনবে।
জাগো নিউজ: তার মানে সুসময়ে ফিরবেন?
এহসানুল হক মিলন: আপনি তো বলতে পারেন না এখন তার দুঃসময় আর ভবিষ্যৎ তার সুসময়। তারেক রহমান প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের সঙ্গে আছেন।
জাগো নিউজ: বিএনপির আন্দোলনে নেতৃত্বের প্রশ্নে কী বলবেন? কে থাকবে খালেদা জিয়া নাকি তারেক রহমান?
এহসানুল হক মিলন: সরকার কি খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে? তারেক রহমানকেও সরকার একইভাবে ভয় পায়। তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দিচ্ছে না সরকার।
জাগো নিউজ: তাহলে সামনের আন্দোলনে কী ঘটবে?
এহসানুল হক মিলন: তারেক রহমান তো আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন-ই। এখানে তো কোনো লুকোচুরি নেই।
জাগো নিউজ: এভাবেই চলবে?
এহসানুল হক মিলন: আন্দোলনে তো কোনো কমতি নেই। হাজার হাজার পুলিশ আমাদের আন্দোলনে বাধা দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ-পুলিশ মিলে হামলা করছে। কমতি থাকলে তো এই ভয় থাকার কথা নয়।
জাগো নিউজ: আলোচনা আছে, বিএনপির এমন আন্দোলনে সরকার সুখ অনুভব করছে?
আরও পড়ুন>> সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির পরবর্তী হাতিয়ার ‘ফুল’
এহসানুল হক মিলন: সরকারের কোনো সুখনিদ্রা নেই এটি এখন সবাই জানেন। দৌড়ঝাঁপের অন্ত নেই সরকারের।
জাগো নিউজ: রাজনীতিতে তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানের উপস্থিতি অনুভব করছেন?
এহসানুল হক মিলন: আমাদের নেতা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এখনো অবসরে যাননি। তাদের নেতৃত্বেই বিএনপি পরিচালিত হচ্ছে। সরকার তাদের জোর করে আটকে রেখেছেন।
জাগো নিউজ: সেই আটকানো যদি দীর্ঘায়িত হয়?
এহসানুল হক মিলন: স্বৈরাচারের রশি ঢিলা হতে শুরু করেছে। গাজীপুর নির্বাচন থেকে আপনি অনেক কিছুই দেখতে পেয়েছেন।
জাগো নিউজ: গাজীপুরের নির্বাচন থেকে এত আনন্দিত হওয়ার কী আছে?
এহসানুল হক মিলন: আমরা নির্বাচনে নেই। তবুও নৌকাকে হারতে হয়েছে। এরচেয়ে বড় পরাজয় আর কী আছে?
আওয়ামী লীগের সব কেন্দ্রীয় নেতা গাজীপুরে গিয়ে ভোট চেয়েছেন। মানুষ নৌকা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এই একটি নির্বাচন থেকে অনেক কিছু বার্তা মিলেছে। এই নির্বাচনে জনগণ আনন্দিত। জনগণের আনন্দে আমারও আনন্দিত। ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা থাকলে দেখতে পারতেন আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের ক্ষোভ।
এএসএস/এএসএ/জিকেএস