ব্যানারে ছবি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
বিএনপির ‘অযাচিত’ সিদ্ধান্ত মানছেন না তৃণমূলের নেতাকর্মীরা
দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির ব্যানারে তিন শীর্ষ নেতা ছাড়া অন্য নেতাদের ছবি ব্যবহারে বিএনপি নিষেধাজ্ঞা দিলেও তা মানছেন না নেতাকর্মীরা। এমনকি খোদ দলের যে কেন্দ্রীয় নেতার সই করা বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তিনিও নিজের ছবি সংবলিত ব্যানার সামনে নিয়ে পদযাত্রা কর্মসূচি করেছেন। এছাড়া অনেক কেন্দ্রীয় নেতার ছবিও দেখা গেছে শনিবারের (১১ ফেব্রুয়ারি) ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচির ব্যানারে। এটিকে দলের নেতারা ‘অযাচিত’ সিদ্ধান্ত বলে ‘আখ্যা’ দিয়েছেন।
বিএনপি সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিএনপির পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা দলের বিভিন্ন ইউনিটের দায়িত্বশীল নেতাদের পাঠানো হয়। তাতে জানানো হয়, দলের কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির ব্যানারে দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি ছাড়া অন্য কোনো নেতার ছবি ব্যানারে ব্যবহার করা যাবে না।
তবে ১১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ইউনিয়ন পর্যায়ে যে পদযাত্রা কর্মসূচি হয়েছে, সেই কর্মসূচির ব্যানারে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়াও স্থানীয় নেতাদের ছবি ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
সূত্রমতে, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দলীয় নির্দেশনা নেতাকর্মীদের পাঠিয়েছেন। নির্দেশনায় বলা হয়, প্রিয় নেতৃবৃন্দকে নির্দেশক্রমে জানানো যাচ্ছে যে, কেন্দ্রঘোষিত জাতীয় কর্মসূচির মূল ব্যানারে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি ছাড়া অন্য কারও ছবি ব্যবহার করা যাবে না। বিষয়টি জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বিধায় সবাইকে এ আদেশ মেনে চলতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ইউনিয়ন পদযাত্রায় তিন শতাধিক নেতাকর্মী আহত, দাবি বিএনপির
বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদককে আদেশটি কার্যকর করতে জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ওয়ার্ড ইউনিটসহ সবাইকে মৌখিকভাবে অবহিত করতে এবং সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
তবে দলের আরেকটি সূত্রের দাবি, ব্যানারে তিনজন ব্যতীত আর কারও ছবি ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক। কেননা একটা কর্মসূচি ঘিরে সারাদেশের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হন। সেখানে তাদের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের ছবি একসঙ্গে ব্যানারে থাকলে তা ইতিবাচক বার্তা বহন করে। দলের কতিপয় নেতার এ অগণতান্ত্রিক মানসিকতার কারণে এমন অবাস্তব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যে কারণে অনেক নেতাকর্মী এ নির্দেশনা মানেনি। এটা একটা অযাচিত সিদ্ধান্ত।
এদিকে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স নেতাকর্মীদের দলীয় নিষেধাজ্ঞার বার্তা পাঠালেও তিনি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে যে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন, সেখানে ব্যানারে তার ছবি ব্যবহার করা রয়েছে। দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর ছবি ব্যবহার করে নাটোরের লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নে কর্মসূচি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন>> দিনে পদযাত্রা, রাতে কূটনীতিকদের পদলেহন করে বিএনপি: তথ্যমন্ত্রী
জানতে চাইলে তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে দলীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তার আগে থেকেই বিভিন্ন জায়গায় ব্যানার তৈরি করা হয়ে গেছে। শুক্রবার অনেক মার্কেট বন্ধ থাকে। এ কারণে নতুন করে ব্যানার তৈরি করা সম্ভব হয়নি। এজন্য আগে তৈরি ব্যানার দিয়ে নেতাকর্মীরা কর্মসূচি করেছেন।
তবে যে কর্মসূচিতে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স অংশ নিয়েছেন, সেই কর্মসূচির ব্যানারে তার ছবি থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। প্রিন্স বলেন, খুব অল্পসময়ের ব্যবধানে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার দোকানপাট সব বন্ধ থাকায় ওই নির্দেশনা শিথিল করা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচিতে তিনজন ব্যতীত অন্য কোনো নেতার ছবি ব্যবহার না করা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, যেহেতু আমার হাত দিয়ে দলীয় নেতাদের নির্দেশনা বার্তা পাঠানো হয়েছে। এ কারণে আমি ব্যক্তিগতভাবে তিনটি দোকান খুলে নতুন করে ব্যানার করেছি। যারা নতুন করে ব্যানার করতে পারেননি, তাদের ব্যানারে তিনজনের বাইরে অন্যদের ছবি আছে।
শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সরকার পতনসহ ১০ দফা দাবিতে দেশের সব ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি করেছে বিএনপি। এ কর্মসূচিতে অর্ধশতাধিক জায়গায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত তিন শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। রোববার এ নিয়ে বিস্তারিত জানাতে সংবাদ সম্মেলন করা হবে।
কেএইচ/এএএইচ/এমএস