ফেনী-৩

বিএনপির দুর্গে জাপার এমপি, ‘নড়বড়ে’ আওয়ামী লীগ

সাইফুল হক মিঠু
সাইফুল হক মিঠু সাইফুল হক মিঠু , আব্দুল্লাহ আল-মামুন আব্দুল্লাহ আল-মামুন ফেনী ঘুরে
প্রকাশিত: ০৫:৩৪ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০২২
মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, আবুল বাশার, জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, দিদারুল কবির রতন ও আকবর হোসেন

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পৈতৃক ভিটা হওয়ায় ফেনী জেলাজুড়ে রয়েছে দলটির প্রভাব। তার নিজের আসন ছাড়া অন্য আসনগুলোতেও আধিপত্য কম নয়। সোনাগাজী ও দাগনভূঞা নিয়ে ফেনী-৩ আসনে কখনো জিততে পারেননি আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী। আলোচিত নেতা জয়নাল হাজারীও জয়ী হতে পারেননি এ আসন থেকে। ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে না আসায় সেবার পাস করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। একাদশ সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জয় পান জাতীয় পার্টির (জাপা) লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। জনবিচ্ছিন্ন এই এমপির কারণে ক্ষমতাসীন দলের অবস্থা নড়বড়ে। জোট হলেও তাই প্রার্থী আওয়ামী লীগ থেকেই চান নেতাকর্মীরা। মনোনয়নপ্রত্যাশীও অনেক। এদিক থেকে অনেকটা নির্ভার বিএনপি।

স্থানীয়রা জানান, সংসদ সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী জনবিচ্ছিন্ন। প্রশাসনেও তার প্রভাব নেই। লাঙল প্রতীকের এই সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারেননি। অপরদিকে দলের প্রার্থী এমপি না হওয়ায় সাংগঠনিকভাবে পিছিয়ে আওয়ামী লীগ। এমপির সঙ্গে মাঠের নেতা ও জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকায় দৃশ্যমান কোনো উন্নয়নও হয়নি এলাকার।

জেলার শেষ প্রান্তে নির্মাণ হচ্ছে বিলোনিয়া স্থলবন্দর। এটির নির্মাণকাজ শেষ হলে সোনাগাজী, দাগনভূঞার প্রধান সড়কে বাড়বে আমদানি-রপ্তানি কাজে ব্যবহৃত ভারী যানবাহন। অথচ সড়কগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানান নাগরিক সংকট রয়েছে। এসব সমস্যা জানাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর কাছে পৌঁছাতে পারেন না।

নির্বাচন ও এলাকার মানুষের নানান অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে জাগো নিউজের পক্ষ থেকে এই সংসদ সদস্যকে কয়েকবার ফোন করা হলেও ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ সিন করলেও জবাব দেননি। তার প্রেস সেক্রেটারি জাফর সেলিমকে ফোন করলে তারও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তার জনবিচ্ছিন্নতার কিছুটা প্রমাণ মেলে এতে।

দাগনভূঞার বেকের বাজার এলাকার প্রবাসী শাকিল আমজাদ। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে ওমানে থাকা এই প্রবাসী জানান সদরে উন্নয়ন হলেও সোনাগাজী-দাগনভূঞা নিয়ে গঠিত ফেনী-৩ আসনে ফেরেনি মানুষের ভাগ্য।

তিনি বলেন, ‘এমপি সাহেব এলাকায় আসেন কম। কিন্তু ঢাকায় নিজ আসনের মানুষদের সময় দেন। সংসদ সদস্য হলেও সরকারি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই। এ কারণে এলাকার দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন নেই।’

আওয়ামী লীগে প্রার্থী অনেক
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি আর বছরখানেক। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মনোনয়ন পেতে শুরু করছেন দৌড়ঝাঁপ। নির্বাচনী এলাকায় যাতায়াত করছেন। অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। গত সংসদ নির্বাচন থেকে আসনটিতে নৌকার প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন ১৫ জন। গতবারের মতো এবারও এ আসনে মাঠে আছেন একাধিক প্রার্থী।

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার, সাবেক ছাত্রনেতা জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, দাগনভূঞার উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আক্রাম হোসেন প্রমুখ। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে সারি আরও দীর্ঘ হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

দাগনভূঞার দক্ষিণ করিমপুর নুরুল হুদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুল প্রাঙ্গণে কথা হয় ব্যবসায়ী মিজান আহমেদের সঙ্গে। তার মতে, জনপ্রতিনিধি দলীয় না হওয়ায় উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে পারছে না এই এলাকার মানুষ। দলীয় লোকদের পাশ কাটিয়ে এলাকায় উন্নয়ন করা যায় না। অনেক সময় রাস্তা-ঘাট বা ভালো কাজে বাধা সৃষ্টি হয়।

আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বলছেন, জোট রক্ষার্থে গতবারের দলীয় সিদ্ধান্ত তারা মেনে নিয়েছেন। নিজেদের প্রার্থী না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ।

মনোনয়ন ও এলাকার সংসদ সদস্যের অবস্থান জানতে চাইলে সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রনেতা জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন জাগো নিউজকে বলেন, মনোনয়ন তো অবশ্যই চাইবো। কাজ করছি দীর্ঘদিন ধরেই। আমাদের এখানে আসন জাতীয় পার্টিকে দিয়ে রাখছে। সংসদ সদস্যকে এলাকায় পাওয়া যায় না। ওনার ভাই মনে হয় সব কিছু করেন।

দাগনভূঞার উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন জাগো নিউজকে বলেন, এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। এখনো পার্টির সঙ্গে কাজ করছি। সংসদ সদস্য সময় কম দিতে পারেন। উনি তো ভিন্ন দলের, আমরা আরেক দলের। উনি মানুষ হিসেবে ভালো, তবে সময় কম দেন। দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন তিনি করতে পারেননি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আপেল প্রতীকে নির্বাচন করেন আবুল বাশার। তবে এবার যুবলীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্যের চাওয়া এই আসনে দলীয় প্রার্থী।

জাগো নিউজকে তিনি বলেন, আমিও প্রার্থী হতে চাই। যদি ভাগ্যে থাকে তাহলে হবো। উনি কারও কাছে সহযোগিতা চান না। ওনাকে সাধারণ জনগণের কোনো কাজে লাগে না। জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। এলাকায় যে ঠিকাদাররা রাস্তা-ঘাট করছেন সেগুলো মানসম্মত হচ্ছে না। দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। সংসদ সদস্য বিষয়গুলোর খোঁজ-খবর রাখেন না। এ আসনে জনসম্পৃক্ত একজন লোক দরকার।

তিনি আরও বলেন, সাংগঠনিকভাবে আমরা শক্তিশালী। দলীয় কোন্দল এখনো প্রকাশ্যে নেই। ভিতরে যদি থেকে থাকে সেটা ভিন্ন। সেরকম কোনো সমস্যা হয় না। এবার আমি স্বতন্ত্র ভোট করবো না।

শক্ত অবস্থানে বিএনপি
ঐতিহাসিকভাবে আসনটিতে বিএনপির অবস্থান পোক্ত। এ আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বিএনপি প্রার্থীকে হারাতে পারেনি আওয়ামী লীগ। এমনকি ১৯৯৬ এর নির্বাচনে আলোচিত জয়নাল হাজারীও ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারেন বিএনপির মোশাররফ হোসেনের কাছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে মহাজোট থেকে লাঙল প্রতীকে জাতীয় পার্টির মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী পান ২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৭ ভোট। বিএনপি সমর্থিত ঐক্যফ্রন্টের আকবর হোসেন পান ১৪ হাজার ৬৭৪ ভোট।

বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, ফেনী জেলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পৈতৃক ভিটা হওয়ায় জনগণের সহানুভূতি ও সমর্থন আছে। ফেনী-৩ আসন থেকে এবার নির্বাচন করতে চান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছোট ভাই আকবর হোসেন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, দল যদি নির্বাচনে যায়, আমাকে যদি নমিনেশন দেয় তাহলে ভোট করবো। এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম বাড়াতে বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার চেষ্টা করছি।

মামলা-হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা তো সব জায়গায় হচ্ছে। আমরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এলাকায় আমাদের থাকতে দিচ্ছে না। তারপরও লড়াই করে থাকছি।’

এসএম/এএসএ/জিকেএস

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।