বিএনপির সংলাপ
বাদ পড়েও ডাক পাওয়ার আশায় ‘দলছুট’ শরিকরা
সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে আওয়ামী লীগ ছাড়া সব দলের সঙ্গে সংলাপের ঘোষণা দেয় বিএনপি। চলতি বছরের মাঝামাঝিতে শুরু হওয়া সংলাপে অংশ নেয় ২০ দলীয় জোটের শরিক ও ঘনিষ্ঠ কয়েকটি দল। তবে জোট থেকে বের হয়ে যাওয়া দলগুলোর সঙ্গে কোনো সংলাপ হয়নি। তাদের জোটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দল জামায়াতের সঙ্গেও হয়নি সংলাপ। বাদপড়া দলগুলোর নেতারা বলছেন, আমন্ত্রণ পেলে তারাও বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করবেন। ১০ ডিসেম্বরের আগে এসব বিষয় নিয়ে ভাবছে না বলে জানিয়েছে বিএনপি।
গত মে মাসে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জাতীয় ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু করে বিএনপি। সবশেষ ১৫ নভেম্বর সংলাপ করে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ২০ দলীয় জোট এবং গণতন্ত্র মঞ্চের অধিকাংশ দলের সঙ্গে সংলাপ করলেও এ প্রক্রিয়ায় বাদ পড়ে জামায়াত, আব্বাসীর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ কয়েকটি দল।
আরও পড়ুন>> বিএনপির সংলাপ নিয়ে শরিকদের ক্ষোভ
বিএনপি জোট থেকে গত কয়েকবছরে বের হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি দল। এর মধ্যে রয়েছে জেবেল রহমান গানি নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, আন্দালিভ রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন বিজেপি, মুহম্মদ ইসহাকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিশ, আবুল হাসনাত আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট, নূর হোসেন কাসেমীর নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজার নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি ও হামদুল্লাহ আল মেহেদীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ লেবার পার্টি। এসব দলের সঙ্গে কোনো সংলাপ করেনি বিএনপি। তাদের আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। আদৌ আমন্ত্রণ জানানো হবে কি না সেটিও এখনো স্পষ্ট নয়।
বিএনপির সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে জামায়াতের মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ জাগো নিউজকে বলেন, যুগপৎ আন্দোলন চূড়ান্ত হলে আমাদের সঙ্গে সংলাপ হবে।
আরও পড়ুন>> অস্তিত্ব সংকটে শরিকরা, আন্দোলনের গতি-প্রকৃতিতে সিদ্ধান্ত বিএনপির
বিএনপির সঙ্গে একসময়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এখন কেমন জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, আমার সঙ্গে বিএনপির দূরত্বও নেই, ঘনিষ্ঠতাও নেই। বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল। তাদের সঙ্গে আমার মতের মিল নেই। আওয়ামী লীগও একটি রাজনৈতিক দল। তাদের সঙ্গেও আমার অনেক বিষয়ে মতের অমিল।
সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনীতিতে কোনো কথা বলা যায় না, তবে বিএনপি একচুলও পরিবর্তন হয়নি।
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা বলেন, বিএনপি আমাদের সংলাপের আমন্ত্রণ জানায়নি, সংলাপের সম্ভাবনাও দেখছি না। নির্বাচন কমিশন, রাষ্ট্রপতি কারও সঙ্গেই বিএনপি সংলাপ করেনি।
আরও পড়ুন>> সংলাপ: বিএনপির কাছে দুটি আসন-একটি মন্ত্রণালয় চায় শরিকরা
তিনি বলেন, বিএনপি যদি আমাদের সঙ্গে সংলাপ করতে চায় আমরা অবশ্যই সংলাপ করবো। আমরা সংলাপে বিশ্বাস করি, সংঘাতে বিশ্বাস করি না। সন্তোষজনক রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখতে চাই।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি বলেন, বিএনপি সংলাপ করেছে, কিন্তু আমরা ছিলাম না। ভবিষ্যতে আমন্ত্রণ করবে কি না জানি না। আমন্ত্রণ না পাওয়া পর্যন্ত বলতে পারছি না।
এলডিপি আব্বাসী অংশের মহাসচিব শাহাদাত সেলিম বলেন, ১০ তারিখের পর যুগপৎ আন্দোলন শুরু হলে বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংলাপ হবে। তাছাড়া অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রতিনিয়তই বিএনপির সঙ্গে আমাদের সংলাপ হয়। আর এমন তো নয় যে সংলাপ যারা করছে তারা উদ্ধার করে ফেলছে!
আরও পড়ুন>> অস্তিত্ব সংকটে জোট শরিকরা, অস্বস্তিতে বিএনপি
লেবার পার্টির হামদুল্লাহ আল মেহেদী বলেন, বাংলাদেশ ন্যাপ, এনডিপি আমরা তিনটি রাজনৈতিক দল একসঙ্গে ২০ দলীয় জোট থেকে বের হয়েছি। আমাদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক এখন ভালোও না, মন্দও না। রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। আর আমরা যেহেতু সরকারের পক্ষের নই, রাজপথের আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে আমাদের দেখা হতে পারে। তারা যদি আমাদের সংলাপের আমন্ত্রণ জানায় সংলাপ হতে পারে।
জোট থেকে যারা বের হয়ে গেছে তাদের সঙ্গে বিএনপি সংলাপ করবে কি না এমন প্রশ্নে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জাগো নিউজকে বলেন, এটা ১০ তারিখের পর দেখা যাবে।
কেএইচ/এএসএ/এমএস