নাকফুল-গরিব পার্টি-মুসকিল লীগ
‘হাস্যকর’ নামকরণ নিয়ে দলের নেতাদের ব্যাখ্যা
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে মোট ৯৩টি দল। এর মধ্যে কিছু দলের নাম নিয়ে সরব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। নামগুলো নিয়ে রীতিমতো ট্রল হচ্ছে, ছড়াচ্ছে হাস্যরস। আলোচনায় থাকা নামগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- বাংলাদেশ ইত্যাদি পার্টি, মুসকিল লীগ, বেকার সমাজ, নৈতিক সমাজ, বৈরাবরী ও নাকফুল। এসব দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছে জাগো নিউজ। নেতারা নামকরণের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। আবার কয়েকজনের বক্তব্য ছিল কিছুটা ‘অসংলগ্ন’।
বাংলাদেশ ইত্যাদি পার্টি
দলটির সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান ইত্যাদি সাগর। দলের এমন নামকরণ বিষয়ে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি আগামীতে প্রধানমন্ত্রী হবো। এজন্য কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আমাকে প্রধানমন্ত্রী হতে দিচ্ছে না। কারণ যখনই আমি নির্বাচনে অংশ নিতে চাই তখনই আমাকে আটকে রাখা হয়। আমার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়। হামলা চালানো হয়। কেউ চায় না আমি প্রধানমন্ত্রী হই। ইত্যাদি পার্টি মানে আমি অনেকগুলো পার্টি বুঝিয়েছি। এজন্য এ নাম দিয়েছি।’
নাকফুল বাংলাদেশ
দলটির চেয়ারম্যান স্বপন রেজা জাগো নিউজকে বলেন, ‘নামটি আসলে দেওয়া হয়েছে রূপক অর্থে। বাংলাদেশে যদি মা হয়, মা তো প্রত্যেকের আছে। দেশকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করি। মায়ের নাকফুল মানে মায়ের, আবেগ, অনুভূতি, বিশ্বাস থেকে এ নাম দিয়েছি। এখন এটা নিয়ে অনেকে হাসাহাসি করছে। কিন্তু যখন আমি মিডিয়ায় আসবো, কথা বলবো তখন এই ভ্রান্তিটা দূর হবে।’
বাংলাদেশ বেকার সমাজ
বেকার সমাজের সভাপতি মো. হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ব্রিটেনে লেবার পার্টি আছে। তারা কি লেবারদের জন্য কাজ করে? নাকি জাতির জন্য কাজ করে? বেকার সমস্যা পৃথিবীতে সবচেয়ে ভয়াবহ সমস্যা। এটি নিয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। আমি ১৯৮৫ সালে এই দলটা করেছি। ১৯৮৬ সালে পার্লামেন্ট নির্বাচন করেছি ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর থেকে। ১৯৯১ সালে আমি মুন্সিগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচন করেছি।’
তিনি দাবি করেন, ‘একটা ঘরে একটা মানুষ যদি বেকার থাকে পুরো ফ্যামিলি ধ্বংস হয়ে যায়। ঘরে ঘরে বেকার রয়েছে। যদি বেকার সমস্যার সমাধান হয় তাহলে রাষ্ট্রে গণ্ডগোল, ছিনতাই কিছুই থাকবে না। মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে। এটাই তো বড় রাজনীতি। রাজনীতি মানে আজ বিএনপি, কাল আওয়ামী লীগ করলাম, পার্লামেন্টে গেলাম, নিজের আখের গোছালাম- এটা রাজনীতি নয়। আমি নিজের পরিশ্রম দিয়ে রাজনীতি করি।’
বাংলাদেশ গরিব পার্টি
দলের সভাপতি মোহাম্মদ মতিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষের একটা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চাচ্ছিলাম। এজন্য এ দলের নাম দিয়েছি। যারা নমিনেশন পায়, নির্বাচন করে তারা গরিবের কথা ভাবে না। ভারতে যেমন তৃণমূল থেকে গরিবরা রাজনীতি করে, সেরকম আমরা এখানে চালু করতে চাই। আমরা কারও সঙ্গে যুক্ত না হয়ে ৩০০ আসনে মনোনয়ন দিতে চাই যদি নিবন্ধন পাই।’
নৈতিক সমাজ
দলটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আমসাআ আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ ধরনের নাম দেওয়ার কারণ হলো রাজনীতিতে নৈতিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় তুলে ধরা। এর শিকড়ে গেলে দেখা যাবে রাজনৈতিক দলগুলোর অপসংস্কৃতি, অনৈতিকতা গেঁথে বসেছে। দলগুলোর যারাই ক্ষমতায় যাচ্ছে তারাই ক্ষমতার অপব্যবহার করে। যত রকমের অন্যায় কাজ, অপরাধ, দুর্নীতি এসব করে। পত্রিকার পাতাগুলোতে প্রতিদিন কিছু না কিছু খবর থাকে। সমাজ ও রাজনীতির মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এবং রাষ্ট্র পরিচালনায়ও নৈতিক মূল্য ছড়িয়ে দিতে এটা ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। ব্যতিক্রম রাজনীতি সৃষ্টির উদ্যোগ আমরা নিয়েছি।’
নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত দলগুলো আবেদনের সুযোগ পায়। এর মধ্যে নিষিদ্ধঘোষিত জামায়াতও অন্য নামে নিবন্ধনের আবেদন করেছে বলে জানা যায়।
তবে মুসকিল লীগ, বৈরাবরী, বাংলাদেশে বিদেশ প্রত্যাগত প্রবাসী ও নন-প্রবাসী কল্যাণ দলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, ২০১৮ সালে আবেদন করা একটি দলও নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয়নি। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায় দুটি দল। এবারও তিন-চারটি ছাড়া সবগুলো দল বাদ পড়তে পারে বলে ইসির কর্মকর্তারা জানান।
ইসির যুগ্ম সচিব আসাদুজ্জামান আরজু জাগো নিউজকে বলেন, সবশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালেও নামসর্বস্ব ৭৬ দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। সেসময় কিছু হাস্যকর নাম ছিল। কিন্তু এবার সংখ্যাটা বেশি। ওই সময় নাকফুল বাংলাদেশ, ঘুস নির্মূল পার্টিসহ অদ্ভুত নামে অনেক রাজনৈতিক দল আবেদন করেছিল।
এইচএস/এএসএ/জিকেএস