মানুষ আওয়াজ তুলেছে সরকারকে বিদায় দিতে হবে: মোশাররফ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সারাদেশের মানুষ আজ আওয়াজ তুলেছে, তাদের দাবি একটাই, এই সরকারের হাত থেকে দেশ ও জনগণকে রক্ষা করতে হবে। এই সরকারকে বিদায় দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা সরকারকে বিদায় দেওয়ার লক্ষ্যেই ১০ দফা দিয়েছি। ১০ দফা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে এর সারকথা হচ্ছে সরকারকে যত শিগগির সম্ভব বিদায় দেওয়া।
ড. মোশাররফ বলেন, জনগণ কেন এই সরকারকে বিদায় দিতে চাচ্ছে, কারণ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। দিনের ভোট রাতে করে এই সরকার গণতন্ত্র হত্যা করেছে। গণতন্ত্র হত্যার কারণে তাদের জনগণের প্রতি দায়দায়িত্বও নেই।
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেনের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় খন্দকার মাহবুব হোসেনের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনায় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশের মানুষ উপলব্ধি করেছে যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, যারা আইনের শাসন দলীয়করণ করে ধ্বংস করেছে, তারা এগুলো মেরামত করতে পারবে না।
তিনি বলেন, এক লাখ মামলায় দেশের প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ আসামি। মরহুম খন্দকার মাহবুব হোসেনও একাধিক মামলার আসামি। এ সরকারের সময় ৬০০ মানুষ গুম হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ হত্যার শিকার হয়েছে। এজন্য র্যাব-পুলিশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার।
আলোচনা সভায় জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ও বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, আজ যে সরকার ক্ষমতায় আছে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা নেই। আমাদের এখন দেশ আছে, জনগণ আছে, কিন্তু গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই, সার্বভৌমত্ব নেই।
তিনি বলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন আইন জগতের দিকপাল ছিলেন। তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। চারবার সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি হন। তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। মহান আল্লাহ তাকে বেহেশতবাসী করবেন, এ দোয়া করি।
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আইন ও রাজনৈতিক জগতে খন্দকার মাহবুব হোসেনের চলে যাওয়া আমাদের খুবই ক্ষতি করেছে। উনার সাহসিকতার যে প্রতিভা আজকের দিনে আমাদের তা খুব বেশি প্রয়োজন ছিল।
তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে হলে আইন অঙ্গনে একটি বড় ধরনের আন্দোলন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
এসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেন, ১০ দফা বা ১২ দফা নয়, এখন দরকার এক দফা। একটি অবৈধ অনির্বাচিত সরকারকে এ মুহূর্তে পদত্যাগ করতে হবে। এজন্য জনগণের সাথে আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নিতে হবে। সরকারকে বলতে হবে, আপনারা নির্বাচিত নন, আপনারা বিদায় নেন।
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে এবং আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বর্তমান সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ফকির, আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নুরুল আমিন বেপারী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকিব ও বাংলাদেশ পিপলস লীগের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গরিব নেওয়াজ।
আলোচনা অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান, খন্দকার মাহবুব হোসেনের স্ত্রী ড. ফারহাত হোসেন, ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আবদুল জব্বার ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক গাজী মো. কামরুল ইসলাম সজলসহ কয়েকশো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
এফএইচ/এমকেআর/এমএস