গোলাপবাগের সমাবেশ
বিএনপির সিনিয়র নেতাদের উচ্ছ্বাস, তৃণমূলে অবিশ্বাস!
নানা নাটকীয়তার পর ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করেছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি-বিএনপি। রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি সমাবেশ করতে চাইলেও অনুমতি মেলে না ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি)। বিকল্প ভেন্যু থেকে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় ডিএমপি। সমাবেশকে ঘিরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলায় গ্রেফতার করা দলটির শীর্ষ নেতাদের। এ অবস্থায় দলের মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের ছাড়াই গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করে বিএনপি।
প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এই সমাবেশকে সফল দাবি করেছেন বিএনপি নেতারা। তবে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ করে বিএনপির সিনিয়র নেতারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপি কি সমঝোতার মাধ্যমে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে, না কি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে?
দলীয় সূত্রমতে, নয়াপল্টনে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের স্থান নিয়ে বিএনপির অনড় অবস্থান নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ উদ্দীপ্ত করেছে। কিন্তু ৭ ডিসেম্বর পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে একজনের নিহত হওয়া, অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হওয়া, আটক, নয়াপল্টন থেকে সমাবেশের স্থান পরিবর্তন করা এবং সর্বশেষ কর্মসূচি ঘোষণা নিয়ে দলের সিনিয়র নেতারা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন। কিন্তু এসবের পাশাপাশি ১০ ডিসেম্বর ঘিরে মিত্রদের পাশাপাশি দল ও প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নেতাদের কয়েকজনের বক্তব্য বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে সন্দেহ, অবিশ্বাস ও হতাশার জন্ম দিয়েছে।
এদিকে সমাবেশের আগে কথার রাজনীতিতে ১০ ডিসেম্বরকে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুকে পরিণত করেছিলেন বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ বিএনপি দলের নেতারা। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেছেন, ‘১০ ডিসেম্বরের পর থেকে দেশ চলবে বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের কথায়।’
আরও পড়ুন: গণসমাবেশ থেকে বিএনপির ১০ দফা ঘোষণা
বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘শিগগিরই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশ হবে আটলান্টিক মহাসাগরের মতো, সেখানে বেগম খালেদা জিয়া যোগ দেবেন।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু র্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। শুধু র্যাবকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে লাভ নেই, সরকারের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দরকার।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবো, বাধা এলে লড়াই হবে।’
সমাবেশের জায়গা নিয়ে যখন জটিলতা তৈরি হয়, তখন শিগগিরই সমাধানের আশ্বাস দিয়ে এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে ঘনমেঘ ঘনীভূত হয়। আবার চট করে চলেও যায়।’
পাশাপাশি ‘শিগগিরই সরকার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসছে’ গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া, সদস্যসচিব নুরুল হক নুর ক্রমাগত যে বক্তব্য দেন, তাতে নেতাকর্মীদের একাংশের মধ্যে ধারণা হয়, ১০ ডিসেম্বর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় প্রশাসন নিরপেক্ষ হবে, প্রশাসন নিরপেক্ষ হলে সরকারের পতন হবে। সেই আশায় তো গুড়েবালি, উল্টো ৭ ডিসেম্বর পুলিশের অভিযানে বিএনপি নেতাকর্মীদের ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে।
১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নয়াপলটন থেকে গোলাপবাগ যাওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীরা হতবাক হয়েছেন। তারা মনে করছেন, দলের একটি অংশের অপরিকল্পিত অপরিপক্ক সিদ্ধান্তে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের মতো ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে ওই পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। তাদের প্রশ্ন, সমাবেশ নয়াপল্টন থেকে গোলাপবাগ যেতে পারলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কেন নয়? আর নয়াপল্টনেই যদি সমাবেশ না হবে তাহলে কর্মীদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলা কেন?
অন্যদিকে, পুলিশ যখন পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপির উত্তরের আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দলের শত শত নেতাকর্মীকে দলীয় কার্যালয় থেকে আটক করে, ওই সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কার্যালয়ে প্রবেশ করতে গেলে পুলিশ তাকে বাধা দেয়, তিনি কার্যালয়ের ফটকের সামনে ফুটপাতে সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা বসে থাকেন। পরদিন ৮ ডিসেম্বর আবার দলীয় কার্যালয়ে আসতে গেলে নাইটিংগেল মোড় থেকে পুলিশ তাকে ফিরিয়ে দেয়। তারপর মধ্যরাতে নিজ নিজ বাসা থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করে।
আরও পড়ুন: বিএনপির সমাবেশ নয়াপল্টনে করতে চাওয়ার নেপথ্যে কী?
মির্জা আব্বাস বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল। দলের এত নেতাকর্মী আটক হলেও এর মধ্য থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমান যিনি এই ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন, তিনিসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের জুয়েল জামিনে মুক্তি লাভ করেন। এজাহারনামীয় আসামিরা জামিন পেলেও এজাহারে যাদের নাম ছিল না সেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং মির্জা আব্বাসের জামিন না হওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সন্দেহ, অবিশ্বাস দানা বেঁধেছে। একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নেতাকর্মীরা। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে উপস্থিতির ৬০ শতাংশ ঢাকার বাইরের এবং ৪০ শতাংশ মাত্র ঢাকা শহরের।
‘বিএনপির একটা অংশ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসবে’- সমাবেশপরবর্তী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান লিটনের এমন বক্তব্যও বিএনপি নেতাকর্মীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ তৈরি করছে। যেসব নেতাকর্মী উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না তাদের প্রশ্ন, দল কি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আগামীতে নির্বাচনে যাবে নাকি সমঝোতার মাধ্যমে?
তবে এমন প্রশ্ন তোলা নেতাকর্মীদের বোঝানো হচ্ছে, ‘১/১১ এর পর থেকে বিএনপির রাজনীতিতে আমান উল্লাহ আমান এবং তার বলয়ের যে ভূমিকা সেটাকে পুঁজি করে সরকার কূটকৌশল নিয়েছে। যাতে নেতাকর্মীদের মনে সন্দেহ, অবিশ্বাস, বিভেদ তৈরি হয়। আমান উল্লাহ আমান এবং আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলের রাজনীতি ধ্বংসের জন্য সরকার এই খেলা খেলছে।’
১০ ডিসেম্বর সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১০ দফা এবং পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন, তখন নেতাকর্মীদের মধ্যে থেকে হরতাল অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচির আওয়াজ ওঠে। এসময় খন্দকার মোশাররফ উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ধৈর্য ধরেন। আপনারা যে কর্মসূচি চাইছেন তা দেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন: নয়াপল্টনে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে নিহত এক, আহত ২০
জ্বালানিতেলসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলের নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় সরকারের অধীন সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি এ সমাবেশগুলো করছে। প্রায় দুই মাস ধরে চলা কর্মসূচি ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের মধ্যদিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশ পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ সফল হয়েছে এবং প্রত্যাশার চেয়েও অনেক জনসমাগম হয়েছে।
গোলাপবাগের সমাবেশ নিয়ে মূল্যায়ন জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমান এবং বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন কোনো মন্তব্য করেননি।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক জাগো নিউজকে বলেন, আমরা যে লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, প্রত্যাশা নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম তা পূরণ হয়েছে। এত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। এর ধারাবাহিকতায় আমাদের ভোটের অধিকার, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
সমাবেশে জনসমাগম সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয় ১০ লাখের অধিক মানুষের সমাগম ঘটেছিল সমাবেশে।
আরও পড়ুন: মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস গ্রেফতার
বলা হচ্ছে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে ঢাকা মহানগরের চেয়ে বাইরের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ বেশি ছিল- এ প্রসঙ্গে আমিনুল বলেন, গত ৭ ডিসেম্বর পার্টি অফিসে পুলিশ গুলি করেছে, অনেকে আহত হয়েছেন। সরকার যেভাবে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে সেটা কাটিয়ে উঠে ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেছেন। আগামীতে এই অংশগ্রহণ আরও বাড়বে। সমাবেশের স্থান নির্ধারণ হওয়ার পর দ্রুত আমরা গোলাপবাগ মাঠে চলে গিয়েছি। আমাদের কাছে সমাবেশটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, শোডাউন না।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, এই সমাবেশে বিশ্ববাসী দেখলো বাংলাদেশে কোনো গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করে পার্টি অফিসে অভিযান চালিয়ে সরকার পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। আওয়ামী লীগের এত নির্যাতন-ষড়যন্ত্রের পরও সমাবেশের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির যৌক্তিকতা আরও জোরালো হয়েছে।
দলীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানে অসংখ্য নেতাকর্মী আটক, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আটক, আমান উল্লাহ আমান, আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলের জামিন সার্বিক বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে যে সমঝোতার কথা উঠছে সেটাকে, ‘সরকারের কূটকৌশল’ বলে মন্তব্য করেন মাহাবুব উদ্দিন খোকন।
তিনি বলেন, ‘সমঝোতার কিছু নেই। এটা সরকারের কূটকৌশল।’
আরও পড়ুন: বিএনপির কার্যালয়ে মিললো খিচুড়ি-টাকা, ১৬০ বস্তা চাল
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, সমাবেশের কয়েক ঘণ্টা আগে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সব বাধা পেরিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছি। আমরা কৃতকার্য, আমাদের সংগ্রাম সামনে সুফল বয়ে আনবে।
জনসমাগম সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা রাজনৈতিক নেতারা হিসাব করি মাঠ দেখে। গোলাপবাগ মাঠে ১০ ডিসেম্বর ভোর সাড়ে ৫টায় গিয়েছি, শেষ পর্যন্ত ছিলাম। মাঠের মধ্যে আমি মনে করি তিন লাখের অধিক মানুষ ছিল। দুপুর ১২টার দিকে একবার বেরিয়ে দেখলাম সায়েদাবাদ ফ্লাইওভার, কমলাপুর, শাহজাহানপুর মানুষের বিপুল উপস্থিতি। তা দেখে মনে হলো ৮ থেকে ১০ লাখ লোক উপস্থিত হয়েছেন।
সমঝোতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসের রাজনীতিতে রাজায়-রাজায়, বাদশায়-বাদশায় সমঝোতা শব্দটা সব জায়গায় ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সমঝোতার আলোচনা ২০১৮ সালেও হয়েছে। আবার ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সরকারপ্রধান যে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন তার আগে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা হবে কি না সেটা রাজনীতি বিশ্লেষক, সাংবাদিকরা বোঝার চেষ্টা করবেন। আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি, বিএনপি ২০০৮ সালের পর থেকে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকে যে নির্যাতনের মধ্যে আন্দোলন করে আসছে তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো বিষয়ে সমঝোতা হবে বলে আমি বিশ্বাস করি না।
বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি বলেন, সারাদেশ থেকে যে লোকজন এসেছেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হয়েছে- এজন্য সরকার-বিএনপি দুপক্ষই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। কারণ হলো, যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল এটাকে কেন্দ্র করে, এরপরও পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হয়েছে।
তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) যে ১০ দফা উত্থাপন করেছে, এর মধ্যে নতুন কিছু দেখছি না। তাদের যে পুরোনো দাবি ছিল, সেই একই দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। আবার আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করেছে। সরকার যদি অতীতের মতো একইভাবে নির্বাচন করতে চায়, সেক্ষেত্রে সরকারের নির্বাচনবিরোধী একটা ঐক্য গড়ে উঠতে পারে। সেক্ষেত্রে বিএনপি নেতৃত্ব দেবে কি না জানি না। ২০১৪ সালেও হয়েছিল। খালেদা জিয়ার জোটভুক্ত বাইরের দল তখন নির্বাচনে যায়নি। সরকার তাদের আস্থায় নিতে পারেনি নির্বাচনে যাওয়ার জন্য। একটা নির্বাচনব্যবস্থার জন্য ঐক্য হতে পারে।
আরও পড়ুন: এ এক অন্যরকম ঢাকা
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন খান মোহন বলেন, চমৎকার ভালো সমাবেশ হয়েছে। একটা রাজনৈতিক সমাবেশ হাওয়া স্বাভাবিক কর্মসূচি। কিন্তু বিএনপি এবং ক্ষমতাসীনদের বাহাসের কারণে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহল আর শঙ্কা ছিল। যে কারণে জনসাধারণের উপস্থিতি কম ছিল। এই সমাবেশের ফলাফল হলো পর্বতের মূষিক প্রসব। ১০ ডিসেম্বরের পর সরকারের পতন হবে, খালেদা জিয়া সমাবেশে যাবেন, সেখানে ১০ দফা আর দুইদিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি এলো। সমাবেশের স্থান নিয়ে বিএনপি যে গো ধরলো এবং সরকার বললো যে রাস্তায় করতে দেবে না, এই আইন কিন্তু জিয়াউর রহমানের আমলেই হয়েছে। অবশেষে সরকারের কথামতো বিএনপি মাঠের মধ্যে সমাবেশ করতে বাধ্য হয়েছে।
বিএনপির ১০ দফায় নতুন কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এগুলো চর্বিতচর্বণ। তবে বিভাগীয় সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি জামায়াত নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা দেখিয়েছে। এটা বিএনপির বড় অর্জন। নিজস্ব সক্ষমতা দেখিয়েছে তারা। এর মাধ্যমে নেতাকর্মীরা চাঙা হয়েছে, তবে চূড়ান্ত আন্দোলন করতে হলে দলের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার সমাধান করতে হবে।
কেএইচ/ইএ/এসএইচএস/এমএস