চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলন
মধ্যম সারির নেতাদের ওপর আস্থা বিএনপির হাইকমান্ডের
সরকারবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে বিএনপির মধ্যম সারির নেতাদের ওপর আস্থা রাখছে দলটির হাইকমান্ড। মধ্যম সারির বেশ কয়েকজন নেতা সম্প্রতি লন্ডন সফর করেছেন। আরও কয়েকজন লন্ডনে যাবেন। সেখানে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরাসরি এসব নেতার সঙ্গে কথা বলে আগামীতে মাঠ পর্যায়ে আন্দোলনের কঠোর বার্তা দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ পাওয়া বিএনপি নেতারা বলছেন, আগামীতে আন্দোলনে তাদের জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন তারেক রহমান। পাশাপাশি সরকারের প্রলোভনে পা না দেওয়াসহ বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। সেটি এখন তারা মাঠে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভালো পদক্ষেপ
দলীয় সূত্র মতে, আগামীতে এক দফার আন্দোলনে যাওয়ার আগে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রাখা নেতাদের বেশ কয়েকজন সম্প্রতি লন্ডন সফর করেন। গত দুই মাসে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন একডজনের বেশি নেতা।
এর মধ্যে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদিন ফারুক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, উত্তরের সাবেক সভাপতি এম এ কাইয়ুম, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, আন্তর্জাতিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য ইশরাক হোসেন।
এছাড়া ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করা বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গত সপ্তাহে দেশে ফিরেছেন। আরও বেশ কয়েকজন নেতা শিগগির লন্ডনে যাবেন বলে জানা গেছে।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ পাওয়া একাধিক নেতা বলেন, আগামীর আন্দোলনে বিশেষ দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন তারেক রহমান। আগামীতে মাঠে টিকে থাকার নানা কৌশল ও করণীয় নিয়েও তিনি দিকনির্দেশনা দেন। দলের হাইকমান্ডের কথা যেন সর্বোচ্চভাবে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন হয় সে ব্যাপারে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিশেষ করে বিগত দিনে ঢাকা মহানগরীতে আন্দোলনের ব্যর্থতার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেটি প্রাধান্য দিচ্ছেন তারেক রহমান। একদফার আন্দোলনে ‘ঢাকা কেন্দ্রবিন্দু’ তার স্পষ্ট বার্তাও নেতাদের জানান তিনি। এছাড়া বর্তমান সরকারের অধীনে যেন কোনো অবস্থায় কেউ নির্বাচনে যাওয়ার চিন্তা না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে আরও দুজনের সাক্ষ্য
সূত্র বলছে, আস্থা রাখার ক্ষেত্রে তারেক রহমান ছাত্রদল বা ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা নেতাদের বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। ওইসব নেতা এখন দলে মধ্যম সারির নেতা হিসেবে পরিচিত। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ পেয়ে উজ্জীবিত এসব নেতা এখন মাঠে সর্বোচ্চভাবে কাজ করছেন। তারা দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশ সর্বত্র পৌঁছানো এবং তা বাস্তবায়নে কাজ করছেন। কোনো অবস্থায়ই তারা এবার ব্যর্থতার দায় নিতে চান না।
জানা গেছে, গত বছরের শেষ সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বেশ গতি আনতে সক্ষম হয়েছিল বিএনপি। দলটি গত রোজার মাসেও মাঠে ছিল। মাঝে বেশ কিছুদিন আন্দোলনের ছন্দপতনের পর এখন আবারো মাঠে বিএনপি। দলটি বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করছে।
আগামীতে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে একদফার আন্দোলনে যেতে চায় বিএনপি। বর্তমান সরকারের অধীনে যেকোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে বিএনপি এখন জিরো টলারেন্সে। পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও না যেতে কড়া বার্তা বিএনপির হাইকমান্ডের। এরইমধ্যে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়ে আজীবন বহিষ্কার হয়েছেন গাজীপুরের ২৯ জন। ধারাবাহিকতা ফিরিয়ে এনে দ্রুত সময়ের মধ্যে কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুত নিচ্ছে বিএনপি।
আরও পড়ুন: ৫১ বছরে দেশে কূটনীতিকদের প্রটোকল প্রত্যাহার ঘটেনি
সূত্রমতে, বিগত আন্দোলন সংগ্রামে দলের সিনিয়র নেতাদের প্রতি হাইকমান্ডের এক ধরনের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। এবার চূড়ান্ত আন্দোলনে সেইসব সন্দেহভাজন নেতা আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে যেন নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করতে না পারে বা চূড়ান্ত আন্দোলন চলাকালে দায়িত্বশীল নেতারা গ্রেপ্তার হলে পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কৌশলস্বরূপ মধ্যম শ্রেণির নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিচ্ছেন।
তবে দলের আরেকটি সূত্রের দাবি, যতজন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে লন্ডনে গিয়ে দেখা করেছেন অধিকাংশই স্বেচ্ছায় গেছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এর মধ্যে দু-এককজনকে ডেকে নিয়েছেন। যারা স্বেচ্ছায় গেছেন তারা মূলত দলের ও নিজেদের অনুসারীদের মধ্যে আরও প্রভাব বিস্তার করতে গেছেন। বিশেষ করে সাংগঠনিক পদ-পদবি এবং সামনের নির্বাচন ঘিরে মনোনয়ন ইস্যুতে তারা এ সফরের ইমেজ ব্যবহার করেন।
সাবেক ছাত্রনেতাদের বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে হাইকমান্ড-সংগৃহীত ছবি
নেতাকর্মীদের কী বিশেষ বার্তা দিলো হাইকমান্ড
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসা জয়নুল আবদীন ফারুকের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
ফারুক বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি জাগো নিউজকে বলেন, চলমান আন্দোলনে দেশের সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে বলেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। চলমান আন্দোলনকে কঠোরতম পর্যায়ে নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই বার্তাই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাকে দিয়েছেন। আমি সেটা নেতাকর্মীদের যথাযথভাবে জানিয়ে দিয়েছি।
আরও পড়ুন: সরকারবিরোধী আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা শিগগির
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে অনেকেই দেখা করছেন। এটি গোপন কোনো ব্যাপার নয়। এসব বৈঠকে রাজনৈতিক আলোচনা হবে এটি স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, তারেক রহমান যখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলেন তখন অনেকেই বলতে শুরু করেছিল বিএনপি এবার শেষ। কিন্তু তারেক রহমান তার মেধা ও যোগ্যতায় দলকে এখন আরও শক্ত অবস্থানে নিয়ে গেছেন। তার নেতৃত্বে দল এখন শক্তিশালী। তাই আগামীদিনের আন্দোলনে তার পরামর্শ বা নির্দেশ বাস্তবায়নে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যেহেতু লন্ডনে থাকেন। তাই সরাসরি কথা বলতে অনেক নেতা সেখানে যান। আবার অনেকে অন্য বিশেষ কাজে গেলে তারাও দেখা করে আসনে। এসব দেখা সাক্ষাতে তিনি দেশের পরিস্থিতি জানতে চান। একটি বৃহৎ দলের নেতৃত্ব দেন তারেক রহমান, তাই নেতারা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি রাজনৈতিক বার্তাও দেন।
কেএইচ/এসএইচএস/জেআইএম