‘আমরা তো ফাঁদে পা দিতে পারি না’

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:১৬ পিএম, ০৬ জুন ২০২৩

আ ন ম এহসানুল হক মিলন। বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ, লেখক ও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইআরআই-এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

আসন্ন নির্বাচন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা, খালেদা জিয়ার মুক্তির মতো বিষয় নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি।

জাগো নিউজ: বিএনপির আন্দোলনে এখন নিয়মিত স্লোগান ‘তারেক রহমান বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে’। তারেক রহমান আদৌ আসতে পারবেন?

আ ন ম এহসানুল হক মিলন: তারেক রহমান অবশ্যই দেশে ফিরে আসবেন। তাকে আসতেই হবে। তারেক রহমান কেন দেশের বাইরে গেছেন, তা সবার জানা। তার কোমরের হাড় ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে। তিনি জার্মানি ও ইংল্যন্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সময় হলেই ফিরে আসবেন।

জাগো নিউজ: ১৫ বছর ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। আপনি বলছেন, ‘তাকে ফিরতে হবেই’।

এহসানুল হক মিলন: দেখুন, বাংলাদেশের কারাগারে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। নাসির উদ্দীন পিন্টুর মতো একজন যুবক কারাগারে ঢলে পড়লো।

আরও পড়ুন>> যুক্তরাষ্ট্রের নয়া ভিসানীতিতে শঙ্কা-সম্ভাবনার দোলাচলে বিএনপি!

জাগো নিউজ: তারেক রহমানকে নিয়েও এমন আশঙ্কা করছেন?

এহসানুল হক মিলন: আশঙ্কার কথা বলছি না। কিন্তু বাস্তবতা তো ভুলতে পারবেন না। সিবিআই নেতা বাকীর কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। কার্টুনিস্ট কিশোরের কথা অবশ্যই মনে আছে। লেখক মোশতাক আহমেদ, এনএসআই-এর সাবেক ডিজির মৃত্যুর কথাও সবার জানা। এই মৃত্যুগুলোর তো কোনো কূল-কিনারা নেই।

জাগো নিউজ: তাহলে তো ভয়েই ফিরছেন না। নাকি সাজা এড়িয়ে চলতে এক প্রকার পালিয়ে বেড়াচ্ছেন?

এহসানুল হক মিলন: বিষয়টি আমি এভাবে দেখতে চাই না। এদেশে প্রচুর মানুষ গুম হচ্ছে। কারাগারে মানুষ মরছে। এদেশে এখন বিচার নেই, সুশাসন নেই। তারেক রহমানকে তো এমন পরিস্থিতিতে আমরা দেশে চাই না। আমরা তো তাকে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিতে পারি না। দেখুন, যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশনের কারণে দেশের পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে পাল্টে যাচ্ছে। সময় বদলে যাবে।

আরও পড়ুন>> সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির পরবর্তী হাতিয়ার ‘ফুল’

জাগো নিউজ: ইংল্যান্ডে অবস্থান করে এমন বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব?

এহসানুল হক মিলন: আপনি কিন্তু মঙ্গলগ্রহে নেই। আজকের দিনে কারও অবস্থান জরুরি হয় না। বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে তারেক রহমান প্রতি মুহূর্তে অবস্থান করছেন। প্রতিটি মিছিল-সমাবেশে তারেক রহমান আমাদের সঙ্গে অবস্থান করছেন।

জাগো নিউজ: অনেকেই তো মনে করছেন বিদেশিরা মঞ্চ সাজিয়ে দেবে, তারেক রহমান তখন এসে বক্তব্য দেবেন। বিএনপি মঞ্চ সাজাতে পারছে না।

এহসানুল হক মিলন: আপনি গভীর সমুদ্রে জাহাজে চড়ে বেড়াতে গেলেন। আপনার এক সন্তান হাত ফসকে হাঙরের মুখে পড়লো। আরেক সন্তান আপনার পাশে কী করবেন? অবশ্যই পাশে থাকা সন্তানকে হাঙরের মুখ থেকে পড়ে যাওয়া সন্তানকে বাঁচানোর জন্য পাঠাবেন না। আপনি নিজেও ঝাঁপ দেবেন না।

আরও পড়ুন>> মাঠ ছাড়বে না বিএনপি, ধারাবাহিক কর্মসূচিতে ‘কঠোর বার্তা’

জাগো নিউজ: কিন্তু পড়ে যাওয়া সন্তানকে বাঁচানোর জন্য ন্যূনতম চেষ্টা করতে পারি।

এহসানুল হক মিলন: সেই চেষ্টাই তো করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আমরা জাতিসংঘের সদস্য। এখন আর গণতন্ত্র নেই। আমরা বাঁচানোর চেষ্টা করছি। এর জন্য কাউকে না কাউকে সুরক্ষিতও থাকতে হয়। নইলে সবাইকে হাঙরের মুখে পড়তে হবে।

জাগো নিউজ: গাজীপুরের মতো সিটি নির্বাচন ২০১৪ সালেও হয়েছিল এবং বিএনপি ভালো ফল করেছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি এলো না। গাজীপুরের এই নির্বাচন দিয়ে বিএনপি আসলে কী ফল পাবে?

এহসানুল হক মিলন: ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৪টি আসনে আওয়ামী লীগ বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়। এটি আওয়ামী লীগের নকশা ছিল। আমরা তো ফাঁদে পা দিতে পারি না। ২০১৮ সালে তারা মধ্যরাতে নির্বাচন করে ফেললো। মানুষের কাছে এখন সব পরিষ্কার। আমরা আওয়ামী লীগের চরিত্রটা উন্মোচন করতে পেরেছি। ২০২৩ সালের নির্বাচন আর মানুষ ওই নকশায় হতে দেবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির পর তা আরও জোরালো হয়েছে।

জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো আমলেই নিচ্ছে না। বরং তার কূটনৈতিক দক্ষতা অতীতের রাষ্ট্রপ্রধানদের ছাপিয়ে গেছে বলে মনে করা হয়।

এহসানুল হক মিলন: আমি আগেই বলেছি, আপনি মঙ্গলগ্রহে বসবাস করছেন না। সব দেখতে পাচ্ছেন, জানতে পারছেন। চাইলেই শেখ হাসিনা সব চালিয়ে যেতে পারবেন না।

জাগো নিউজ: তিনি তো চালিয়ে যাচ্ছেন। ভাটা তো পড়েনি?

এহসানুল হক মিলন: যুক্তরাষ্ট্র এসে ভাটা পড়াবে না। কিন্তু একটি সভ্য পৃথিবীতে থাকতে হলে আপনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন না।

দেখুন, ভারত যদি কোয়াড বা আইপিএস-এর মতো নিরাপত্তা বলয়ে যেতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ পারছে না কেন? এই প্রশ্নের উত্তর আপনি দিতে পারবেন?

ভারতের মন্ত্রীরা এসে বলছেন, আওয়ামী লীগকে চান। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা বলছেন, ভারত আমাদের পাশে আছেন। এমন সম্পর্কের পরেও বাংলাদেশ কেন কোয়াডে যেতে পারছে না? অবশ্যই ভাবনার আছে।

এএসএস/এএসএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।